
বাংলাবান্ধা মহাসড়কটিতে চলমান সংস্কার কাজে দুর্ভোগ আর ক্রমাগত দুর্ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা
‘কাম নাই, কোটি কোটি খরচ করি আস্তাখান নষ্ট কইল্লেন। সামান আস্তাখান এলা যেইত্তি সেইত্তি পাথর উঠে রহেছে। পইত্তেক দিন এক্সেডেন্ট হছে। মাইনসিও মারা যাছে। এই আস্তাত যাহে যাছে, ওরে বারোটা বাজেছে। আর টায়ার কম্পানিলার ব্যবসা জমিছে।’ ক্ষোভে কথাগুলো বলছিলেন তেঁতুলিয়া উপজেলার ভ্যানচালক সাজিম আলী।
শুধু সাজিম আলীই নন, পঞ্চগড় বাংলাবান্ধা মহাসড়কটিতে চলমান সংস্কার কাজে দুর্ভোগ আর ক্রমাগত দুর্ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ হলো, সড়কটিকে সংস্কারের নামে মানুষের দুর্ভোগ আর প্রাণহানির ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। তবে সড়ক বিভাগ বলছে, সড়কটিকে টেকসই করতে এ কাজ করা হচ্ছে। গত ৯ জুন পঞ্চগড় বাংলাবান্ধা মহাসড়কের দশমাইল এলাকায় সড়কে ট্রাকচাপায় প্রাণ যায় শরিফুল ইসলাম (২৭) ও শেখ ফরিদ (২৬) নামে মোটরসাইকেল আরোহী চাচা-ভাতিজার। গত ২৩ মে পঞ্চগড় বাংলাবান্ধা মহাসড়কের মাঝিপাড়া এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে যায়। আহত হন বাসের অন্তত ১৮ জন যাত্রী।
আনারুল ইসলাম নামের এক পথচারী বলেন, এমনভাবে সড়কের কাজ করছে যে পাথরগুলো আলাদা হয়ে উঠে থাকছে। এছাড়া পিচ রোদে গলে যাচ্ছে। হাঁটার সময় পায়ের জুতোর সঙ্গে লেগে যাচ্ছে। কাজটি যতœ করে করেনি ঠিকাদার। কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভালো সড়কটি এখন নষ্ট করা হয়েছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার আমিনুর রহমান বলেন, কয়েকদিন আগে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে বাইকে করে পঞ্চগড় যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে সাড়ে ৯ মাইল এলাকায় আলগা পাথরের সঙ্গে পিছলে আমরা পড়ে যাই। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও মারাত্মকভাবে আহত হই আমরা। সড়কের এই অবস্থার কারণেই প্রতিদিন আমার মতো অনেক মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
পঞ্চগড় সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, এই মহাসড়কটি নির্মাণের ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে কোনো মেনটেইন্যান্স হয়নি। মহাসড়কটিকে আরও টেকসই করার জন্য ডিবিএসটি কাজ করা হচ্ছে। এতে সড়কের স্থায়িত্ব যেমন বাড়বে তেমনি দুর্ঘটনাও কমে আসবে। আর এর মধ্যে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে তা অতিরিক্ত গতির কারণে হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জে ৩০ হাজার মানুষের ভোগান্তি
স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের জাজিরা-মিনাবাজার সড়ক দিয়ে ১০ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ প্রতিদিন চলাচল করে। এই সড়কটি উন্নয়ন কাজের নামে গত ১০ মাস ধরে ৩ ফুট গভীর গর্ত করে ফেলে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সামান্য বৃষ্টি হলে সড়কে জমছে পানি। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যান চলাচল। কাদায় সড়কে চলতে গিয়ে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জাজিরা সেতুর দক্ষিণ পাশ দিয়ে এ সড়কটি মিনাবাজারের দিকে চলে গেছে। প্রায় ২ কিলোমিটার দূরত্বের এ রাস্তাটিতে ৩ ফুট গভীর নালা করে কেটে রাখা হয়েছে। সড়কের মধ্যে কোথাও কোথাও এক থেকে দেড় ফুট পরিমাণ কাদার স্তর জমে আছে।
এর মধ্যদিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পথচারী, কৃষিপণ্য, মালবাহী অটোরিক্সা, যাত্রীবাহী অটোরিক্সা যাতায়াত করছে। আধারা ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, রাস্তায় চলাচলের দুর্ভোগের কথা বলে শেষ করা যাবে না। মানুষ যে কী পরিমাণ ভোগান্তিতে আছে যারা এই পথটা ব্যবহার করে তারা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, এলজিইডিকে বারবার বলার পরেও কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী সফিকুল আহসান বলেন, সড়কটির জাজিরা থেকে মিনাবাজার পর্যন্ত এখানে প্রায় ২ কিলোমিটার রয়েছে। এ অংশটুকুর অবস্থা খুবই খারাপ। কাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকবার চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। এরপরও তারা কাজ করছে না। তবে এখনো তাদের কাজের সময় রয়েছে।