ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চালু হচ্ছে পাইপলাইন

আমদানি তেল খালাস হবে ২৪ ঘণ্টায়, কমিশনিং জুনে

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ০০:১৮, ২৯ মার্চ ২০২৩

আমদানি তেল খালাস হবে ২৪ ঘণ্টায়, কমিশনিং জুনে

সমুদ্র তলদেশে স্থাপিত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির পাইপলাইন

সমুদ্র তলদেশে স্থাপিত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির পাইপলাইন। আমদানির পরিশোধিত ও অপরিশোধিত তেল মাদার ভেসেল থেকে ২৪ ঘণ্টায় খালাস হয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে স্থলভাগে অর্থাৎ চট্টগ্রামের পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারির স্টোরেজ ট্যাঙ্কে। এতে তেল খালাসে অধিক সময় যেমন বাঁচবে তেমনি দীর্ঘ সময়ে লাইটারিং পদ্ধতির অবসান ঘটবে। আর এতে বছরে আর্থিক সাশ্রয় হবে ৮০০ কোটি টাকার বেশি। 
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানানো হয়, দেশে জ¦ালানি খাতে এক নয়া দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে। আগামী জুন মাসে কমিশনিংয়ের পর ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) ডবল পাইপলাইন প্রকল্পের আওতায় জ¦ালানি খাতে আমদানির তেল খালাসে যুগ যুগের পদ্ধতির অবসান ঘটবে। ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে এ প্রকল্পটির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন একেবারেই শেষ পর্যায়ে। 
বর্তমানে আমদানির জ¦ালানি তেল খালাস কার্যক্রম চলে আসছে লাইটারিং পদ্ধতির মাধ্যমে। বিদেশ থেকে মাদার ভেসেলযোগে তেল আসার পর বিএসসির লাইটারিং জাহাজের মাধ্যমে তা খালাস করা হয়। নতুন এসপিএম পদ্ধতিতে এ লাইটারিং পদ্ধতি আর থাকবে না। এসপিএম প্রকল্পের আওতায় মাদার ভেসেল থেকে ২৪ ঘণ্টায় ১ লাখ টনের বেশি পরিশোধিত বা অপরিশোধিত তেল খালাস হয়ে পৌঁছে যাবে রিফাইনারির স্টোরেজ ট্যাঙ্কে। 
বিপিসি সূত্র জানায়, গভীর সমুদ্রবক্ষে ব্যয়বহুল ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং ডবল পাইপলাইন প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৫ সালে। মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিমে এসপিএম প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। এসপিএম থেকে অফশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রথমে মাতারবাড়ি এলপিই পর্যন্ত এবং পরে সেখান থেকে অনশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী এলাকায় স্থাপিত ট্যাঙ্কে স্টোরেজ হবে।

পরে ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি পৃথক পাইপের মাধ্যমে ডিজেল ও অপরিশোধিত তেল রিফাইনারির স্টোরেজ ট্যাঙ্কে পৌঁছানো হবে। এ প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীর গভীর সমুদ্রে এসপিএম নির্মাণ এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত অফশোর এবং অনশোর মিলে মোট ২২০ কিলোমিটার ডবল পাইপলাইন বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরমধ্যে সাগরের তলদেশে স্থাপিত হয়েছে ১৪৬ কিলোমিটার এবং স্থলভাগে বসানো হয়েছে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইন।

মহেশখালীর মাতারবাড়ি থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে এসপিএম স্থাপিত হয়েছে। আমদানির তেল খালাসের পর স্টোরেজের জন্য মহেশখালীতে ৯০ একর জমির ওপর ৬টি স্টোরেজ ট্যাঙ্ক ও পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। তিনটিতে থাকবে ডিজেল ও অপর তিনটিতে থাকবে ক্রুড অয়েল। স্টোরেজ ট্যাঙ্কের (পরিশোধিত) প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৬০ হাজার ঘনমিটার। অপরদিকে, অপরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাঙ্কের প্রতিটির ধারণক্ষমতা ৩৫ হাজার ঘনমিটার।

ডবল পাইপলাইনের একটি দিয়ে পরিশোধিত ও অপরটি দিয়ে অপরিশোধিত তেল পাম্পিং করে রিফাইনারির স্টোরেজ ট্যাঙ্কে পৌঁছানো হবে। বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এ প্রক্রিয়ায় ৪৮ ঘণ্টায় ১ লাখ ২০ হাজার টন অপরিশোধিত তেল এবং ২৮ ঘণ্টায় ৭০ হাজার টন পরিশোধিত ডিজেল খালাস হয়ে পৌঁছে যাবে রিফাইনারিতে। 
সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখ টন জ¦ালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। যার পুরোটাই আমদানিনির্ভর। চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারিতে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টন ক্রুড অয়েল পরিশোধন করা হয়ে থাকে। চাহিদার অবশিষ্ট তেল পরিশোধিত আকারে আমদানি করা হয়ে থাকে। আমদানির জ¦ালানি তেল নিয়ে বহির্নোঙ্গরে  যেসব মাদার ভেসেল আসে তার ধারণক্ষমতা গড়ে সর্বোচ্চ ১ লাখ টন। এ তেল খালাস কাজে ব্যবহার করা হয় লাইটার জাহাজ।

এসব জাহাজ তেল পৌঁছে দেয় রিফাইনারিতে। এ প্রক্রিয়ায় গড়ে ১১ থেকে ১২ দিন সময় নেয় ১ লাখ টন তেল খালাস করতে। নতুন প্রযুক্তিতে এসপিএম পদ্ধতি শুরু হলে এ তেল খালাসে সময় নেবে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা। আর রিফাইনারিতে তা পৌঁছুতে সময় নেবে মাত্র ২৪ ঘণ্টা। 
বিপিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গভীর সমুদ্র থেকে এসপিএম পদ্ধতিতে তেল খালাস শুরু হলে পরিবহন ব্যয় যেমন কমবে তেমনি অপারেসন্স লস বা সিস্টেম লস অনেকাংশে কমে যাবে। সবচেয়ে বেশি কমবে সময়। এছাড়া লাইটারিং পদ্ধতির অবসান হলে বিপিসির ৮০০ কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় ঘটবে। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জি টু জি ভিত্তিতে ২০১৫ সালে নেওয়া এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। বিপিসির নিয়ন্ত্রণে ইস্টার্ন রিফাইনারি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। এর পর করোনাসহ নানা কারণে তিন দফায় ব্যয় বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে তা সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এ প্রকল্পে চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ সহায়তা হিসেবে দিয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা। ২০১০ সালে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হলেও অর্থাভাবে দীর্ঘদিন আটকে ছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হলে স্থবিরতার অবসান ঘটে।

×