
দৌলতদিয়া ফেরিঘাট যেন দেখার কেউ নেই
অযন্ত-অবহেলায় জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। সাতটি ঘাটের মধ্যে চারটি ঘাট দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। বন্ধ রয়েছে বিআইডব্লিউটিসি নিয়ন্ত্রাধীন ওয়েট স্কেল মেশিন। অনুমানের ওপর নির্ভর করে দেওয়া হচ্ছে ওজনের টোকেন। এতে সুবিধা নিচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও গোয়ালন্দ উপজেলায় অবস্থিত বিআইডব্লিউটিসি নিয়ন্ত্রাধীন ওয়েট স্কেল এলাকা ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এমনি চিত্র।
দৌলতদিয়া পাড়ে বিআইডব্লিউটিসিএর নির্মিত রয়েছে সাতটি ফেরিঘাট। এর মধ্যে ১ ও ২নং ফেরিঘাট শুরু হওয়ার পর থেকে বিকল হয়ে পড়ে আছে। বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙনের কবলে পড়ে ৫নং ফেরিঘাটের অর্ধেক অংশ নদীগর্ভে চলে যায়। সেই থেকে বন্ধ রয়েছে দৌলতদিয়া ৭নং ফেরিঘাট, যা আজ পর্যন্ত মেরামত করা হয়নি। শুকনো মৌসুম শুরু হওয়ার কারণে ৬নং ফেরিঘাট বিকল হয়ে পড়ে আছে। ৩ ও ৪নং ফেরিঘাট জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। শুধু ৭নং ফেরিঘাট দিয়ে যানবাহন স্বাভাবিকভাবে নদী পারাপার হচ্ছে।
এদিকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে সাত কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিআইডব্লিউটিসি নির্মাণাধীন ‘ওয়েট স্কেল মেশিন’। এই মেশিনও বন্ধ রয়েছে গত দুইদিন ধরে। অনুমানের ওপর নির্ভর করে মালবাহী ট্রাকের সিরিয়াল কোটেন দেওয়া হয়।
ট্রাকশ্রমিক সংগঠনের নেতা আতিয়ার রহমান জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ‘দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া’ নৌরুট রয়েছে অবহেলায়। দৌলতদিয়া পাড়ের সাতটি ঘাটের মধ্যে চারটি ঘাট দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে বিকল।
ওয়েট স্কেল থাকে মাসের বেশির ভাগ সময় বিকল। তিনি বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে সেবার মান উন্নয়ন হলে অবশ্যই যানবাহন বৃদ্ধি পাবে। কারণ, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে চিরচেনা যানজট ও দুর্ভোগ নেই। সুতরাং সুবিধা পেলে যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা এই নৌরুট ব্যবহার করে নদী পারাপার হবে।
এ সময় রেজাউল ফকীর জানান, পদ্মা সেতু শুরু হওয়ার পর থেকে এই নৌরুটে যানবাহন কমে গেছে। তবে সেবার মান বৃদ্ধি করলে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের জৌলুস ফিরে আসবে। এ সময় একাধিক ট্রাকচালক বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটের যানজটের দুর্ভোগ কমেছে। তবে, অতিরিক্ত টাকা নেওয়া বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন অজুহাতে নেওয়া হয় অতিরিক্ত টাকা। তবে সেবার মান বৃদ্ধি পায়নি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে। এই নৌরুটের জৌলুস ফিরে আনতে হলে অবশ্যই সেবার মান উন্নয়ন করতে হবে। কারণে-অকারণে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া বন্ধ করতে হবে।
ঘাটসংশ্লিষ্ট জিয়া নামের এক ব্যক্তি বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে আগের মতো জৌলুস নেই। যানবাহন কমে গেছে ৬০/৭০ শতাংশ। আগের মতো গাড়ি আসে না। ঘাটের উভয় পাশ দিয়ে অবস্থিত শত শত দোকানগুলো
বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ঘাটের জৌলুস ফিরে পেতে হলে বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে। লোকাল যাত্রীদের দুর্ভোগ বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) সালাহ উদ্দিন জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে এখন কোনো সমস্যা নেই। যানবাহনগুলো এসেই সহজে ফেরি পারাপার হতে পারে।
তবে মাঝে মধ্যে ঘন কুয়াশার কারণে এই নৌরুটে ফেরি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। তা ছাড়া কেনো সমস্যা নেই। বিকল ঘাটগুলোর কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দৌলতদিয়া পাড়ে প্রয়োজনীয় ঘাট ও ফেরি রয়েছে। যে কারণে যাত্রী ও চালকদের সেবা দিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ খালেদ নেওয়াজ জানান, পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু করার পর থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ৬০/৬৫ শতাংশ যানবাহন কমে গেছে। এই যানবাহনগুলো পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করে। যে কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের গুরুত্ব অনেকটা কমে গেছে। এই নৌরুটে রয়েছে অসংখ্য ফেরি। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে যে সকল যানবাহন আসে, সেগুলো সহজে নদী পার হয়ে গৌন্তব্যে যেতে পারে।