ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

মাঠের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে খেলা

প্রকাশিত: ২০:৩২, ২৯ মে ২০২১

মাঠের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে খেলা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে শতবর্ষী গাছের অভাব নেই। খেলার জন্য গাছের ছায়াতলে রয়েছে রূপসী আঙ্গিনা। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে রেলের জায়গার ওপর এই আঙ্গিনার নাম শহীদ শাহজাহান মাঠ। ১৯৭১ সালে পাক হানাদারদের হাতে কাঁঠালবাগান জল্লাদখানা প্রকাশ পাহাড়তলীর বধ্যভূমিতে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় জনকল্যাণ কর্মী মোহাম্মদ শাহজাহানকে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর তার নামের ওপর এর নামকরণ করা হয় শহীদ শাহজাহান মাঠ। কিন্তু রেলের স্বত্বাধিকারে থাকা এই মাঠে এখন বলতে গেলে অত্র এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকার খেলাপ্রেমীরা ছুটে আসেন। মনোরম ও প্রাকৃতিক অবয়বে গড়া পাহাড়তলী এলাকা। নান্দনিক পাহাড়ের উঁচু-নিচু আর সমতলে রয়েছে এ এলাকাটি। শতবর্ষী গাছের ছায়ায় অনেকটা নিবিড় পরিবেশে শিশু-কিশোর ও তরুণ সকলেরই অবস্থান একটি মাঠকে ঘিরে। দর্শক সারিতে যারা রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই পথচারী। মাঠের ব্যাপ্তি অনেক বেশি হওয়ায় একসঙ্গে অনেকেই খেলতে পারে। ছোট ছোট টিমে গড়ে ওঠা শিশু ও তরুণদের বিভিন্ন ইভেন্ট। খেলতে হবে। তাই সবাই যেন একসঙ্গে নেমে গেছে মাঠে। বাধাও নেই কারও। এছাড়াও মাঠের দুদিক পাহাড়ে ঘেরা, আরেক দিকে রয়েছে রেলের বিভাগীয় প্রকৌশলীর অফিস কার্যালয়, অপরদিকে সুবিশাল রাস্তা যা চট্টগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছেছে। খেলতে আসা অনেকেই অভিযোগ করেছেন, প্রায় ৭/৮ একর জায়গার ওপর মাঠটি থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণ নেই। অথচ সকাল থেকে এ মাঠে আশপাশের কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা দলছুট হয়ে আনন্দে মেতে উঠে ফুটবল কিংবা ক্রিকেটে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল না হতেই ছুটে আসে ইউএসটিসিসহ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরই মাঝে পাড়ার শিশু কিশোররাও ছুটে আসে নানা খেলার পসরা নিয়ে। এদিকে, মাঠের দুপাশ দিয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে পাদদেশে রাস্তা নেমে গেছে। মাঠ থেকে সুউচ্চে পাহাড়ের ওপর কয়েক কর্মকর্তার আবাসস্থল রয়েছে। রেলওয়ে অফিসারদের একটি আবাসিক এলাকাও রয়েছে। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে চলে যাওয়া রাস্তা গিয়ে ঠেকেছে রেল কর্মকর্তাদের এ আবাসিক এলাকায়। যা অফিসার্স কলোনি নামে খ্যাত। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশের আচ্ছাদনে থাকা এ মাঠকে ঘিরে রয়েছে কত ইতিহাস। বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর এ মাঠে তাদের আয়োজনে খেলার ব্যবস্থা করেন। আবার কিছু প্রসাধনী কোম্পানি মাঠে বড় স্ক্রিনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে তুলে ধরেন তাদের প্রোডাক্ট। এছাড়াও গত কয়েকমাস আগেও মাঠটি ব্যবহার হয়েছে রাতের আঁধারে প্রশিক্ষণার্থী গাড়ি চালকদের প্রশিক্ষণে। চট্টগ্রামে খেলার মাঠের সংখ্যা খুবই কম। তবে ইচ্ছে আছে খেলার মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন ক্লাব এমনকি রেলে কর্মরতদেরও। কিন্তু মাঠের অভাবে খেলতে হচ্ছে গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে পাঁচ মিশালি খেলা। একই মাঠে এ ধরনের চিত্র খুব কমই দেখা যায়। কেউবা খেলছে ফুটবল, আবার কেউবা ক্রিকেট। জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেকেই নেমেছে কাবাডিতে। ১০ থেকে ১২টি গ্রুপে ভাগ হয়ে একই মাঠে খেলায় মত্ত দেড় শতাধিক খেলাপ্রেমী। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর শহীদ শাহজাহান মাঠের এ দৃশ্য বিশেষ করে শুক্রবারেই বেশি চোখে পড়ে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা জড়ো হয়ে এলাকাভিত্তিক দল গঠনের মধ্য দিয়ে প্রায় ৭ একর মাঠে খেলাধুলা করে। রেলের সম্পত্তি হওয়ায় অনেক দূর-দূরান্ত থেকে খেলতে আসে অনেকেই। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিসির দেশী-বিদেশী শিক্ষার্থী ছাড়াও আশপাশে থাকা পাহাড়তলী রেলওয়ে হাই স্কুল, রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেন, সেন্ট জেভিায়ার্স স্কুল, পাহাড়তলী কলেজ ছাড়াও বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও জড়ো হয় এই আঙ্গিনায়। এছাড়াও রেলের বিভাগীয় পর্যায়ের খেলাও চলে এ মাঠে। বিশেষ করে শুক্রবার ছুটির দিনে সবচেয়ে বেশি জমে উঠে এ মাঠ। চারদিক থেকে ছুটে আসা খেলাপ্রেমীরা যেন মাঠে নেমে দিশাহারা হয়ে যায়। কারণ বিভিন্ন দিক থেকে ফুটবল, টেনিস বল, ভলিবল, ক্রিকেট বল গিয়ে পড়ে বিভিন্ন খেলার মাঝখানে। ফলে দিগি¦দিক হারিয়ে ফেলে খেলোয়াড়রা। তবুও যেন খেলার আনন্দ ভাগাভাগি করার এক অনুকূল পরিবেশ রয়েছে এখানে। ফলে কোন ধরনের বাগবিতন্ডা নেই আগতদের মাঝে। দর্শক সারিতেও একই অবস্থা। ২০১৫ সালে মাঠের চারদিকে স্টেডিয়ামের ন্যায় কয়েকটি ধাপে দর্শক সারি করে দেয়া হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় রেলের পক্ষ থেকে।
×