
সোমবার টানা তিন ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিতে জলমগ্ন নগরী
হাজার কোটি টাকার কাজ করেও সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হয়নি। কয়েক দফায় এক যুগে এত বড় অঙ্কের বরাদ্দ দিয়ে কি কাজ হলো এমন প্রশ্ন ভুক্তভোগী নগরবাসীর। জলের সমস্যা নিরসনে বরাদ্দকৃত সেইসব টাকা জলেই গেল কিনা, এ বিষয়টি ভাবাচ্ছে নগরবাসীকে।
সোমবার টানা তিন ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয় সিলেট। সড়ক উপচে পানি ঢুকে পড়ে মানুষের বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। চরম বিপাকে পড়েন নগরবাসী। জলাবদ্ধতার কারণে বাতিল হয়ে যায় ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের ক্লাস-পরীক্ষা। আবহাওয়া অফিস জানায়, সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টার মধ্যে ১০৮.২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ভারি বৃষ্টির ফলে নগরীর জিন্দাবাজার, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, রাজারগলি, উপশহর, যতরপুর, ছড়ারপাড়, ভাতালিয়া, জল্লারপাড়, তালতলা, চৌহাট্টা, সুবিদবাজার, ঘাসিটুলা, শামীমাবাদ, শিবগঞ্জ, নয়াবাজার, খাসদবির, মেডিক্যাল রোড, মজুমদারিসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক তলিয়ে যায়। অনেক এলাকায় সড়কে হাঁটুপানি জমে। সড়ক উপচে পানি ঢুকে পড়ে মানুষের বাসা-বাড়িতে। অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ঢুকে পড়ে পানি।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরীতে ১১টি ছড়া রয়েছে। এসব ছড়ার ১৬টি শাখা ছড়াও খাল, আছে। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত এসকল ছড়া ও খাল নালা শহর ভেতর দিয়ে এসব ছড়া-খাল সুরমা নদীতে গিয়ে মিশেছে। ছড়া-খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১০ কিলোমিটার। এর বাইরে নালা-নর্দমা আছে ৯৭০ কিলোমিটার। নালা-নর্দমায় প্রায় সাড়ে ৬শ’ কিলোমিটার পাকা ড্রেন আছে।
সিসিকের প্রকৌশল শাখা সূত্র জানায়, বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মেয়র থাকাবস্থায় ২০০৯ সালে জলাবদ্ধতা নিরসনে ছড়া-খাল খনন ও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে ১১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। ২০১২ সালে ২৭টি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন নির্মাণে ব্যয় করা হয় ৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে সিসিক মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী।
ওই বছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন খাতে ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ৭৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ২০১৫ সালে ১১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। ২০১৬ থেকে ২০১৯ অবধি ২৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। ২০১৯ সালে ‘সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দ আসে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটি গ্রহণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; যা বাস্তবায়ন করছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক)।
এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যয় করা হয় ২৬৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৯৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৯৮ কোটি ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় হওয়ার কথা।
প্রকল্পটির আওতায় অন্যান্য কাজের সঙ্গে ৩২৭ কিলোমিটার ড্রেন ও ৮ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। আরসিসি রাস্তা, আরসিসি ড্রেন ও আরসিসি ড্রেনসহ ফুটপাথ নির্মাণ খাতে প্রকল্পটির সিংহভাগ বরাদ্দ ব্যয় হওয়ার কথা।
তবে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ এই প্রকল্পটির কাজ এখনও শেষ হয়নি এবং চলমান আছে বলে জানিয়েছেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ওই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতিতে ব্যয় হবে।
তবে আমরা এখন অবধি প্রায় ৩০০ কোটি টাকার মতো পেয়েছি। সে টাকায় কিছু কাজ হয়েছে, কিছু কাজ চলমান আছে।’ এদিকে জলাবদ্ধতাসহ অপরিকল্পিত উন্নয়ন নিয়ে অভিযোগ করলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোঃ জাকির হোসেন সোমবার সকালে এক ঘণ্টা বৃষ্টির পানিতে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক, বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এলাকা হাঁটু পানির ওপরে তলিয়ে যায়। সিলেটে বৃষ্টি হয় এটা ঐতিহাসিক ভাবে সত্য।
কিন্তু ঘণ্টাখানিক বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট জলে ডুবে যাবে, মানুষের ঘর বাড়িতে পানি ঢুকবে এটা একেবারে নতুন ঘটনা। সম্প্রতি দেখা যায় অল্প বৃষ্টিতেই জনগণ সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়ে। মহানগর আওয়ামী লীগ অচিরেই রাস্তা-ঘাট, জলবদ্ধতা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ নাগরিক সকল সমস্যার সমাধানের জোর দাবি জানাচ্ছে। তা না হলে অতীতের মতোই মহানগর আওয়ামী লীগ নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদমুখর হয়ে কর্মসূচী প্রণয়নে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, নগরবাসীর সত্যিকার জনসেবা প্রাপ্তির প্রশ্নে কোন ছাড় হবে না।