
টি শার্ট পরিহিত নিহত নাজমুল হক, শার্ট পরিহিত প্রধান আসামি আল আমিন।
গাজীপুরের শ্রীপুরে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত নাজমুল হক (৩৫) আটদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে নিহতের লাশ সন্ধ্যায় বাড়ীতে নিয়ে আসার কথা রয়েছে। শনিবার (১০ মে) দুপুরে নিহতের চাচা হারিছ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার (৯ মে) রাত ৯টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আটদিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হামলার ঘটনার পরদিন শুক্রবার (২ মে) দুপুরে নিহতের চাচা হারিছ উদ্দিন বাদী হয়ে চার জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।
নাজমুল হক উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের যোগীরসিট গ্রামের কৃষক মোছলেম উদ্দিনের ছেলে। ধান ক্ষেতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি ছাড়াকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ একই গ্রামের স্বপন মিয়ার ছেলে আল আমিন (১৯) ধারালো ছুরি দিয়ে নাজমুল হকের পেটে আঘাত করে ভুরি বের করে ফেলে। এসময় কৃষক মোছলেম উদ্দিন (৫৫) এবং তার স্ত্রী ফেরদৌসি খাতুনকেও (৫২) পিটিয়ে আহত করে।
আসামীরা হলেন উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের যোগীরসিট গ্রামের স্বপন মিয়ার ছেলে আল আমিন (১৯), বাবুল মিয়ার ছেলে রাকিব (২৫) এবং ফেরদৌস মিয়া (১৮), মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে ফারুক মিয়া (৪০)। ঘটনার পর থেকে আসামীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কৃষক মোসলেম উদ্দিনের সাথে ফারুক মিয়ার দীর্ঘদিন যাবত জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। বৃহস্পতিবার (১ মে) সকাল সাড়ে ১০ টায় মোসলেম উদ্দিন আসামীদের বাড়ীর পাশে তার ধানের জমিতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি ছাড়তে যায়। এসময় ফারুক মিয়া তাকে জমির পানি ছাড়তে বাধা দিলে উভয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়ে। পরে কৃষক মোসলেম পানি না ছেড়ে বাড়ীতে চলে আসে। এদিন রাত ৯ টায় আসামীরা কৃষকের ছেলে নাজমুল হককে বাড়ীর দক্ষিন পাশে ডেকে নেয়। কিছু বুঝে উঠার আগেই আসামীরা তাদেরকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে আসামী আল আমিনের হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে নাজমুল হকের পেটে আঘাত করে ভুরি বের করে ফেলে। তার চিৎকারে বাবা কৃষক মোসলেম উদ্দিন ও মা ফেরদৌসি খাতুন বাড়ীর বাহিরে বের হলে অপর আসামী ফেরদৌস মিয়া তার হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে মোসলেম উদ্দিনের পেটের ডান পাশে আঘাত করে গুরুত্বর জখম করে। ফেরদৌসি খাতুনকে আঘাত করার সময় ফেরাতে গিয়ে তার দুই হাত কেটে যায়। তাদের চিৎকারে আশপাশের বাড়ীর লোকজন এগিয়ে আসলে আসামীরা প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। স্বজনেরা নাজমুল হককে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং তার বাবা ও মাকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রাখে।
কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোমেনুল কাদের জানান, মোসলেম উদ্দিনের জমি উঁচু হওয়ায় তার জমির পানি পাশের জমিতে গিয়ে পড়ে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে তর্কবিতর্ক হলে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। এদিন বৃহস্পতিবার (১ মে) রাত ৯টার দিকে আসামীরা মোসলেম উদ্দিনের ছেলে নাজমুল হককে বাড়ি থেকে ডেকে বের করে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। একপর্যায়ে আল আমিন ধারালো ছুরি দিয়ে নাজমুলের পেটে আঘাত করলে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল লতিফ বলেন, আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, ছুরিকাঘাতে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় দায়ের করা মামলা হত্যা মামলা হিসেবে রুজু হবে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১ মে) রাত ৯টায় শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের যোগীরসিট গ্রামের গুজারমোড়ে হামলার ঘটনা ঘটে।
রাজু