ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নোয়াখালীতে দেড় মাস ধরে হেলে আছে ভবন, আতঙ্কে এলাকাবাসী

নিজস্ব সংবাদদাতা, নোয়াখালী 

প্রকাশিত: ১৯:০৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

নোয়াখালীতে দেড় মাস ধরে হেলে আছে ভবন, আতঙ্কে এলাকাবাসী

হেলে পড়া ভবন 

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর গাবুয়া বাজারে ‘রাশিয়ান প্লাজা’ নামে একটি চারতলা ভবন দেড় মাস ধরে হেলে আছে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আশপাশের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ভবন মালিক শেখ শহিদুল ইসলামের দাবি, পাশের মালিকরা বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন নির্মাণে অপরিকল্পিত মাটি খননের ফলে তার ভবনটি হেলে পড়েছে। এতে তিনি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একলাশপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত শেখ মোবারক আলীর ছেলে রাশিয়া প্রবাসী শেখ শহিদুল ইসলাম ২০০২ সালে ৬ শতাংশ জমির ওপর চারতলা ভবন নির্মাণ করেন। একই জায়গায় তার বড় ভাই মো. নুরনবী বাবরের কাছ থেকে পাঁচ শতাংশ জমি কিনে মহিন উদ্দিন ও ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী সাহিদা বেগম গত বছর বহুতল একটি ভবন নির্মাণ শুরু করেন।

একলাশপুরের দক্ষিণে গাবুয়া বাজারের পশ্চিম দিকের সড়ক সংলগ্ন রাশিয়ান প্লাজা অবস্থিত। গত বছরের ডিসেম্বরে এ ভবনের পশ্চিম পাশ ঘেঁষেই তৈরি হচ্ছে মহিন উদ্দিনদের নতুন ভবন। কিছু দিনের মধ্যে রাশিয়ান প্লাজা ভবনটি পশ্চিম দিকে নির্মাণাধীন ভবনের দিকে কিছুটা হেলে পড়েছে। 

ভবনের নীচতলার বেশ কয়েকটি দোকান বন্ধ অবস্থায় আছে। দোতলা থেকে ওপরে ১২টি ফ্ল্যাটের মধ্যে মালিকরা ছাড়া বাকি ফ্ল্যাটগুলো খালি পড়ে আছে। আশপাশের লোকজন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ভবনটি হেলে পড়ায় এলাকার সবাই আতঙ্কিত। ব্যবসায়ীরা ওই ভবন ছেড়ে দেওয়ার নোটিস দিয়েছে। 

এর আগে পরিবার পরিজন নিয়ে ১১ পরিবারের অনেকে মালামাল রেখে ভবন ছেড়ে চলে গেছে। এখন প্রশাসন থেকে এর কোনো ব্যবস্থা না করলে যে কোনো সময় বড় ধরনের বিপদ হতে পারে।

ভবন মালিক শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, পশ্চিম পাশে এক শতাংশ জমি ফাঁকা রেখে ভবন নির্মাণ করি। পাশের ভবনের মালিকরা ফাঁকা জায়গা দখলে নিয়ে ভবনের পাশ ঘেঁষে গভীরভাবে মাটি খননে আমার ভবনটি হেলে পড়েছে। ফলে আমার ১১ জন ভাড়াটিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। নীচতলার দোকানদারও চলে যেতে চাইছে। এ জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের কাছে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা করেছি।

শহিদুলের বড় ভাই মো. নুরনবী বাবর বলেন, আমি মহিন উদ্দিনের কাছে পাঁচ শতাংশ জমি বিক্রি করেছি। তবে শহিদুল ইসলামের সঙ্গে লিখিত কোনো চুক্তি হয়নি। মহিন উদ্দিন কোথা থেকে এ চুক্তিপত্র পেয়েছে তা আমার জানা নেই।

অভিযুক্ত মো. মহিন উদ্দিন বলেন, আমি ও মো. ইসমাইল জমি কিনে যৌথভাবে ভবন নির্মাণ করছি। চুক্তির কপি আমরা আদালতে উপস্থাপন করেছি। সেটি ভুয়া হলে আদালতে প্রমাণ হবে। আমরা জমি কিনে ভবন করছি। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।

ভবনটি হেলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নোয়াখালী গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিব। তিনি বলেন, ভবনটি পর্যবেক্ষণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ভবনটি পশ্চিম দিকে চার ইঞ্চি হেলে পড়েছে এবং দুটি কলাম ও দেওয়ালে ফাঁটল ধরেছে। পশ্চিম পাশের ভবন নির্মাণে পৌনে ৭ ফুট মাটি খনন করা হয়েছে। অভিযুক্তরা বিধিমালা অনুযায়ী, ভবন নির্মাণ করছেন না বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

বিকেলে বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর জাহেদুল হক রনি বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়ে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ অনেকদিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। বর্তমানে তারা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় বিষয়টি আর আমার জানা নাই। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির আশপাশের বাসিন্দারা আতঙ্কিত অবস্থায় আছে।

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এসআর

×