ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

আমসহ কৃষিপণ্য সংরক্ষণে আশা দেখাচ্ছে ‘স্মার্ট ড্রায়ার’

নাসির হায়দার,উপজেলা প্রতিনিধি, সাপাহার (নওগাঁ)

প্রকাশিত: ১১:৪২, ১১ মে ২০২৫

আমসহ কৃষিপণ্য সংরক্ষণে আশা দেখাচ্ছে ‘স্মার্ট ড্রায়ার’

সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সীমাবদ্ধতার কারণে নষ্ট হয়ে যায় বিভিন্ন ফলমূল, শাকসবজিসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য। এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন কৃষক। তবে কম খরচে বিভিন্ন ফল, শাকসবজি, ভেষজ উদ্ভিদ শুকিয়ে সংরক্ষণের মাধ্যমে খাদ্যপণ্যের অপচয় ঠেকাতে আবিষ্কার হওয়া স্মার্ট ড্রায়ার কৃষকদের মনে আশা জুগিয়েছে। আর এটি তৈরি করে নওগাঁর কৃষিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন আলোচিত কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা (৪২)।

সরেজমিনে দেখা যায়, নওগাঁর সাপাহার উপজেলার অনতিদূরে গোডাউনপাড়ায় সোহেল রানার 'বরেন্দ্র অ্যাগ্রো পার্ক' নামের মিশ্র ফলবাগানের মাঝে ছোট একটি ঘর। তার চারপাশের দেয়াল ও ছাদে সাদা রঙের ফাইবার গ্লাস ব্যবহার করা। ঘরের ভেতরে রয়েছে সারি-সারি তাক। মেঝেতে শুকানো হচ্ছে বরই, টমেটো, কলা, অর্জুন গাছের ছাল, নিমপাতা, পেয়ারাপাতা, কলার খোসা ও আদা। 

অনলাইনে প্যাকেটজাত ১০০ গ্রাম কলা, শজনেপাতা, অর্জুন, পেয়ারাপাতা, অ্যালোভেরার পাউডার ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। এক কেজি শুকনো বরইয়ের দাম ১ হাজার টাকা। কাঁচা অবস্থায় ভেষজ উদ্ভিদ ও বরই বিক্রি করে যে লাভ হয় তার তুলনায় প্রক্রিয়াজাত করা পাউডার বিক্রি করে তিন-চার গুণ বেশি লাভ। আমের ক্ষেত্রেও একই রকম সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।

জানা যায়, কাঁচা ও পাকা আম শুকিয়ে সংরক্ষণই সোহেল রানাকে স্মার্ট ড্রয়ার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে। ধীরে ধীরে এই কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি টমেটো, ফুলকপি, মরিচ, বিটরুট, পরিপক্ব কলা, বরইসহ বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ শুকিয়ে সংরক্ষণ করছেন। এমনকি কলার খোসা পর্যন্ত শুকিয়ে গুঁড়া করে সার হিসেবে বিক্রি করে প্রমাণ করেছেন কোন কিছুই আসলে ফেলনা নয়।

শিক্ষকতা ছেড়ে কৃষি উদ্যোক্তার চ্যালেন্জিং পেশা গ্রহণ করা সোহেল রানার বাড়ি সাপাহার উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা সোহেল রানা কৃষিতে বিশেষ অবদান রাখায় ২০২৩ সালে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন । 

সোহেল রানার স্মার্ট ড্রায়ারের কার্যকারিতায় বেশ মুগ্ধ উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মো: মনিরুজ্জামান টকি। তিনি দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, "কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার স্মার্ট ড্রয়ার বিভিন্ন শাকসবজি ও ফলমূল বিশেষ করে এই এলাকার আম সংরক্ষণে এক যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।"

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত আমের প্রায় ৩০ শতাংশ গাছ থেকে সংগ্রহ করার আগে ও পরে নষ্ট হয়ে যায়। এই ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার উপরে। সংরক্ষণ সীমাবদ্ধতার কারণে এই বিপুল পরিমান অর্থ অপচয় হয়। স্মার্ট ড্রায়ার ব্যবহার করে এই অপচয় অনেকটাই রোধ করা সম্ভব।'

স্মার্ট ড্রায়ার সম্পর্কে জানতে চাইলে সোহেল রানা বলেন,' স্মার্ট ড্রয়ার হলো কৃষিপণ্য শুকানোর কাজে ব্যবহৃত এক ধরনের বিশেষ  বদ্ধ ঘর। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এটি নিজ থেকেই খাদ্যপণ্য শুকানোর কাজ করতে পারে। সৌরবিদ্যুৎ কাজে লাগিয়ে কাজ করায় তা আরও বেশি  পরিবেশ বান্ধব হয়েছে। 

‘মোবাইল ফোনে বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এখানে একসঙ্গে প্রায় ৫০০ কেজি খাদ্যপণ্য শুকানো যায়। অনলাইনে একটি লেখা পড়ে এই প্রযুক্তি সম্পর্কে তিনি জানতে পারি ।পরে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশিং অ্যান্ড পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রানার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁর কাছে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি সহায়তা করেন, জানান সোহেল রানা।

মুমু

×