
বাংলাদেশের উত্তরের সর্ব উত্তরের জেলা হিমালয় কন্যা খ্যাত পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এখন একটি কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান, চারদেশের (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান) সংযোগস্থল এবং দিন দিন বাড়তে থাকা বাণিজ্যিক গতিশীলতা সব মিলিয়ে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর হয়ে উঠতে পারে আঞ্চলিক অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
ভৌগোলিক গুরুত্ব:
বাংলাবান্ধা বাংলাদেশের একমাত্র স্থলবন্দর যেখান থেকে সরাসরি নেপাল, ভারত এবং ভুটানের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া সম্ভব। এটি ‘সাউথ এশিয়ান গেটওয়ে’ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে খুব সহজেই ত্রিপক্ষীয় ও চতুর্দেশীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।
বাংলাবান্ধা থেকে গুরুত্বপূর্ণ শহর ও স্থানগুলোর দূরত্ব (প্রায়):
শিলিগুড়ি: ১৬ কিমি
দার্জিলিং: ৭৭ কিমি
গ্যাংটক: ১৩৩ কিমি
সিকিম: ১৫৪ কিমি
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু: ৪৯৪ কিমি
ভুটানের রাজধানী থিম্পু: ২৮৬ কিমি।
এই তুলনামূলক স্বল্প দূরত্বসমূহের কারণে বাংলাবান্ধা হয়ে উঠতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য ও যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু।
বর্তমান অবস্থা:
বর্তমানে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে সীমিত পরিসরে ভারত ও নেপালের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি চলছে। মূলত কোল, পাথর, শাকসবজি ও ফলমূল আদান-প্রদান হচ্ছে। যাত্রাপথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি (ভারত) করিডোর। তবে অবকাঠামোগত ঘাটতি, কাস্টমস প্রক্রিয়ার ধীরগতি, অব্যবস্থাপনা ও সীমান্ত রাজনীতির কারণে এই বন্দরের পূর্ণ সম্ভাবনা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
সম্ভাবনার দিগন্ত:
নেপাল-ভুটান ট্রানজিট হাব: বাংলাবান্ধা হতে পারে নেপাল ও ভুটানের জন্য সবচেয়ে কাছের ও কার্যকর সমুদ্রবন্দর পথ। এতে করে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের ব্যবহার বাড়বে এবং রাজস্ব আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
উত্তরবঙ্গের শিল্পায়ন: স্থলবন্দর ঘিরে গড়ে উঠতে পারে শিল্প এলাকা, কোল্ড স্টোরেজ, গুদামঘর ও পরিবহন অবকাঠামো। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি আসবে।
ট্যুরিজম ও সংস্কৃতি বিনিময়: পঞ্চগড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও হিমালয় দর্শনের কারণে বাংলাবান্ধা হয়ে উঠতে পারে আন্তর্জাতিক পর্যটন গেটওয়ে। নেপাল-ভুটানের পর্যটকদের জন্য এটি হতে পারে বাংলাদেশে প্রবেশের প্রধান পথ।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়:
অবকাঠামোগত উন্নয়ন: বন্দরের রাস্তাঘাট, কাস্টমস ভবন, স্ক্যানার, ট্রাক টার্মিনাল প্রভৃতি দ্রুত উন্নয়ন করা প্রয়োজন।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক: ভারতের সঙ্গে কার্যকর কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে ট্রানজিট সুবিধা ও পণ্য চলাচলের অনুমতি সম্প্রসারণ দরকার।
বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহ:
বন্দর এলাকার উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাবান্ধা কেবল একটি স্থলবন্দর নয় এটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সম্ভাবনার প্রতীক। যথাযথ পরিকল্পনা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও কাঠামোগত বিনিয়োগের মাধ্যমে এই বন্দরের পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে পঞ্চগড়সহ গোটা উত্তরবঙ্গ হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের নতুন অর্থনৈতিক প্রাণকেন্দ্র।
আঁখি