শুধু ভোর নয়, দিনজুড়ে পাখির কিচিরমিচির ডাক আর ফুলের গন্ধে ভরপুর অপরূপ এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিনোদন পার্ক চুনারুঘাট উপজেলাধীন ‘গ্রীনল্যান্ড পার্ক’। যে পার্কে কেউ একবার পা রাখলে বারবারই ঘুরে আসতে ইচ্ছে হয়। জেলা শহর হবিগঞ্জ থেকে উপজেলা চুনারুঘাটের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার আর চুনারুঘাট পৌর শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে রাণীগাঁওয়ের পারকুল পাহাড়ের প্রায় সোয়া ২শ’ একর জমিতে গড়ে ওঠা সবুজ-শ্যামল ছায়া ঘেরা অবস্থায় এই পার্কটিতে উন্নত মানের অন্তত ৬শ’ লিচু, ৪/৫ শ’ লেবু, কাঁঠাল-আকাশী-বেলজিয়ামসহ আরও প্রায় এক হাজার নানা প্রজাতির গাছ-গাছালি ছাড়াও রয়েছে ১৫টি গরু এবং ছাগল, হাঁস-মুরগি, ১৫টি ভেড়া ও অসংখ্য কবুতরসহ ঝুলন্ত ব্রিজ নিয়ে ২টি লেক। আছে বিভিন্ন জাতের মাছ। যা অনেক সময় টিকেট কেটে বড়শি দিয়ে ধরারও ব্যবস্থা রয়েছে। টিকিটের মূল্যও একেবারে কম। কর্তৃপক্ষ সময় বা টাকার ব্যাপারে কারও ওপর কোন চাপ দেয় না। সাধারণ নিয়ম বা যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তাই মেনে নেন। রয়েছে দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ সাধারণ মানুষের জন্য দোতলা ভবন। এতে রয়েছে সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত একাধিক ছোট-বড় কক্ষ। রয়েছে পুকুর ও সাঁতার কাটার মতো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। পার্কটিতে রয়েছে আগত অতিথিদের জন্য নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রয়েছে শিশুদের জন্য দোলনা-ঘোড়াও। এতে চড়ে শিশুরা আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। রয়েছে পুরো পার্কে ১৫টি রং-বেরঙের ছাতা ও বসার ব্যবস্থা। যেখানে বসে গল্প করে সময় কাটানো সম্ভব। নৌকা ভ্রমণেরও ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটক বা সাধারণ মানুষ যারাই এই পার্কে আসুক না কেন তারা নিজেরাই রান্না করে তৃপ্তি মিটিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন। পার্কটি পাহাড়ে অবস্থিত হওয়ায় আশপাশে ঘুরেও পর্যটকরা নানা আকর্ষণীয় স্পট উপভোগ করতে পারছেন। গান-বাজনা আর প্রতিযোগিতা-পুরস্কার বিতরণেও মাতিয়ে তুলতে পারবেন বিনোদনপ্রেমী বন্ধুরা। ফলে বিভিন্ন আকর্ষণীয় আইটেম দিয়ে বর্তমানে সাজানো পার্কটি ক্রমেই যেন সাধারণ মানুষের জন্য বিনোদনের অন্যতম স্পট হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। শুধু বিদেশী-দেশী বা বড় লোকদের জন্য নয়, মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তরাও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সময় কাটনোর এক অনন্য স্থান হতে পারে হবিগঞ্জের এই ‘গ্রীনল্যান্ড পার্ক’। কথা হয় গ্রিনল্যান্ড পার্কে বেড়াতে আসা শায়েস্তাগঞ্জের সাংবাদিক কাউছার চৌধুরী মামুন, জনৈক সজল ও রত্নার সঙ্গে। তারা একা বা পরিবার নিয়ে এই পার্কে ঘুরতে এসেছেন। সজল-রত্না বলেন, সন্তানদের নিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী পার্কে ঘুরে বেশ মজা পাচ্ছেন। সন্তানরাও পার্কের বিনোদন কেন্দ্রে খেলা করে আনন্দিত। সাংবাদিক মামুন, সমুজ আলী, আফসার আহমেদসহ এই পার্কে আসা অনেক বিনোদনপ্রেমী বললেন, অন্য পার্কগুলোর চেয়ে এই গ্রীনল্যান্ড পার্কটি ব্যতিক্রম। এই সুযোগে অনেকেই পার্শ্ববর্তী রেমা, কালেঙ্গা, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান বিনোদন পার্কও একটু ঘুরে দেখার সুযোগ করে নেন। তারা জানান, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হবিগঞ্জের এই এলাকাকে পর্যটকসহ সাধারণ মানুষের জন্য প্রাকৃতিক ও আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় একটি বৃহৎ ডিজিটাল বিনোদন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
জানা গেছে, সাধারণ মানুষকে বিনোদনের সুযোগ করে দেয়ার অভিপ্রায় নিয়েই সম্পূর্ণ নিজের ক্ষুদ্র প্রয়াস হিসেবে লন্ডন প্রবাসী সৈয়দ এমদাদুল হক সোহাগ এই পার্কটি গড়ে তুলেছেন। তবে তার পরিচয়ে এই পার্কটি পরিচিত নয় বরং তারই ছোট ভাই ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের পার্ক বলেই সাধারণ মানুষের কাছে সমাদৃত। আসছে শীত মৌসুমের আগেই এই পার্কটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে সম্প্রতি এই পার্কটির পুরো দায়িত্ব দেয়া হয়েছে উদীয়মান এক তরুণ প্রকৃতিপ্রেমী সাংবাদিক কাজী মাহমুদুল হক সুজনকে। তিনি পরিচালক হিসেবে এই দায়িত্ব পেয়েই শুরু করেছেন নিরলস পরিশ্রম। শুরু করেছেন আরও সৌর্ন্দয বর্ধনের কাজ। খুব সহসাই এই পার্কটিতে চিড়িয়াখানাসহ উন্নতমানের রেস্টুরেন্ট নির্মিত হচ্ছে। পরিচালক সুজন জানান, দেশী-বিদেশী শুধু নয়, সাধারণ মানুষের সঙ্গেও শিশুদের একটা বড় অংশ এই পার্কে আসে। তাদের কথা বিবেচনায় নিয়েই ওই দুটি কাজ হাতে নেয়া হচ্ছে। ফলে শিশুরা তাদের মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে আরও সুযোগ পাবে।
-রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন, হবিগঞ্জ থেকে