
কবীর আহমেদ ভূঁইয়া, ছবি: জনকণ্ঠ
যুবসমাজকে দক্ষ, কর্মক্ষম ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শুধু একটি জেলা নয়, পুরো দেশের অর্থনীতিতে রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এমনটাই মনে করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী কবীর আহমেদ ভূঁইয়া।
তার ভাষায়, “ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় ৪০ লাখ মানুষের সম্ভাবনার মূলভিত্তি এখানকার কর্মক্ষম যুবসমাজ। সঠিক পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা দেওয়া গেলে তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে।”
সমন্বিত যুব উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রধান স্তম্ভসমূহ:
১. ডিজিটাল স্কিল ট্রেনিং সেন্টার: ফ্রিল্যান্সিং, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ কেন্দ্রগুলো বাস্তবায়নে সরকার-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP) মডেল অনুসরণ করা হবে।
২. কো-ওয়ার্কিং স্পেস ও আইটি হাব: পুরনো সরকারি ভবন সংস্কার করে তৈরি হবে আধুনিক কর্মপরিবেশ, যেখানে ফ্রিল্যান্সার ও স্টার্টআপ উদ্যোক্তারা কাজ করতে পারবেন।
৩. ডিজিটাল পর্যটন বিপণন: দর্শনীয় স্থান ঘিরে ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ, ভিডিও কনটেন্ট ও VR ট্যুর তৈরি হবে, যার ফলে স্থানীয় গাইড ও কনটেন্ট নির্মাতাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
৪. স্থানীয় পণ্যের ই-কমার্স সম্প্রসারণ: জেলার মিষ্টি, হস্তশিল্প, পোশাকসহ ঐতিহ্যবাহী পণ্যসমূহকে দেশি-বিদেশি বাজারে পৌঁছে দিতে প্রশিক্ষণ ও প্ল্যাটফর্ম-সহায়তা দেওয়া হবে।
৫. ই-লার্নিং ও অনলাইন শিক্ষা: অনলাইন ক্লাস, কোর্স ও ওয়েবিনারের মাধ্যমে শিক্ষিত যুবকদের শিক্ষায় সংযুক্ত করে সার্বিক মানোন্নয়ন ঘটানো হবে।
৬. উদ্যোক্তা উন্নয়ন: ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রশিক্ষণ, মাইক্রো ঋণ সুবিধা ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেওয়া হবে।
৭. শিল্পায়ন ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান: টেক্সটাইল, ফুড প্রসেসিং ও হস্তশিল্প শিল্প গড়ে তোলার পাশাপাশি ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিদেশে কর্মসংস্থানের পথ সুগম করা হবে।
৮. কৃষি ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন: উচ্চমূল্যের মাছ, ফল, গবাদিপশু ও বিশেষ কৃষিপণ্যের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করা হবে।
কৃষিভিত্তিক নতুন সম্ভাবনা ও গাছ রপ্তানি:
পরিবেশ সংরক্ষণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ ও নার্সারি প্রকল্পে যুবকদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কবীর আহমেদ ভূঁইয়া। তার মতে, “গাছ রপ্তানি একটি সম্ভাবনাময় খাত, যেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণরা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।”
চেরি টমেটো, ব্রকলি, ইউরোপিয়ান বিভিন্ন রঙের ফুলকপি, মাশরুম, মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, চায়ের কাপ, দইয়ের কাপ, ঢাকনা, প্লেট ও নানা রকম পাত্রসহ ব্যতিক্রমী কৃষিপণ্য উৎপাদনে রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। বিজয়নগরের লিচুকে পুরো জেলায় চাষে উৎসাহ দিতে হবে। আজমপুরের কাঁঠাল ও পেয়ারা, উন্নত জাতের বড়ই ও মাল্টা চাষেও আগ্রহী হয়ে উঠেছে যুবকরা—যাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে।
রপ্তানি ও পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়ন:
আশুগঞ্জে আধুনিক চাল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপন করে রপ্তানিযোগ্য চাল উৎপাদনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা যাবে। একইসঙ্গে আখাউড়া স্থলবন্দর ও আশুগঞ্জ নদীবন্দর উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়বে।
পর্যটন খাতের বিকাশ:
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও স্মার্ট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে এই খাতে কর্মসংস্থানের বড় সুযোগ তৈরি হবে।
লক্ষ্য ও প্রত্যাশা:
এই সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে—
-
কর্মসংস্থান উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
-
নতুন উদ্যোক্তার উত্থান ঘটবে।
-
শিক্ষার মান ও জীবনমান উন্নত হবে।
-
শিল্প ও রপ্তানি খাত বিকশিত হবে।
-
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুবকরা স্বাবলম্বী হয়ে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
মনোযোগ দিন যুব সমাজে, গড়ুন উন্নত ব্রাহ্মণবাড়িয়া। “এসো, সবাই মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে স্মার্ট, শিক্ষিত, আত্মনির্ভর ও সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে গড়ে তুলি। ৪০ লাখ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন অবশ্যই সম্ভব।”
শহীদ