ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

ঈদের আগেই বন্যার শঙ্কা

উত্তরাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ২০ জুন ২০২৩

উত্তরাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, নীলফামারীসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে

উজানের ঢল ও ভারি বৃষ্টিতে উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, নীলফামারীসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ সবক’টি নদ-নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হচ্ছে চর ও নিম্নাঞ্চল। এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দুই হাজার পরিবার। আসন্ন ঈদের আগে বন্যার শঙ্কা নিয়ে দিন পার করছেন চরাঞ্চলের মানুষ। এদিকে নীলফামারীতে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠলেও পরে তা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার খবর জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অন্যদিকে সুনামগঞ্জে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা, জাদুকাটা, রক্তি নলজুর কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বাড়ছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হচ্ছে চর ও নিম্নাঞ্চল। এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দুই হাজার পরিবার। আসন্ন ঈদের আগে বন্যার শঙ্কা করছেন চরাঞ্চলের মানুষ। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি সদর পয়েন্টে ৮৪ সেন্টিমিটার ও দুধকুমার নদীর পানি জেলার ভূরুঙ্গামারীর পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় সবকয়টি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও এরই মধ্যে বেশকিছু চর ও নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে চরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় বিশুদ্ধ পানি সংকটে পড়েছেন বাসিন্দারা। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের আরাজী পিপুলবাড়ী গ্রামের জয়নাল মিয়া বলেন, ‘তিনদিনের বৃষ্টি আর উজানের ঢলে এলাকার চরগুলো ডুবে গেছে। পটোল, তিল খেত তলিয়ে গেছে। এখন বাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা মোতাহের হোসেন বলেন, চরের রাস্তা তলিয়ে গেছে। এখন নৌকাই আমাদের ভরসা। যাদের নৌকা নেই তারা কলাগাছের ভেলা বানিয়ে চলাচল করবেন। প্রতিবছর এ সময় আমাদের দুর্ভোগ বাড়ে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উজানের ঢল ও বৃষ্টির কারণে জেলার সব কয়েকটি নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। বন্যার আশঙ্কাও নেই। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, জেলার সবক’টি উপজেলায় প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিচ্ছি। তবে বন্যার সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।
চার নদীতে কমছে পানি, বাড়ছে কুশিয়ারায় ॥ সিলেটে সুরমা, ধলাই, সারী ও লোভা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। তবে সুরমার নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যসব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। সিলেট সদর পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কুশিয়ারা নদীতে পানি বাড়ছে।
বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নগরের নিম্নাঞ্চলে জমে থাকা জলাবদ্ধতার পানি বেশিরভাগ এলাকা থেকে নেমে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১২৫ দশমিক ২ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টিপাত হয়েছে শূন্য দশমিক ২ সেন্টিমিটার। তবে সকাল ১০টার পর থেকে সিলেটে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সকালে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও সিলেট আবহাওয়া অফিস থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক বার্তায় এসব তথ্য জানা গেছে।
বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে গোয়াইনঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ভোর ৬টায় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি ছিল ১৩ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার। এ পয়েন্টে ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটারের বেশি হলে বিপৎসীমার ওপর ধরা হয়। তবে সকাল ৯টায় মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে কানাইঘাট পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার পানি কমে ১২ দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটার অর্থাৎ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর সিলেট সদর পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার ভোর ৬টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সুরমা নদীর ওই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ৩৩ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। তিন ঘণ্টার ব্যবধানে সকাল ৯টায় সিলেট সদর পয়েন্টে পানি কমেছে ২ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর শেওলা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর এ তিনটি পয়েন্টেই পানি বেড়েছে। ভোর ৬টায় কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টে ১১ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। তিন ঘণ্টার ব্যবধানে এখানে পানি বেড়েছে ২ সেন্টিমিটার।
 গোয়াইনঘাট উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ শাখার কর্মকর্তা (পিআইও) শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। উপজেলাজুড়ে ৫৬টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ বিপুলসংখ্যক উদ্ধারকারী (রেসকিউ) টিম রয়েছে। আমরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছি। উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের জরুরি বার্তা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
ধীরগতিতে বাড়ছে নদী ও হাওরের পানি ॥ বৃষ্টিপাত কম থাকায় সুনামগঞ্জে ধীরগতিতে বাড়ছে সুরমা, যাদুকাটা, রক্তি নলজুর কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে  বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার) থেকে সুরমা নদীতে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এদিকে ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতক পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। জেলার হাওরগুলোতে পানি বাড়লেও এইসময় (আষাঢ মাসে) হাওরে যে পানি থাকার তার চেয়ে অনেক কম রয়েছে বলে হাওরাঞ্চলের জনপ্রতিনিধি, কৃষক ও জেলেরা জানিয়েছেন। তাদের দেওয়া তথ্য মতে লোকালয়ে এখনো পানি প্রবেশ তো করেই নাই বরং তুলনামূলকভাবে আরও কম রয়েছে। টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পদ্মায় বেড়েছে পানি, দৌলতদিয়ায় দুটি ঘাট বন্ধ ॥ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার পদ্মা নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণে ফেরি ঘাটের পন্টুনের অ্যাপ্রোচ সড়ক ডুবে গেছে। এতে ঈদ মৌসুমে গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমান দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ৪টির মধ্যে ২টি ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর দৌলতদিয়া পয়েন্ট ৭২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে দৌলতদিয়ার ৩ ও ৪ নম্বর ফেরিঘাট বন্ধ রয়েছে। চালু থাকা ৬ ও ৭ নম্বর ঘাটও যেকোনো মুহূর্তে বন্ধের আশঙ্কা রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয় জানায়, আকস্মিক পানি বৃদ্ধির কারণে র‌্যামের মাথা তলিয়ে যাওয়ায় সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ৪ নম্বর ঘাট বন্ধ হয়। এর আগে পানিতে র‌্যামের তলিয়ে যাওয়ায় এবং সড়ক সংস্কারের কারণে শনিবার থেকে ৩ নম্বর ঘাট বন্ধ আছে। সোমবার সকালে ৬ নম্বর ঘাটটি বিআইডব্লিউটিএ চালু করলেও ইউটিলিটি (ছোট) ফেরির পন্টুন হওয়ায় বড় ফেরি ভিড়তে পারছে না। রো রো (বড়) ফেরির একমাত্র ৭ নম্বর ঘাট চালু থাকলেও র‌্যামের মাথা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে এটিও বন্ধের আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।

×