ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

বৃহত্তর চলনবিল

বিনা চাষে রসুন

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাটমোহর, পাবনা

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

বিনা চাষে রসুন

চাটমোহর, পাবনা : বিলজুড়ে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক বিভিন্ন ফসলের সঙ্গে রোপণ করছেন রসুন

শস্য ভাণ্ডারখ্যাত দেশের বৃহত্তর বিল চলনবিলাঞ্চল। আর এ বিলজুড়ে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বিভিন্ন ফসল চাষ। এখন বিলে শুরু হয়েছে বিনাচাষে রসুনের আবাদ। রসুন বীজ রোপণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে চলনবিলাঞ্চলের নারী-পুরুষ। এখন কৃষক হালচাষ ছাড়াই রসুন রোপণ করছেন। 
সরেজমিন দেখা যায়, বিলে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গথে ফাঁকা জমিতে নরম কাদামাটিতে বিনা চাষে রসুন রোপণের ধুম পড়েছে। চলনবিলাঞ্চলে সর্বোচ্চ অর্থকরী ফসলের মধ্যে বিনা চাষে রসুন অন্যতম। বিনা চাষে রসুনের বাম্পার ফলনের কারণে প্রতি মৌসুমে এলাকার কৃষকরা রসুন চাষে ঝুঁকছেন। 
চলনবিলাঞ্চের চাটমোহর উপজেলার চিনাভাতকুর, চরনবীন, ছাইকোলা, লাঙ্গলমোড়া, বরদানগর, বিন্নাবাড়ী, ধানকুনিয়া ও হরিপুর এলাকায় দেখা যায়, নারী-পুরুষ মিলে জমিতে লাইন ধরে বসে নরম মাটিতে রসুনের কোয়া রোপণ করছেন। চলনবিলে এখন চলছে রসুন রোপণের ভরা মৌসুম। ধুম পড়েছে এ চাষে। চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়ার চিনাভাতকুর গ্রামের কৃষক হাছেন আলী বলেন, জমিতে বিনা হালে দেড় বিঘা জমিতে রসুন লাগিয়েছেন। রসুনের বেছন, সার, কীটনাশক, কামলা খরচা ও পানি সেচ সব মিলে অন্য বছরের তুলনায় এবার ব্যয় বেশি হচ্ছে।

এক বিঘা জমিত চাষ করে ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে কৃষক জানান। তিনি আশা করছেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৩০-৩৫ মন রসুন পাবেন। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা। বরদানগর গ্রামের আতিকুল ইসলাম বিনা চাষে প্রায় ৩ বিঘা জমিতে রসুন রোপন করছেন। সেও আশা করছেন ভালো ফলন ও বেশি দাম পাবেন। 
বিনা চাষে উৎপাদন পদ্ধতি : বিল থেকে পানি নেমে গেলে পলি জমা কাদা মাটিতে বিনা হালে সারিবদ্ধভাবে রসুনের কোয়া রোপণ করা হয়। রোপন শেষে ধানের নাড়া (খড়) বিছিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এর আগে প্রতি বিঘা জমিতে ৩০ কেজি টিএসপি, ২৫ কেজি পটাশ, ২০ কেজি জিপশাম ও ২ কেজি বোরন সার প্রয়োগ করা হয়। রোপনের ২৫-৩০ দিন পর বিঘা প্রতি ১৫-২০ কেজি ইউরিয়া সার দিয়ে পানি সেচ দেওয়া হয়। ৫০ দিন পর আবার দ্বিতীয় দফা ১০-১৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। রোপনের ১২০/১৩০ দিন পর রসুন উত্তোলনের করা যায়। 
চলনবিলাঞ্চের চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও তাড়াশ উপজেলার কৃষি অফিসের তথ্যমতে এ মৌসুমে বিনাচাষে ও চাষের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে রসুন চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এ চাষে প্রায় ২০ লক্ষ মণ রসুন উৎপাদন হবে। 
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এ এ মাসুমবিল্লাহ জানান, চাটমোহর এলাকায় বর্ষার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে কাদা মাটিতে কৃষক বিনা চাষে রসুন আবাদ করেন। রসুন চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর এ আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। 
এ বছর পাবনার চাটমোহর উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হওয়ার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্য বিনা চাষে ২ হাজার ৭০০ হেক্টর ও চাষের মাধ্যমে বীজ রোপণ ৭৫০ হেক্টর লাগানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই এ উপজেলায় প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে বীজ রোপন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ বছর লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশি রসুন রোপণ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

×