স্টাফ রিপোর্টার ॥ দখল-দূষণের কবলে পড়েছে কর্ণফুলী নদী। দুই পাড়ে গড়ে ওঠা কল-কারখানা এবং নগরের ময়লা-আবর্জনা দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে।
কর্ণফুলীতে এখন শুধু বর্জ্যই মিলবে। আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে এই নদী। দেখা গেছে, নদীতে সরাসরি ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। পানি শুকিয়ে পড়ে গেছে চর, দূষণে নিজের সৌন্দর্য হারিয়েছে চির যৌবনা কর্ণফুলী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস এ্যান্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক অহিদুল আলম এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, কর্ণফুলী নদীতে পড়া বর্জ্য, জাহাজ থেকে নিঃসরিত তেল ও শিল্প-কারখানার বর্জ্য নিঃসরণের কারণে কর্ণফুলীর পানিতে সালমোনেলা, বিব্রিও, ইকোলাই, স্ট্রেপটোকক্ষাই, স্টেফাইলোকক্ষাইয়ের মতো মারাত্মক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বেড়ে গেছে।
কর্ণফুলী নদীর পানিতে ক্ষতিকারক বিব্রিও নামে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ ৬৭ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর সালমোনেল ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ ৩২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এসব ব্যাকটেরিয়ার কারণে নদীর পানি ব্যবহারকারী পরিবারগুলো পানিবাহিত ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিসসহ নানা ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু বছরের পর বছর দূষণ হলেও পরিবেশ অধিদফতরের এ ব্যাপারে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই। যদিও তারা দাবি করছে, নদী দূষণ রোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, নদী দূষণকারী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ট্রাকে করে নদীর আশপাশে খোলা জায়গায় ময়লা ফেলা হচ্ছে। এছাড়াও কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানার বর্জ্যও নদীতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। কর্ণফুলী উপজেলার একাধিক খালের পানির উপরের অংশে তেলের স্তরও দেখা যায়।
পরিবেশবাদীদের মতে, কর্ণফুলীকে রক্ষায় দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ না নিলে অচিরেই এ নদী তার অস্তিত্ব হারাবে।
কর্ণফুলী নদী বাঁচাতে চূড়ান্ত করা ১০ বছরের মহাপরিকল্পনারও বাস্তবায়ন নেই। নগরের বর্জ্য এবং কলকারখানার দূষিত পানি যাতে নদীতে মিশতে না পারে, সে বিষয়েও আছে নির্দেশনা। এছাড়া অবৈধ দখলে থাকা ভূমি কিভাবে উদ্ধার করা হবে, উদ্ধারকৃত ভূমি কিভাবে সংরক্ষণ করা হবে, এসব বিষয়েরও দিকনির্দেশনা আছে এ মহাপরিকল্পনায়।