
ছবি : জনকণ্ঠ
শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের ডান তীর রক্ষা বাঁধের দুই কিলোমিটার অংশের কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ডান তীর রক্ষা বাঁধের অনতিদূরে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি ও নদীভাঙন দেখা দেওয়ায় পুরো দুই কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
নিম্নমানের কাজ হওয়ায় এমন ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
নদী ভেঙে বাঁধের কাছাকাছি চলে আসায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে পদ্মা সেতুর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার এবং আশপাশের চারটি গ্রামের সহস্রাধিক বসতবাড়ি।
স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল আহম্মেদ, স্বপন মাঝি ও পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনের থেকে জানা যায়, বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। বাঁধটির পাশে মহর আলী মাদবরকান্দি, আলম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি ও কালাই মোড়লকান্দি গ্রাম অবস্থিত। এ ছাড়া রয়েছে মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর বাজার। বাঁধের পাশ দিয়ে চলে গেছে নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, যেটি দিয়ে নাওডোবা, পালেরচর, বড়কান্দি, জাজিরা ও বিলাশপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে । দ্রুত বাঁধটি সংস্কার না করা হলে শুধু এসব এলাকা নয়, পদ্মা সেতুর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়বে। নদীতে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণেই এই ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
এদিকে পদ্মার মাঝের চর পাইনপাড়া আহম্মদ মাঝিকান্দি এলাকায়ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা রহিম উদ্দিন মৃধা ও আতাহার মৃধা বলেন, পদ্মা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের কারণে আমাদের এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে ঘরবাড়ি, মসজিদ, স্কুল, মাদরাসা, গাছপালা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে।
তারা ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আশঙ্কা করছে, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আগামী বর্ষা মৌসুমে বাঁধের বিভিন্ন স্থানে আরও ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিতে পারে।
জেলা পাউবো সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে ওই বাঁধের জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় প্রায় ১০০ মিটার অংশ নদীতে ভেঙে পড়ে। এরপর পাউবো ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ মিলে বাঁধে সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষায় দেখা যায়, এক কিলোমিটার অংশে নদীর গভীরতা অনেক বেশি এবং তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। বাকি এক কিলোমিটার অংশেও নদী বাঁধের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে এবং সেখানেও মাটি ভেঙে নদীতে পড়ছে।
পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদী থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া-২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। এসব অবকাঠামোর জন্য ২০১২ সালে জমি অধিগ্রহণের সময় থেকেই নাওডোবা এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। তখন ভাটির দিকে দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার বণিক বলেন, গত বছর যে ১০০ মিটার বাঁধ নদীতে বিলীন হয়েছিল, সেটি সংস্কারের কাজ চলছে। ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। তবে এর বাইরেও বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকি রয়েছে।
শরীয়তপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার রক্ষা বাঁধটি সেতু বিভাগ ১২–১৩ বছর আগে নির্মাণ করেছিল। সেই বাঁধে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, এটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। মজবুতকরণের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
দ্রুত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে বড় ধরনের ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে।
সা/ই