ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

ঐতিহ্যবাহী মোরগ লড়াই

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস

প্রকাশিত: ২১:৪১, ২৯ অক্টোবর ২০২২

ঐতিহ্যবাহী মোরগ লড়াই

যদুনাথ মজুমদারের স্মরণ উৎসব উপলক্ষে মোরগ লড়াই

যশোর টাউন হল ময়দানের মাঠে হেমন্তের মিষ্টি রোদের বিকেল। একদল উৎসুক জনতা দাঁড়িয়ে আছেন মাঠে। দাগ কাটা বৃত্তের মাঝে মুখোমুখি দুটি বিশাল আকৃতির মোরগ। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের ইশারা পেতেই পরস্পরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল যুদ্ধংদেহী মোরগ দুটি। শুরু হলো তুমুল লড়াই। প্রায় দুই ফুট উচ্চতার মোরগটি তার মোটা দুটি পা দিয়ে প্রতিপক্ষ  মোরগটিকে সজোরে আঘাত করছে।

এসব মোরগের পায়ের  পেছনের একটি নখ ভীষণ ধারালো আর সুচাল থাকে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে একটি মোরগ ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ল, যেন লড়বার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ঐতিহ্যবাহী মোরগ লড়াইয়ের এ রকম দৃশ্য দেখল যশোরবাসী।
যশোর ইনস্টিটিউটের প্রাণপুরুষ রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের স্মরণোৎসবে কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেছে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের। শনিবার বিকেলে ছিল মোরগের লড়াই। আর এ লড়াই দেখতে টাউন হল ময়দানে জড়ো হয়েছিল শত শত মানুষ।
এসব যোদ্ধা মোরগের পায়ের পেছনের দিকের বড় নখকে ‘কাটা’ বলা হয়। তবে, খেলার নিয়ম অনুযায়ী এই নখ কিছুটা ছোট করে কেটে শক্ত কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা হয়। লড়াইয়ের মাঝের বিরতিতে মোরগের মাথা, গলা, ঘাড়ে ইত্যাদি জায়গা রক্তাক্ত হয়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মোট ১০টি লড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উভয় দল কমপক্ষে ১০টি যোদ্ধা মোরগকে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত রাখে। ১০টি ম্যাচের জন্য ১০টি এবং লড়াইয়ের পূর্বে কোনো আহত মোরগের বদলি যোদ্ধা হিসেবে আরও দুটি মোরগ রাখা হয়।
১০টি খেলার জন্য সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ভেটখালী থেকে লোক এসেছিল। তারা এনেছিল মোরগ। তাদের একজন রমিজ উদ্দিন বলেন, আমরা প্রতি বছর ভেটখালীতে মোরগের লড়াইয়ের আয়োজন করি। ফলে আমরা এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মোরগ পালন করি। দেশের নানা প্রান্তে খেলা হলে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমরা এই খেলাকে ধরে রেখেছি।

আমাদের ভালো লেগেছে-এত মানুষ আমাদের মোরগের এই খেলা উপভোগ করেছে। ৫টি মোরগের মালিক আব্দুর রহিম জানান, আমাদের মোরগ গুলোর দাম ৩ হাজার ৫শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা। এগুলোকে নিয়মিত ধান, ছোলা, বিভিন্ন বাদাম, গম, ভুট্টার গুঁড়া ইত্যাদি খেতে দেই। কিন্তু লড়াইয়ের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে  মোরগের প্রতি বিশেষ যতœ নিতে হয়। এ সময় উচ্চ ক্যালরির আমিষ জাতীয় খাবার দেয়া হয়। তালিকায় থাকে ডিম, মাছ, মাংসের মতো খাদ্য।

প্রশিক্ষণ এবং লড়াইয়ের সময় মোরগগুলোর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য দশ মিনিট অন্তর পানি দিয়ে শরীর মুছে দেয়া হয়। যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু বলেন, আমাদের দেশে গ্রামীণ লোকজ খেলা হিসেবে বিভিন্ন খেলার প্রচলন ছিল। কাবাডি, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগ লড়াই ইত্যাদি খেলাগুলো তখন গ্রাম-গঞ্জে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে।

সাধারণত চৈত্রের ফসল কাটার ক্লান্তি এবং নতুন ফসল ঘরে ওঠানোর আনন্দে এসব খেলাধুলা একটি ভিন্নমাত্রা যোগ করত। মুরুব্বিদের কাছে প্রায়ই যে হারানো ঐতিহ্যের ফিরিস্তি শোনা যায়, এই মোরগ লড়াই ছিল সেই ঐতিহ্যেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ঐতিহ্য ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য এই খেলার আয়োজন করা হয়েছে।

×