ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

নেত্রকোনার গ্রামের বাড়িতে সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ১৯:১১, ১৯ মার্চ ২০২২

নেত্রকোনার গ্রামের বাড়িতে সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীনের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা ॥ নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পাইকুরা ইউনিয়নের পেমই গ্রামে শনিবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের সময় সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় পেমই ছাড়াও কেন্দুয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার লোক অংশগ্রহণ করেন। এর আগে বিকাল তিনটায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে সাবেক রাষ্টপতির মরদেহ কেন্দুয়া উপজেলা সদরের আদমপুর এলাকার হেলিপ্যাডে আনা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক জিয়া আহমেদ সুমন এবং পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী ছাড়াও কেন্দুয়া উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সাবেক রাষ্ট্রপতির মরদেহ গ্রহণ করেন। এরপর স্বাস্থ্য বিভাগের একটি এ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহটি সাত কিলোমিটার দূরের পেমই গ্রামে সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়িতে নেয়া হয়। সেখানে আগে থেকেই জড়ো হয়েছিলেন অন্তত তিন-চার হাজার মানুষ। এ্যাম্বুলেন্স থেকে বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটের সময় মরদেহের কফিনটি তার গ্রামের বাড়ির সামনে নামানো হয়। এরপর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক জিয়া আহমেদ সুমন, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী, কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মঈনউদ্দিন খন্দকার, কেন্দুয়া পৌরসভার মেয়র আসাদুল হক ভূঁইয়াসহ এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে জেলা পুলিশের একটি দল সাবেক রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদর্শণ করেন। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে মুফতি শহিদুল ইসলামের পরিচালনায় ওই বাড়িতেই (সাবেক রাষ্টপ্রতির) অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জানাজার নামাজ। নামাজের আগে সাবেক রাষ্ট্রপতির ছোট ছেলে সোহেল আহমেদ তার বাবার জন্য এলাকাবাসীর দোয়া প্রার্থনা করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘বাবা সারাজীবন সাদামাটা জীবনযাপন করেছেন। তাঁর কোনরকম উচ্চাকাক্সক্ষা ছিল না। নীতি-আদর্শের বাইরে তিনি কোনোকিছু করেননি। তিনি আমাদেরকেও সে শিক্ষাই দিয়ে গেছেন। দোয়া করবেন যাতে আমরাও বাবার আদর্শকে ধারণ করেই চলতে পারি।’ সোহেল আরও বলেন, ‘বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল একবার গ্রামের বাড়িতে আসার। কিন্তু আমরা তাঁর শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পারিনি।’ সোহেল আহমেদ ছাড়াও তার স্ত্রী আমিনা ইশরাত ও তাদের ছেলে এজাজ আহমেদ মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। জানাজার পর আবার একই এ্যাম্বুলেন্সে করে সাবেক রাষ্ট্রপতির মরদেহটি কেন্দুয়া সদরের আদমপুর এলাকার হেলিপ্যাডে নেয়া হয়। পরে তা হেলিকপ্টারে করে আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। তার ছেলে সোহেল আহমেদ জানান, সাবেক রাষ্ট্রপতির মরদেহটি প্রথমে তাদের গুলশানের নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। পরে রাতে তা সিএমএইচের হিমাগাওে রাখা হবে। রবিবার সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজার পর বনানীর কবরস্থানে দাফন করা হবে। সাহাবুদ্দীন আহমেদের ছোটভাই প্রয়াত মনিরুদ্দিনের ছেলে সোহরাব উদ্দিন জানান, তিনি সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। ওই সময় তিনি তার বাড়ির সামনে পেমই পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এরপর প্রধান বিচারপতি ও পরে রাষ্টপ্রতি হওয়ার পর তিনি আর কখনও বাড়িতে আসেননি। সোহরাব উদ্দিন আরও জানান, সাহাবুদ্দীন আহমেদের গ্রামের বাড়িতে দুটি টিনশেড ঘর রয়েছে। ওই ঘর দুটি তিনি নিজের বেতনের টাকায় নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে ঘরটিতে সোহরাব উদ্দিন তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। এছাড়াও সাহাবুদ্দীনের গ্রামের বাড়িতে মিজানুর রহমান, খলিলুর রহমান, জসীম উদ্দিন ও জামাল উদ্দিন নামে আরও চার ভাতিজা বসবাস করেন পেমই গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক খোরশেদ আলী জানান, সাহাবুদ্দীন সাহেব বাড়িতে এসেও খুব সাধারণভাবে চলাফেরা করতেন। তাকে দেখে কখনও মনে হতো না তিনি এতবড় মানুষ ছিলেন। সাধারণ পোশাক পরিচ্ছেদ পরেই তিনি সবার সঙ্গে মিশতেন, ক্ষেত-খলা দেখতেন। বাল্যবেলার বন্ধুদের খোঁজখবর নিতেন। কেউ তার সাহায্য চাইলে তিনি নৈতিকভাবে যদি সম্ভব হতো তবেই করতেন। কোনরূপ অন্যায় আবদার গ্রহণ করতেন না। তাকে নিয়ে আমরা সবসময় গর্ব করি। খোরশেদ আলী বলেন, ‘সাহাবুদ্দীন সাহেব বলতেন আমি সারা বাংলাদেশের রাষ্টপ্রতি। কোনো নির্দিষ্ট এলাকার নই। তাই রাষ্ট্রের সামর্থ্য অনুযায়ী সারা দেশের মানুষের কথাই আমাকে ভাবতে হবে।’
×