ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

উদ্যোগ নেওয়ার এক যুগ পরও কিছুই করা হয়নি

২০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য রাখাইন বৌদ্ধ মঠসহ মন্দির বিধ্বস্তের শঙ্কা, এখনো পর্যটকরা ঘুরে দেখেন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০৫:৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

২০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য রাখাইন বৌদ্ধ মঠসহ মন্দির বিধ্বস্তের শঙ্কা, এখনো পর্যটকরা ঘুরে দেখেন

ছবিঃ সংগৃহীত

দেশের মধ্য উপকূলে সাগরপারের জনপদ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় খাপড়াভাঙ্গা গ্রামে প্রায় দুইশ’ বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরটি মঠসহ সংরক্ষণের প্রাথমিক উদ্যোগ নেয়ার এক যুগ পার হয়ে গেছে আগেই। এখনো কিছুই করা হয়নি। উল্টো ২০১২ সালে দেয়া সাইনবোর্ডটিও উধাও হয়ে গেছে।

জীর্ণদশার এই রাখাইন মন্দিরসহ মঠটির এখন চরম বেহালদশা। মঠের উপরের অংশ অনেকটা ভেঙে গেছে। মন্দিরটির স্থাপনাশৈলীতে রয়েছে প্রাচীন আদল। রাখাইনরা এই বৌদ্ধ মঠসহ মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণে সরকারের প্রতি দাবি করে আসছেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের খুলনা বিভাগীয় অফিসের একটি টিম ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সংক্রান্ত একটি চুড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তাবনা আকারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছেন বলে তখন জানিয়েছিলেন। ওই টিমের প্রধান খুলনা অফিসের তৎকালীন সহকারী গবেষক গোলাম ফেরদৌস তখন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাগরপারের এই জনপদের রাখাইন জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সামাজিক ঐতিহ্য ধরে রাখার লক্ষ্যেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আর বৌদ্ধ মন্দিরটির স্বকীয়তা বজায় রেখে সংস্কার করলে এখানে দেশি-বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটবে। গৌতম বুদ্ধের দেহধাতু যেমন, চুল ও নখের উপাদানের উপরে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে বলে তিনি প্রবীণ রাখাইনদের কাছ থেকে জেনে নিশ্চিত হয়েছেন। তিনি আরও বলেছিলেন, বাংলাদেশে এই আদলের আরেকটি মন্দির রয়েছে রামুতে। রাখাইন জমিদার ম্রাথা চৌধুরী ইংরেজদের কাছ থেকে জমি পত্তন নিয়ে খাপড়াভাঙ্গায় বৌদ্ধ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছেন বলেও জানান গোলাম ফেরদৌস।

পক্ষিয়াপাড়ার বাসিন্দা রাখাইন প্রয়াত প্রকৌশলী ট্যানথান জানিয়েছিলেন, এই বৌদ্ধ মান্দরটি বৌদ্ধদের আদী থেরোবাদ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য বহন করে আসছে। ভিন্নতর কিছু বৈশিষ্ট্যও রয়েছে মন্দিরটিতে। যা ভারতের বিহারের বৈদ্যগয়ার সম্রাট অশোকের আমলে প্রতিষ্ঠিত কিছু মন্দিরের সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে বলে এ প্রকৌশলী বলেছিলেন। কলাপাড়া উপজেলার পর্যটন পল্লী গঙ্গামতি যাওয়ার পথে চরচাপলী বাজারের ঠিক উল্টোদিকে খাপড়াভাঙ্গা (শিববাড়িয়া) নদীর উত্তর পাড়ে বৌদ্ধ মন্দিরটির অবস্থান। অবস্থান খাপড়াভাঙ্গা গ্রামে। চাপলি বাজারের গার্ডার ব্রিজ পার হয়ে পর্যটকরা বৌদ্ধ মন্দিরসহ মঠটি দেখতে যান।

