ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

উন্নয়নে বদলে গেছে বিলুপ্ত ছিটমহল

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ৩১ জুলাই ২০২৩

উন্নয়নে বদলে গেছে বিলুপ্ত ছিটমহল

দাশিয়ারছড়া সাবেক ছিটমহলে স্মারক ভাস্কর্য

উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে বাংলাদেশের বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই ছিটমহলগুলো একই ভূখ-ে মিলে যাওয়ার পর একের পর এক উন্নয় চলছে। অবাক দৃষ্টিতে একে ছিটমহলবাসীরা দেখছে। প্রতিটি উন্নয়নের ভাগিদার হচ্ছে। দশকের পর দশক তারা অবহেলিত আতঙ্কিত জীবন কাটিয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সাফল্যে দীর্ঘ ৬৪ বছরের বঞ্চিত জীবনের অবসান ঘটায়। আজ মঙ্গলবার ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময়ের আট বছর। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির আলোকে দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহলের মধ্যে ভারতের একশ’ ১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের মূল ভূখ-ের সঙ্গে মিলিত হয়।

অন্যদিকে ভারতে যুক্ত হয় বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল। এতে মুক্তি মেলে ৬৮ বছর ধরে বন্দি জীবন কাটানো মানুষের। এরই মধ্যে ধারাবাহিক নানা উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেন বিলুপ্ত ছিটের বাসিন্দারা। দিবসটি স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছরের ন্যায় নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পতাকা উত্তোলন, র‌্যালি ও খেলাধুলা ও সাফল্য অর্জন করা দাসিয়ার ছড়ার শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা।
দেশের সবচেয়ে বড় অধুনালুপ্ত ছিটমহল কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর উপজেলার দাসিয়ার ছড়া। এখানকার জনসংখ্যা প্রায় আট হাজার এবং জমির পরিবার ১৬শ’ ৪২ একর। ছিটমহল বিনিময়ের আট বছরে সরকারি প্রচেষ্টায় জীবন-মানের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এই অধুনালুপ্ত ছিটবাসীদের। শিক্ষা, যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষিসহ নাগরিকত্বের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘ বন্দিজীবন কাটানো এসব মানুষ। বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সুফল ভোগ করা বিলুপ্ত ছিটবাসীরা জানান তাদের অতীত ও বর্তমান অনুভূতির কথা। বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ার বাসিন্দা মনির হোসেন জানান, দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে এখানকার বাংলাদেশ কিংবা ভারতের কোনো ধরনের নাগরিক সুবিধা পায়নি। এক কথায় বন্দিজীবন কেটেছিল। কিন্তু ছিটমহল বিনিময়ের এই আট বছরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মের সুবিধাসহ সব কিছুই পেয়েছি। আমরা বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, আমরা বিলুপ্ত ছিটবাসীরা সব ক্ষেত্রে এত বেশি উন্নয়ন পেয়েছি, যা বলার ভাষা নেই। এখন আমরা চাই অধুনালুপ্ত ছিটমহলগুলোতে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ঐতিহাসিক এ দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক সেই সঙ্গে দাসিয়ার ছড়াকে আলাদা একটি ইউনিয়ন ঘোষণা করা হোক। এটাই আমাদের বিলুপ্ত ছিটবাসীদের প্রাণের দাবি। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, সরকারি বিশেষ উদ্যোগে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীরা দেশের উন্নয়নের ধারায় যুক্ত হচ্ছে। এ ধারা চলমান রেখে বিশেষ করে তরুণ সমাজকে এগিয়ে নিতে শিক্ষা, আইসিটিসহ নানামুখী কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। 
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা একশ’ ১১টি বিলুপ্ত ছিটমহলের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলায় রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে শুধু দাসিয়ারে ছড়ার উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছে ৫০ কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বাংলাদেশের নাগরিকত্ব  এবং ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব পায়। বাংলাদেশ পায় ১১১টি ছিটমহলের ১৭ হাজার দুইশ’ ৫৮ একর জমি এবং ভারত পায় ৫১টি ছিটমহলের সাত হাজার ১১০ একর জমি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহলের মধ্যে কুড়িগ্রামে-১২, লালমনিরহাটে-৫৯, পঞ্চগড়ে-৩৬ এবং নিলফামারী জেলায়-চারটি। ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায় ৪৭টি এবং জলপাইগুড়ি জেলায় চারটি।

×