ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

​​​​​​​দ্রুত সংস্কার করে অক্টোবরেই চালু ॥ রেল কর্তৃপক্ষ

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের ক্ষতি ৫শ’ মিটার

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২২:১১, ১৮ আগস্ট ২০২৩

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের ক্ষতি ৫শ’ মিটার

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন রেল সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির

আগস্টের শুরুর দিকে টানা ভারি বর্ষণ বান্দরবান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নির্মাণাধীন দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ৫০০ মিটার পথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাতকানিয়া এলাকায় রেললাইনের নিচ থেকে মাটি পাথর সরে গিয়ে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দ্রুত সংস্কার করে অক্টোবরের মধ্যেই চালু হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ। শুক্রবার সকালে প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে কথা বলেন রেল সচিব হুমায়ুন কবীর।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব . মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, মূল লাইনের যে স্ট্রেংথ যেটাকে আমরা এমব্যাংকমেন্ট বলি, সেটার কোনো কিছু হয়নি।  এজন্য আমি সরেজমিন দেখতে এসেছি। পত্রিকার রিপোর্ট পড়ে মনে হচ্ছিল, এমব্যাংকমেন্ট ভেসে চলে গেছে ভেঙে। রকম কিন্তু না। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা তো এখানে স্থানীয়Ñআপনারা জানেন, রেললাইনের নিচে পানি ঘুরপাক খেয়ে এটা হয়েছে। আমাদের টেকনিক্যাল টিম কাজ করছে। তাদের সঙ্গে বসব। কারিগরি দিক দিয়ে সমাধান কী মুহূর্তে বলতে পারব না। যেহেতু আমি তাদের সঙ্গে এর পরই বসব। তারাই জানাবেন এর কারণ কী, সমাধান কী।

সচিব আরও বলেন, একটা জিনিস হল এটা দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এটা সারাদেশের মানুষের স্বপ্ন এবং  প্রধানমন্ত্রী এটা নিশ্চিত করতে চান কোনো কিছুর জন্য যাতে জনগণের ভোগান্তি না হয়। শুনেছি এই এলাকায় নিকট অতীতে রকম পানি কখনো হয়নি। কেউ দেখেনি। যে কোনো প্রকল্প করার আগে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়। গত ১শবছরে নদীর গতিপথ, জোয়ার-ভাটা কেমন হয়, জীববৈচিত্র্যের প্রভাব ফেলে কি না, সামগ্রিক বিষয় নিয়েই পরিকল্পনা করা হয়েছে। মূল প্রকল্পের চাইতেও ৪০টির বেশি কালভার্ট বেশি করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি এবং আমরা কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি, এখানে একটা ব্রিজ ওখানে একটা কালভার্ট প্রয়োজন। জন্য আমরা সংখ্যা বাড়িয়েছি। আপাতত আমরা ভাবছি আরও কালভার্ট করে দেব। পরের বছর হয়তো রকম পানি হতে পারে কিংবা ২০ বছর পরেও রকম পানি আসতে পারে। এটা তো আনপ্রেডিক্টেবল। সারাবিশ্বে জলবায়ু প্রভাব পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রকল্প তো ১শ বছরের হিসাবে করেই করা হয়েছে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে যাতে কখনো জনদুর্ভোগ ভবিষ্যতে না হয়, এটা যদি প্রয়োজন হয় বা আরও উঁচু করা লাগে-ব্যালেন্স করা লাগে; মানে ব্যালেন্স বলতে টেকনিক্যালি আমরা এটাকে পাথর বলি, তা হলে পাথর দিয়ে উঁচু করা হবে। যেখানে কালভার্ট করতে হবে সেখানে কালভার্ট করে কাজগুলো দ্রুত শেষ করা হবে।

সচিব বলেন, এখনো তো ওয়েল্ডিং হয়নি, আমরা এখনো টেম্পটিং করিনি। কাজগুলো এখনো হয়নি। সে কাজগুলো আমরা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের দিকে ট্রায়াল রানে যাব। তার পরই অক্টোবরের শেষে উদ্বোধন করা হবে।

ক্ষয়ক্ষতিতে ব্যয় বাড়বে কি না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যয়সীমা বাড়বে না। যে ব্যয় নির্ধারণ রয়েছে তার মধ্যেই করা হবে। টেকনিক্যাল টিমের সঙ্গে  বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হবে সংস্কার কাজের।

তমা কন্সট্রাকশন কর্তৃপক্ষ বলেছে, মন্ত্রালয়ের সিদ্ধান্ত পেলে রেললাইনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ অল্প সময়ের মধ্যে সংস্কার করা সম্ভব। এজন্য প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বাড়তি সময় লাগবে না।

বিষয়ে তমা কন্সট্রাকশনের এমডি আব্দুল করিম ভূঁইয়া বলেন, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে দশদিন কাজ করা যায়নি। এখন আমরা দিনেরাতে কাজ করছি। আমাদের টার্গেট অক্টোবরে ওপেনিং। সেই টার্গেট থেকে আমরা পিছাইনি। আমরা কাজ করছি, এরমধ্যে বন্যায় কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে এটা যে খুব বড় আকারের ক্ষতি তা আমার মনে হয় না। মাত্র ৫শমিটার জায়গা থেকে পাথর সরে গেছে, স্রোতের টানে। পাথর রিপ্লেস হয়ে যাবে। যে জায়গাতে পাথরের নিচে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এগুলো আমরা মেরামত করে ফেলব। এটা খুব সময়ের বিষয় না। এটার জন্য পুরো প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই। তিনি আরও বলেন- সচিব মহোদয় বলেছেন, টেকনিক্যালি তারা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত দেবেন কখন মেনটেন্যান্স শুরু হবে। আমরা যদি মেনটেন্যান্স শুরু করতাম তাহলে এতদিনে শেষ হয়ে যেত। বড় আকারের বন্যার কারণে অনেক সময় সড়ক, কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বলে কাজ বন্ধ থাকে না। -১০ ঘণ্টার মধ্যে এগুলো মেনটেন্যান্স করে ফেলা যায়। ১শবছরের মধ্যে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়নি। যেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই ভেবেচিন্তে কাজটা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কনসালট্যান্ট এবং সংশ্লিষ্টরা।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে  তমা কনস্ট্রাকশনের এমডি বলেন, সরেজমিন দেখেন আপনারা। ছবিগুলো নেন। এখানে কোনো স্লিপারও বাঁকেনি, রেললাইনও বাঁকেনি। এখানে ব্যালাস্টের ওপর স্লিপার থাকে, স্লিপারের ওপর রেললাইন থাকে। ব্যালাস্ট সরে যাওয়াতে স্লিপার বসে গেছে। বসার কারণে রেললাইন বাঁকা দেখা যাচ্ছে। এটা যদি আপনারা এঙ্গেলে ছবি নেন তখন মনে হবে রেললাইন বেঁকে গেছে। এখন আপনারা এবং আমরাও রেললাইনের পাশে আছি। আপনারা দেখেন কোথাও কিন্তু রেললাইন বাঁকেনি।

সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমানসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১শকিমি রেলপথের ৮৮ কিমি রেললাইন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১২ কিলোমিটার আগামী দেড় মাসের মধ্যে নির্মাণ শেষ করে অক্টোবর মাসেই বিশেষ এই প্রকল্প উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। দোহাজারী-কক্সবাজার ১শকিমি রেললাইন প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার বেশি।

×