রাখাইনদের ভাষ্যমতে, এই জনপদের বনজঙ্গল সাফ করে বসতি গড়ে তোলার পরে বিহারসহ মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়। ছিল আশপাশে রাখাইনদের বাড়িঘর, পাড়া। এমনকি মন্দিরের ২০-২৫ হাত দূরে রাখাইন জমিদার মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাতা ম্রাথা চৌধুরীকে এখানে সৎকার করা হয়। সেই শ্মশানটিও বেদখল হয়ে গেছে। কালের বিবর্তনে রাখাইনদের ওই স্পটে কোন বাড়িঘর এখন নেই। রয়ে গেছে বৌদ্ধ মঠসহ মন্দিরটি। বর্তমানে এই বৌদ্ধ মন্দিরটির অবস্থান ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নে। এখনও প্রায় ৬০ ফুট উচ্চতা রয়েছে মঠটির।

জীর্ণদশার মন্দিরটিতে ছিল গৌতমবুদ্ধের ধ্যানমগ্ন মুর্তি। ভেতরে কাঠের ও পাথরের অসংখ্য মুর্তি ছিল। এসবের একটিও নেই। নেই কোন দরজা। মন্দিরটি ইটগুলো জীর্ণদশার শেষ পর্যায়ে পৌছেছে। খুলে খুলে পড়ে যাচ্ছে। পলেস্তরাসহ ইটের গাঁথুনি খসে পড়ছে। চারদিকে পুরনো ইট-সুরকি ধুলির মতো উড়ে যাচ্ছে। ভেঙ্গে বেরিয়ে গেছে লাল ইটের গাঁথুনি। কোন প্রাণীর কঙ্কালের মতো দেখায়। এখন ধসে পড়া সময়ের ব্যাপার। মঠের চারদিকে মাস্তুল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছে সয়লাব হয়ে ঢেকে গেছে। কাছাকাছি গেলে গা ছমছম করে। এক ধরনের ভৌতিক অবস্থার শিহরণ জাগায় মনে। মঠের উপরে সাপের বসবাস দেখতে পায় বলে স্থানীয়রা জানান। কয়েক বছর আগে লোকজন ধাওয়া করে একটি সাপ মেরে ফেলেছেন বলে জানান কেউ কেউ। আশপাশের জায়গা সব দখল হয়ে গেলেও মন্দিরটি সাপের বসবাসের কারণে ভয়ে কেউ ভাঙ্গেনি বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

প্রাচীন এই মঠসহ মন্দিরটি দেখতে এখনও কিছু পর্যটক আসেন এখানে। ২০১২ সালে বাঁশের কয়েকটি চেরা চারদিকে দেয়া ছিল। একটি সাইনবোর্ড লটকানো ছিল। যেখানে লেখা ছিল খাপড়াভাঙ্গায় অবস্থিত মন্দিরটি সংস্কার ও দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন বজন্ত প্রজ্ঞাবংশ মহাথেরো। তিনি চট্টগ্রাম জেলার ডাবলমুড়িং উপজেলার মোগলতুলি গ্রামের শাখ্যমান বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োজিত রয়েছেন। এখন বাঁশের বেড়া কিংবা ওই সাইনবোর্ডটি নেই। আর মন্দিরটি মঠসহ যে কোন সময় বিধ্বস্তের শঙ্কা করছেন রাখাইন জনগোষ্ঠী। প্রাচীন এই পুরাকীর্তি রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করছেন সচেতন মানুষ।

পটুয়াখালী রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সভাপতি এমং তালুকদার জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে এসব প্রাচীন ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে না। তিনি বৌদ্ধবিহার এলাকার জমিসহ বৌদ্ধমঠ সংরক্ষণের জন্য পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ইমরান

×

শীর্ষ সংবাদ:

যেই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে: আমীর খসরু
জামায়াত নেতারা রাজাকার হলে পাকিস্তানে গাড়ি বাড়ি থাকতো : শামীম সাঈদী
এনসিপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই- উমামা ফাতেমা
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান
ইয়েমেনে হামলা চালিয়েই সাগরে ডুবে গেল মার্কিন সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান
জামিন পেলেননা তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিন
লন্ডনে আজ আর্সেনাল পিএসজি মহারণ
১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে মামলা, তালিকায় আছেন নুসরাত ফারিয়া-অপু বিশ্বাস-ভাবনাসহ অনেকেই
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৯তম ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল
স্বর্ণের দাম, রেকর্ড উচ্চতা থেকে পতনের পথে
কুমিল্লায় পুলিশ-সেনাবাহিনীর চাকরির নামে প্রতারণা: দালালসহ ১৩ জন গ্রেফতার
১২ বছর বয়সী ছেলে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার