
নিজস্ব সংবাদদাতা, ভৈরব ॥ ভৈরব-আশুগঞ্জে মেঘনা সেতু পারাপারে চলাচলরত বিআরটিসি বাসে চরম যাত্রী হয়রানী চলছে। বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যাত্রীদের সাথে অসদাচরণ, অতিরিক্ত মালামাল ঠাসার অভিযোগ উঠেছে এই পরিবহন সংস্থার বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় এ রুটে চলাচলকৃত বাসে আশুগঞ্জ ও ভৈরবের যাত্রীদের উঠে দেওয়া হয় না অন্য কোন গণপরিবহন। ১কিমি সেতু পারাপারে নির্ধারিত ভাড়া ১২টাকা ৭৬ পয়সা হলেও নেয়া হচ্ছে ২০ টাকা করে।
জানা গেছে,ঢাকা-সিলেট মহা সড়কের ভৈরব-আশুগঞ্জ মেঘনা সেতুর উপর দিয়ে সিএনজি চলাচল বন্ধ করে দিলে একমাত্র চলাচলরত পরিবহন রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) দুতলা বাস সার্ভিস চালু হয়। ভৈরব-আশুগঞ্জ বাসির কথা বিবেচনা করে গেল ৫ বছর পূর্বে সড়ক পরিবহনের তৎকালিন সচিব ও ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সহযোগিতায় ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য মেঘনা নদীর সড়ক সেতু পারাপারে বিআরটিসি দু’তলা বাস সার্ভিস চালু করা হয়। করোনার আগ পর্যন্ত সার্ভিসটি ভাল থাকলেও এখন বাসগুলো নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না। তারা নিজেদের মতো করে ভাড়া আদায় করছেন। মাত্র ১ কিলোমিটার যানজট মুক্ত সড়কের মেঘনা সেতু পারাপারে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছেন ২০ টাকা। অথচ সরকারি সার্কুলার আছে ভাড়া ১২ টাকা ৭৬ পয়সা।
যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমাফিক ভাড়া আদায় করতে এ রুটে অন্য কোন গণপরিবহনে যাত্রীদের উঠে দেয়া হয় না। অনেক সময় অন্য বাসে যাত্রীরা উঠতে চাইলে তাদের বিআরটিসির চালক,সুপারভাইজার ও হেলপাররা যাত্রীদের নাজেহাল করেন বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন। বাস চলাচলে কোন ইজারাদার নাই। বিআরটিসির বাস চালক প্রতি টিপে ১২ শত টাকা নরসিংদীর ডিপো ম্যানেজারকে দিয়ে চালক ও সুপারভাইজাররাই নিয়ন্ত্রণ করেন।
সেতু পারাপারের যাত্রীদের সাথে অসদাচরণ করার অভিযোগ রয়েছে এই সংস্থার বিরুদ্ধে। এসব অনিয়ম সবই ডিপো কর্তৃপক্ষ জানলেও টিপ প্রতি অতিরিক্ত ২শত টাকা চালকের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের কারনে তারা কোন ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ আছে। ডিপো ম্যানেজার আজিজুল হকের বিরুদ্ধে রয়েছে নানান অভিযোগ। তিনি নরসিংদীর ডিপোতে আছেন প্রায় ৩ বছর। এ তিন বছরে তিনি ইজারাদার,চালক ও সুপারভাইজারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে কয়েক কোটি টাকা বানিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনা। প্রতিবাদ করলেই অনত্র বদলী করে দেয়া হয়।
আশুগঞ্জ এলাকার যাত্রী আইয়ুব হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ভৈরব থেকে আশুগঞ্জে বিআরটিসি বাসে যেতে হলে অতিরিক্ত ভাড়ার পাশা পাশি সময় অপচয় হয়। তারা বলে ১৫ মিনিট পর পর গাড়ি ছাড়বে। কিন্ত গাড়ি ২০মিনিট পর ইস্টার্ড দিয়ে নানা কৌশলে পৌনে ১ ঘন্টায় আশুগঞ্জ কিংবা ভৈরব চলাচল করে। এতে সময় অপচয় হয়। ভৈরব থেকে আশুগঞ্জ ভাড়া সরকারি ভাবে ১২ টাকা ৭৬ পয়সা হলেও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।
ভৈরব বাসস্টেন্ড এলাকার বাসিন্দা মমিন মিয়া বলেন, মেঘনা নদীর উপর সেতু করতে ভৈরব-আশুগঞ্জবাসী জমি দিয়েছে।কিন্তু এখন দুই পারের মানুষই নানা ভোগান্তিতে রয়েছে। তিনি ভৈরব-আশুগঞ্জের সেতু পারাপারে লেগুনা সাভির্স চালু করার দাবি জানান।
দিনের পর দিন বিআরটিসি বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে কিন্তু বাসে যাত্রীও উঠানো হচ্ছে অতিরিক্ত। যাত্রীরা কেউ অতিরিক্ত ভাড়ার ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে বাস কাউন্টারের লোকজন তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও মারধর করেন। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে বিআরটিসি বাস ডিপো ব্যবস্থাপকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
নরসিংদী বিআরটিসি বাস ডিপোর ব্যবস্থাপক আজিজুল হক বলেন, বিআরটিসিতে যাত্রী হয়রানী ও অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হলে কোন যাত্রী অভিযোগ করলে আমরা সাথে সাথে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি।