ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

চরাঞ্চলেও অনলাইন বাজিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা 

স্টাফ  রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম 

প্রকাশিত: ১৭:৪২, ৮ জুলাই ২০২৩

চরাঞ্চলেও অনলাইন বাজিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা 

বাজিতে আসক্ত 

কুড়িগ্রাম শহর-গ্রাম এমন কি চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ও অনলাইন গেমিং এবং অনলাইন বাজিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এতে করে পড়াশোনা বিমুখ হবার পাশাপাশি বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। শিক্ষার্থীরা হয়ে পড়ছে মাদকাসক্ত পুলিশ প্রশাসন তৎপর থাকলেও বন্ধ হচ্ছে না অনলাইন বাজি খেলা। 

প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছে নেই কুড়িগ্রাম জেলা। শহর-গ্রাম কিংবা চরাঞ্চল। সবার হাতেই রয়েছে স্মার্ট ফোন। আর এই স্মার্ট ফোনের বদৌলে খুব সহজেই অনলাইন বাজি খেলায় জড়িয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চল শাখাহাতি গ্রামে৭/৮জন কিশোর টিনসেড চালার নিচে বসে মোবাইলে গেম খেলছে। তাদের প্রত্যেকের  হাতে ১৫/২৫ হাজার টাকা মূল্যের স্মার্ট মোবাইল রয়েছে। মাথা  নিচু করে হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলে ছোট আকারের মোজা পড়ে এক ধ্যানে তারা মোবাইলে গেম খেলছে। প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে জেলার সর্বত্রই প্রাপ্ত-অপ্রাপ্তদের  হাতে স্মার্ট ফোনের ছড়াছড়ি। 

এতে করে খুব সহজেই অনলাইন গেমসহ অনলাইন বাজি খেলার প্রবণতা বহু গুণে বেড়েছে। দোকান,ভবন,গাছতলা কিংবা  সড়কের বিভিন্ন স্থানে বসে মাথা ঝুঁকে এক নাগারে মোবাইলে জুয়ার আসর বসছে দলবদ্ধ ভাবে। ফ্রি ফায়ার, ক্যাসিনো, জেডউইন, বাবু ৮৮, জেডবার্ড, মারবেল, বাজি ৯৯৯, টেনবার্ডটি, পাবজি, লুডু, ক্যারাম বোর্ড, ওয়ান এক্স বেটসহ বহু অনলাইন গেম এবং বাজি খেলাতে আসক্ত হয়ে পড়েছে আগামী প্রজন্ম। অনলাইন বাজির নেশায় কেউ কেউ পড়াশোনা বাদ দিয়েছে অল্প বয়সেই। বাজির এই অনলাইন জুয়া খুবই লোভনীয় আর আকর্ষণের খেলা। মোবাইল গেম, খেলাধুলা, পড়াশোনা, কাজকর্ম বাদ দিয়ে সব সময় এর মধ্যে পড়ে থাকছে শিক্ষার্থী।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের সিডি মোর এলাকার খোরশেদ আলম জানান, ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। প্রায় ৩বছর আগে পড়াশোনাবাদ দিয়েছি। এই বাজি খেলতে গিয়ে আমার লেখাপড়া শেষ। ঢাকায় কাজ করে টাকা জমিয়ে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি স্মার্ট মোবাইল কিনেছি। আমার ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমে একাউন্ট আছে। প্রতিদিন ১০টাকা করেএমবি কার্ড কিনে মোবাইলে বাজি এবং অনলাইন গেম খেলি। সার্ভারবন্ধ থাকলেও ভিপিএন-এর  মাধ্যমে এসব গেম ও বাজি খেলা যায়।

একই এলাকার ৭ম শ্রেণীর ছাত্র কামরুল  হাসান জানায়, আমার  নামে ফেসবুক একাউন্ট আছে। আমি সিডির মোড়ে এসে ওয়াইফাই এর মাধ্যমে পাবজি আরফ্রি ফায়ার গেম খেলি। বাজি খেলিনা। আমার হাতে এই স্মার্ট ফোনটি বাবার। এখানে সাত টাকা দিয়ে ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড নিয়ে আনলিমিটেড সময় খেলা যায়। 

একাদশ শ্রেণীর ছাত্র রাকিুবল হাসান বলেন,আমার এ যাবৎ প্রায় ৫০ হাজার টাকা চলে গেছে মোবাইলে গেম ও বাজি খেলাতে। কোন লাভ হয়নি। উল্টো পড়াশোনা ক্ষতি এবং চোখ সহ শারিরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়েছে। 

৮ম শ্রেণীর ছাত্র আরাফাত সানী বলেন, আমার ৭/৮ মাসে এমবিকার্ড কিনতে ১০হাজারের  উপর টাকা চলে গেছে। শুধু এগুলো টাইম পাস ছাড়া আর কিছু না। মোবাইলে বাজি বা গেম খেললে ছেলেরা মাদক, ইভটিজিং সহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে না। তবে একটানা মোবাইলে থাকলে মেধা ও স্বরণ শক্তি কমে যায়। আমাদের এই চরাঞ্চলে ৩য় শ্রেণী থেকে উপড়ের শ্রেনীর বিভিন্ন বয়সের ছেলেরা এই মোবাইল গেম ও বাজি আসক্ত। 

নজির হোসেন, রফিকুল ইসলামসহ অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেন, প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ছোট-বড় ছেলেদের দল বেধে গাছতলা, দোকান ঘর, চায়ের দোকান, রাস্তার দু’পাশেসহ বিভিন্ন স্থানে বসে মোবাইলে বাজি আর গেম খেলে। তাদের নিষেধ করলেও মুরুব্বিদের কথা তারা শোনেনা। 

ওয়াইফাই সংযোগ নেয়া দোকান মালিকরা গোপনে দিনে ৫/৭ টাকা করে নিয়ে বাচ্চাদের পাসওয়ার্ড দেয়। এভাবে ওয়াইফাই মালিকরা দিনে ৩০০/৪০০টাকা আয় করছে। এ ছাড়াও উঠতি বয়সের ছেলেদের নিকট চা, বিড়ি বিক্রি করছে। এতে একদিকে ওয়াইফাই এবং চা, বিড়ি বিক্রি করে ব্যবসা দ্বিগুণ করছে। এই অল্প বয়সে অনেকের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। মোবাইল আসক্তি রোধ করা না গেলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এসব ছেলে চুরি, ছিনতাই, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়্রার শংকা প্রকাশ করছে অভিভাবকরা। আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেবার দাবী জানান  অভিভাবক বৃন্দ।

কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার আল আসাদ মোঃ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, অনলাইন ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন বাজিধরা অ্যাপস-এবাজি খেলে কেউ হয়েছে নিঃস্ব আবার কেউ হয়েছে কোটিপতি। আর এসব জুয়ার টাকা খুব সহজেই মোবাইল ব্যাকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাত বদল করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জেলার আইন শৃংখলা বাহিনী উত্তরবঙ্গের অনলাইন জুয়ার সফটওয়্যার ডেভেলপার সুজনমিয়া সহ একটি চক্রকে আটক করেছে। অনলাইন বাজি বন্ধে জেলা পুলিশ নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছে। 
  

 

এমএস

×