ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

উৎকট গন্ধে অসুস্থ শিক্ষার্থীরা

স্কুলের পাশে ময়লার ভাগাড়

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা

প্রকাশিত: ২১:৫৯, ১৮ মে ২০২৫

স্কুলের পাশে ময়লার ভাগাড়

.

পৌর ময়লার ভাগাড় বাস টার্মিনালের জনবহুল এলাকায় গড়ে তোলায় এলাকার পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ময়লা-আবর্জনার পঁচা গন্ধে টার্মিনালে যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষকে দমবন্ধ করে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ভাগাড়ের আশপাশের বসতিসহ বড় সমস্যায় পড়েছে পাশ্ববর্তি মহেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। ময়লার উৎকট গন্ধে শিশু শিক্ষার্থীরা মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন।  
সরেজমিনে দেখা যায়, পাবনা শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের অদূরে মহেন্দ্রপুর রেলগেট ও ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের পাশে উন্মুক্ত স্থানে ফেলা হয়েছে পৌরসভার বর্জ্য। স্কুলের পাশে উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্যরে ভাগাড় গড়ে তোলায় উৎকট গন্ধে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
মহেন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক স্কুলের ২য় তলায় তৃতীয় শ্রেণির ক্লাসরুমে রবিবার গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা এক হাতে নাক চেপে ধরেছে অন্য হাতে লিখছে। সামনের চেয়ারে বসা শিক্ষিকা ওড়নায় মুখ ঢেকে আছেন। বিদ্যালয়টির প্রায় সব কক্ষেই একই দৃশ্য। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, সাধারণ সময়ে তো বটেই রোদ ও গরমে অবস্থা আরও প্রকট হচ্ছে। শিক্ষকরা জানান, প্রায় ৩ মাস আগে বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মহাসড়ক ঘেঁষে পৌরসভা বর্জ্য ফেলার ভাগাড় বানায়। খোলা আকাশের নিচে এসব আবর্জনা ফেলায় পঁচা-দুর্গন্ধে স্কুল শিক্ষার্থীরা তখন থেকেই অসুস্থ বোধ করছে।
মহেন্দ্রপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোখলেসুর রহমান জানান, ময়লার ভাগাড় করার আগে এখানে যে স্কুল আছে তা বিবেচনা করা উচিত ছিল। হুট করে ময়লা ফেলার কারণে স্কুলের বাচ্চারা স্বাভাবিকভাবে ক্লাস করতে পারছে না। আমরা শিক্ষকরাও ঠিকভাবে ক্লাস নিতে পারছি না। শিক্ষক সালেহা পারভীন ও রাশেদুল ইসলাম জানান, ভাগাড়ের প্রচন্ড দুর্গন্ধে প্রায়ই শিক্ষার্থীরা পেটের অসুখ ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। তারা দ্রুত ময়লার ভাগাড় সরানোর দাবি করেন।
প্রতিদিন শহর থেকে টার্মিনাল পার হয়ে ১০টি বাস শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারি ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাতায়াতকালে ময়লার এ অসহনীয় গন্ধ সহ্য করতে হচ্ছে। মহেন্দ্রপুরের বাসিন্দা শরিফ ও মেহেদী হাসান জানান, ময়লার ভাগাড়ের পাশ দিয়ে তাদের বসতবাড়ি হওয়ায় বাড়িঘরে থাকা যাচ্ছে না। মশা মাছির অত্যাচারেও টিকা দায় বলে তারা অভিযোগ করেন। আশপাশের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ময়লার ভাগাড়ে যেদিন শূকর ছেড়ে দেওয়া হয় তখন দুর্গন্ধ এমনই বাড়ে যে বাড়ি ঘরে থাকা যায় না। ময়লার দুর্গন্ধে এখন তারা স্বাভাবিকভাবে খাওয়া-দাওয়াও করতে পারছেন না।
মহেন্দ্রপুর শাহিন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারী শাহিন আলম জানান, গন্ধে তার কারখানায় শ্রমিকরা কাজে আসতে চায় না। পৌরসভায় অভিযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে পাবনা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী ওবায়েদ-উল হক জানান, বর্জ্য ফেলার মূল স্টেশন ফকিরপুরের দুই তৃতীয়াংশ জায়াগায় প্রকল্পের কাজ চলছে যা দ্রুতই শেষ হবে। তাই বাধ্য হয়ে মহেন্দ্রপুরে বর্জ্য ফেলতে হচ্ছে। তবে দুর্গন্ধ কমাতে আমরা নিয়মিত ব্লিচিং দিচ্ছি, সড়কের দিকে টিন দিয়ে আটকে দিয়েছি। এ ছাড়া আপাতত আমাদের বিকল্প নেই বলেও তিনি দাবি করেন।

প্যানেল

×