ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

পাহাড়ে অপহরণ আতংক!

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ১০ মে ২০২৫; আপডেট: ১২:০২, ১০ মে ২০২৫

পাহাড়ে অপহরণ আতংক!

ছবি: জনকণ্ঠ

চট্টগ্রামের পটিয়ায় ভয়ংকর হয়ে উঠছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। এখানে অপহরণকারীদের নিরাপদ ঘাঁটি এখন পাহাড়। প্রায় প্রতিদিন কেউ না কেউ অপহরণ হচ্ছে। অপহৃতদের গহীন জঙ্গলে নিয়ে আটকে রেখে মারধর ও আদায় করা হচ্ছে মোটা অংকের মুক্তিপণ। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও নাজুক পরিস্থিতিতে একের পর এক অপহরণের ঘটনা ঘটে চলেছে। গত এক মাসের ব্যবধানে একাধিক ঘটনায় উপজেলার কেলিশহর, হাইদগাঁও, খরনা, কচুয়াই ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকার লোকজন যেন ভয়ে কাঁপছে। ইতোমধ্যে মুক্তিপণ দিয়ে মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে এসেছে কৃষক, শিক্ষার্থীসহ অনেকে। অপহরণের ভয়ে লোকজন পাহাড়ের ক্ষেতখামারে যাওয়া-আসা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। লোকজন নিরুপায় হয়ে শুক্রবার বিকেলে পটিয়া থানার প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে মতবিনিময় করেন। এতে অভিযোগ ওঠেছে, পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় অনেক অপরাধী। তারা পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সোর্স হিসেবে কাজ করছে। এদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার সম্ভব হলে অপহরণ বাণিজ্য বন্ধ করা যাবে।

জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর সন্ত্রাসীরা যেন পটিয়ায় নিরাপদ ঘাঁটি করেছে পাহাড়ে। বর্তমানে একাধিক অস্ত্রধারী গ্রুপ পাহাড়ে দাপটের সঙ্গে অপহরণ বাণিজ্যে জড়িত। এ কারণে পাহাড়ি জনপদে সাধারণ মানুষের জীবন এখন অনিশ্চিয়তার মুখোমুখি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার উপজেলার খরনা ইউনিয়নের লালারখীল এলাকায় স্ক্যাভেটর দিয়ে মাটি কাটার সময় দুই শ্রমিককে অপহরণ করে গহীন পাহাড়ে নিয়ে যায়। পরে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এর আগে গত ৫ মে (সোমবার) উপজেলার উত্তর হাইদগাঁও গ্রামের কৃষক আবু জাফর অপহরণের শিকার হয়। নিজের বাগান তদারকি করতে গিয়ে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে বন্দি হন তিনি। মুক্তিপণের টাকা দরকষাকষির মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সন্ধ্যায় ছাড়া পান। গত ৩০ এপ্রিল পটিয়ার শিক্ষার্থী তৌহিদ উল ইসলাম, ছাহিল, মীর সামিদ, আশরাফুর জামান, ফয়সাল আহমদ, শাহেদ মিয়া পাহাড়ের বুদবুদি ছড়া দেখার জন্য যান। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা তাদের
অপহরণ করে গহীন পাহাড়ে আটকে রেখে মারধর করে। পরবর্তীতে মোবাইলের বিকাশের মাধ্যমে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিলে সন্ধ্যায় তাদেরকে ছেড়ে দেন। গত ১৩ জানুয়ারি উপজেলার হাইদগাঁও পাহাড়ের পূর্ব পাশে শষা ক্ষেতে কাজ করার সময় সন্ত্রাসীরা মো. হামিদকে ধরে নিয়ে যায়। পরে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে হামিদ মুক্তি পায়। উপজেলার খিল্লপাড়া-দারোগাহাট এলাকার মনছুর আলম ও মো. নাছেরকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে তাদের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। মনছুরের ভাই চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনরেঞ্জের একজন কর্মচারী হয়েও মামলা পর্যন্ত করতে পারেনি। এভাবে সায়ের আহমদ, মো. ইসমাইল, তুফান, জুয়েলকে অপহরণ করে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে।

২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা পটিয়ার খরনা ইউনিয়নের লালারখীল এলাকা থেকে মুন্সি মিয়া, আবদুল আলিম, মো. কাসেম, আবুল হোসেন, মোহাম্মদ নাসু, মোহাম্মদ সৈয়দ অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেন। এর মধ্যে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ছিল ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। চন্দনাইশ উপজেলার মিনি ট্রাক চালক মোসলেম উদ্দিনকে পূর্ব হাইদগাঁও আলম মাস্টারের প্রজেক্ট এলাকা থেকে অপহরণ করে। যার সন্ধান আজও মেলেনি।

সম্প্রতি মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়া হাইদগাঁও গ্রামের কৃষক আবু জাফর জানিয়েছেন, তিনি কৃষি কাজ করতে পাহাড়ে যান। এর মধ্যে অপহরণকারী তাকে অপহরণ করে গহীণ জঙ্গলে নিয়ে মারধর করে। পরে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি।

মুক্তিপনের ৫০ হাজার টাকা দেওয়ায় তাকে ছেড়ে দেন। এভাবে প্রায় প্রতিদিন অপহরণ করা হচ্ছে। যার কারণে এলাকার লোকজন ভয়ে পাহাড়ে যাওয়া-আসা বন্ধ করে দিয়েছে। বিশেষ করে উপজেলার কেলিশহর, হাইদগাঁও, কচুয়াই ও খরনা ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় এ অপহরণ হচ্ছে।

পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা ও যুবদল নেতা এম, মাইমুনুল ইসলাম জানান, পাহাড়ি সন্ত্রাসী কর্তৃক হাইদগাঁও, কেলিশহর, আহলা- করলডেঙ্গাসহ পাহাড়ি এলাকায় গুম, হত্যা, মুক্তিপণ দাবির কারণে এলাকার
লোকজন ভয়ভীতির মধ্যে দিনযাপন করছেন। পটিয়া থানা প্রশাসনের সঙ্গে ইতোমধ্যে মতবিনিময় করেছেন। প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে শীঘ্রই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এএইচএ

×