ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

রাজসিক বিদায় লাম-এ্যালানসোর

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৪ মে ২০১৭

রাজসিক বিদায় লাম-এ্যালানসোর

আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন। চলতি মৌসুমই (২০১৬-১৭) শেষবার খেলবেন, শেষ করবেন পেশাদার ক্যারিয়ার। অবশেষে সেটাই হয়েছে। ২০ মে জার্মান বুন্দেসলীগায় বেয়ার্ন মিউনিখের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেছেন ফিলিপ লাম ও জাবি এ্যালানসো। এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে বুটজোড়া পাকাপাকিভাবে তুলে রাখলেন এই দুই তারকা। শেষ ম্যাচে জিতে শেষটাও রাঙিয়ে গেলেন লাম-এ্যালানসো। স্বাভাবিকভাবই মিউনিখের এ্যালিয়েঞ্জ এ্যারানায় বাভারিয়ানদের জন্য ছিল আবেগের সন্ধ্যা। শিরোপা আগেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় এই ম্যাচটি ছিল তাদের জন্য শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। তবে সব ছাপিয়ে লাম ও এ্যালানসোর বিদায়টাই মুখ্য হয়ে ওঠে। কারণ এ দুজন এ রাতে শেষবারের মতো পেশাদার ফুটবল খেলেছেন। বয়স যে খুব বেশি তা নয়, মাত্র ৩৩ বছর। যে পারফরমেন্স তাতে হয়ত ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপও খেলতে পারতেন। কিন্তু নিজেকে কি দুর্দান্তভাবেই না নিয়ন্ত্রণ করেছেন লাম! ২০১৪ সালে জার্মানিকে দুই যুগ পর বিশ্বকাপ জেতানো এই অধিনায়ক ওই বছরের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন। অনেকটা আচমকাই জাতীয় দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তারকা এই ফুলব্যাক। তখন বলেছিলেন চালিয়ে যাবেন ক্লাব ফুটবল। কথা অনুযায়ী এতদিন প্রাণের ক্লাব বেয়ার্ন মিউনিখের হয়ে খেলা চালিয়ে গেছেন। তবে এবার ক্লাবের মায়াও ছিন্ন করলেন জার্মান তারকা। জাতীয় দল থেকে অবসরের তিন বছর পর এবার সব ধরনের ফুটবল থেকে অবসর নিলেন লাম। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে অসংখ্য সাফল্য পেয়েছেন তিনি। অবশ্য পুরো ক্যারিয়ারে লাম খুব একটা সহজ পথ পাড়ি দিতে পারেননি। প্রায় সময়ই তাকে ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। তবে পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বেয়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখে শেষটাও এখান থেকেই করলেন। এই ক্লাবের হয়ে তিনি খেলেছেন পাঁচ শতাধিক ম্যাচ। মাঝে অবশ্য দুই মৌসুমের জন্য ধারে স্টুটগার্টে খেলেছেন। ২০০৪ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়ার পর জার্মানির হয়ে লাম খেলেছেন ১১৩ মাচ। ১৯৯৫ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি বেয়ার্নে যোগ দেন। ওই সময় নিজেকে এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে পরিচিত করেছিলেন। লাম নিজেকে সেরা প্রমাণে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। মাঠে তার ওপর পুরো দলের আস্থা আনতে সক্ষম হয়েছেন। আর সে কারণেই জার্মান গণমাধ্যমে তাকে ‘মি. ১০০ পারসেন্ট’ নামে আখ্যায়িত করতেও ভুল করেনি। জার্মানির হয়ে লাম পাঁচটি গোল করেছেন। কিন্তু ২০০৮ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালে তুরস্কের বিপক্ষে ৯০ মিনিটে তার দেয়া গোলে জার্মানদের জয়টিকে এখনও সবচেয়ে স্মরণীয় ম্যাচ হিসেবে ধরে রেখেছেন লাম। বেয়ার্নের হয়ে লাম সাতটি বুন্দেসলীগা শিরোপা, ৬টি জার্মান কাপ, তিনটি জার্মান সুপার কাপ ও একটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, ইউরোপিয়ান সুপার লীগ ও ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছেন। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ডাচ মিডফিল্ডার মার্ক ভ্যান বোমেলের কাছ থেকে তিনি বেয়ার্নের অধিনায়কত্ব লাভ করেন। জার্মানির হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার দিকে দিয়ে চতুর্থ স্থানে লাম। তিনি খেলেছেন ১১৩টি ম্যাচ। দেশটির হয়ে সর্বোচ্চ ১৫০টি ম্যাচ খেলেছেন লোথার ম্যাথাউস। