ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে কৃষকদের হাপিত্যেশ

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট 

প্রকাশিত: ২১:২৩, ২৬ অক্টোবর ২০২২

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে কৃষকদের হাপিত্যেশ

ক্ষতিগ্রস্ত গাছপালা ও বাড়িঘর

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনাবৃষ্টির কারণে এ মৌসুমে আমন ধানের চাষ হয়েছে প্রায় দু’মাস পরে। এরমধ্যে অতিমূল্যে বীজতলা ও মজুর সংগ্রহ করে আমন চাষ করেছিলেন প্রায় ৮০ ভাগ কৃষক। 
আশা ছিল শেষ সময়ে হলেও তারা ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পাবেন। কিন্তু ভরা আমাবশ্যার গোনে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে অধিকাংশ কৃষকের সে স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কচুয়ার গোপালকাঠি এলাকার আশরাফ আলী, সদরের কালাম শেখ বলেন, ৫-৬’শ টাকার বীজতলা তিন সাড়ে তিন হাজার টাকায় শেষ সময়ে জোড়াড় করে আমনের চারা রোপন করেছিলাম। তা এখন পানির নিচে।

বনগ্রাম ইউপির ঝান্টিপুর গ্রামের বৃদ্ধ কৃষক নলিনী বঞ্জন মিস্ত্রী জানান, আমাদের ধানের চারা, বেগুন, কপি, শাখ-সবজি সব ক্ষেতে পানি প্রায় ২ ফুট পানিতে তলিয়ে অধিকাংশ গাছ মরে গেছে। 

অতিকষ্টে ৩০-৪০ হাজার টাকা থরচ করে মৌসুমের ষেশ সময়ে আমন চারা রোপন করেছিলাম। গাছ ভালই হয়েছিল। কিন্তু গত ২ দিনের ঝড়ো বাতাসের সাথে বৃষ্টি আর প্রবল পানির চাপে প্রায় সব নষ্ট হয়ে গেছে।

কচুয়ার ভান্ডরখোলা গ্রামের সুজন বৈরাগী বলেন, ১০ কাটা জমির পানের বরজ শেষ। পেঁপে গাছ, কলা গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। ঘেরের মাছ সব বের হয়ে গেছে। অনুরূপ হাপিত্যেশ করছেন জেলার অধিকাংশ কৃষক।

তবে বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ আজিজুর রহমান জেলার জানান, সিত্রাংয়ের প্রভাবে এ জেলায় কমপক্ষে ১ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমির ধান ও সবজি প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ৮৫০ হেক্টর র্পোা আমনের জমি, ৩৭৫ হেক্টর শীতকালিন সবজি, ১৭ হেক্টর পান বরাজ, ১১০ হেক্টর কলা, ২০ হেক্টর মরিচ, ৭ হেক্টর পেঁপে ও ৬ হেক্টর বিভিন্ন শীতকালিন সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি দ্রুত অসরণ না হলে কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরও বাড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ.এস.এম রাসেল বলেন, বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার ৭৫০টি মৎস্য ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এতে মাছ চাষীদের প্রায় ৮৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। চাষীদের দ্রুত মৎস্য ঘের সংস্কার করে পুনারায় মাছ চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিন জানান, সড়কের ওপর গাছ ভেঙ্গে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তা সড়ক বিভাগ ও ফায়ার বিগেডের যৌথ উদ্যোগে মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে। 

সিত্রাংয়ের আঘাতে ও অতি জোয়ারে এ জেলার বিভিন্ন সড়কের কমপক্ষে ১৫ কি:মি: সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে প্রাথমিক সংস্কার কাজ মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে।” দীর্ঘ মেয়াদী রক্ষণা-বেক্ষনের জন্য বরাদ্দ চেয়ে পত্র প্রেরণ করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে, বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলার অধিকাংশ গ্রাম গত ৬০ ঘন্টা ধরে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারি মহা-ব্যবস্থাপক (এজিএম) শরীফ আল মামুন ও সদর ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি: বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হক জানিয়েছেন, দ্রুত লাইন মেরামত করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে যথাসাধ্য চেষ্টা চলছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান জানান, ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ২হাজার ১৪০ টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কৃষি ও মৎস্য খাতেও বেশকিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে যথাসময়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার গবাদীপশুসহ মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার কারণে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। 

তবে বৃষ্টির সাথে ঝড়ো বাতাসে এবং অতিজোয়ারের পানিতে জেলার নিম্নাঞ্চলের কিছু এলাকায় এখনও জলাবদ্ধতা রয়েছে। যা নিষ্কাশনে কাজ চলছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক ও বাঁধ দ্রুত মেরামতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে।’   
 

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×