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিরোসøাভ ক্লোসা এখন পর্যন্ত খেলেছেন ১৩৭টি ম্যাচ। আর তৃতীয় স্থানে থাকা মিডফিল্ডার লুকাস পোডলস্কি খেলেচেন ১১৬টি ম্যাচ। অবসরের পর জীবনটা বেশ কঠিন হবে বলেই মনে করছেন তারকা মিডফিল্ডার জাভি এ্যালোনসো। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে লিভারপুল, রিয়াল মাদ্রিদ ও বেয়ার্ন মিউনিখের হয়ে দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও পাঁচটি লীগ শিরোপা ছাড়াও স্পেনের হয়ে বিশ^কাপ ও দুটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের অভিজ্ঞতা আছে তার। অবসরের পর এখন অনেকটাই অবসর জীবনযাপন করবেন ৩৫ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার। এ্যালোনসো বলেন, ফুটবলার হিসেবে এই সময়ে এসে অবসরের সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমি দারুণ সন্তুষ্ট। এখানে অনেক বেশি আবেগ জড়িত। এই ম্যাচটিতেও সবকিছুই জড়িয়ে ছিল। আবেগ, স্মৃতি, কষ্টÑ সবকিছুই। কিন্তু একই সঙ্গে নিজের সন্তুষ্টি নিয়ে বিদায় নিচ্ছি, এটাই বড় কথা। আমি জানি ফুটবলকে অনেক মিস করব। কারণ এটা আমার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ ছিল। এই শূন্যতা পূরণ অনেক কঠিন হয়ে যাবে। তার পরও জীবন ঠিকই চলবে, এটা আমার জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ, এখন এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এই অনুভূতিটা দারুণ আনন্দের। এই সব স্মৃতি আমার মনে অনেক দিন থাকবে। আমার মনে আছে আমি বাবার সঙ্গে ফুটবল খেলেছি, আমার বাচ্চারাও আমার সঙ্গে খেলার স্মৃতি মনে রাখবে। বিদায় বেলায় বেয়ার্ন মিউনিখের প্রতি শুভ কামনা জানান তিনি। বুন্দেসলীগার শিরোপা যেন নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে বেয়ার্ন মিউনিখ। গত চার বছরের মতো এবারও ট্রফি জিতে সে স্বাক্ষর রেখেছে বাভারিয়ানরা। গত এপ্রিলের শেষ দিকে এ্যাওয়ে ম্যাচে স্বাগতিক উলফসবার্গকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ২০১৬-১৭ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হয় বেয়ার্ন মিউনিখ। চ্যাম্পিয়নদের মৌসুমের শেষটাও হয়েছে বিজয়ীর বেশে। ২০ মে লীগের শেষ রাউন্ডে ফ্রেইবার্গকে উড়িয়ে দিয়েছে কার্লো আনচেলোত্তির দল। ঘরের মাঠ মিউনিখের এ্যালিয়াঞ্জ এ্যারানায় ফ্রেইবার্গকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে বেয়ার্ন। ক্লাবের ইতিহাসে এটা তাদের ২৭তম লীগ শিরোপা। এই জয়ের মধ্য দিয়ে শিরোপা উৎসব করেছে জার্মান জায়ান্টরা। আর ঘরের মাঠে অপরাজিত থাকার রেকর্ডও ধরে রেখেছে। জার্মান কাপে হারের কারণে অভিষেকে পেপ গার্ডিওলার ডাবল শিরোপা জয়ের কৃতিত্বকে স্পর্শ করতে পারেননি বেয়ার্ন বস আনচেলোত্তি। তবে বুন্দেসলীগা জিতে তিনি ইতিহাস গড়েছেন। এই নিয়ে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচটি লীগে পাঁচটি ভিন্ন ক্লাবের হয়ে টুর্নামেন্ট জিতলেন। যার মধ্যে লীগ শিরোপা চারটি। কেবল লা লীগা জেতা হয়নি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। বিশ্বফুটবলের কোন কোচ এই রেকর্ডের ধারেকাছেও নেই। জোশে মরিনহোর আছে তিনটি দেশের শিরোপা জেতার রেকর্ড। পেপ গার্ডিওলার দুই দেশের। সেখানে আনচেলোত্তি জিতেছেন ইতালির কোপা ইতালিয়া ও সিরিএ, এসি মিলানের হয়ে, ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লীগ ও এফএ কাপ, চেলসির হয়ে। ফ্রান্সের লীগ ওয়ান, পিএসজির হয়ে। স্পেনের কোপা ডেল রে, রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। সর্বশেষ বেয়ার্নের হয়ে বুন্দেসলীগা। বেয়ার্ন কোচ হিসেবে এটাই আনচেলোত্তির প্রথম মৌসুম। আর অভিষেকেই ক্লাবকে লীগ শিরোপা উপহার দেয়ায় দারুণ খুশি এই ইতালিয়ান বলেন, আমি দারুণ খুশি। এখানে আমার অভিজ্ঞতাও দারুণ। এই অসাধারণ ক্লাবটিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই শিরোপাটা আমাদের প্রাপ্য ছিল।
×