
এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ দেখতে মঙ্গলবার ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে জনসমুদ্র
গায়ে বাংলাদেশের জার্সি। অনেকের জার্সিতে হামজা, ফাহমিদুল, সামিত, জামালদের নাম। হাতে গর্বের পতাকা। কারও গালে আবার লাল-সবুজের রঙিন আল্পনা। বাংলাদেশের ফুটবলে এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। খেলা শুরু সন্ধ্যা সাতটায়। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে বিকেল পাঁচটার মধ্যে স্টেডিয়ামে প্রবেশের সর্বশেষ সময় বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। গেট খোলার কথা ছিল দুপুর দুইটায়। অথচ সকাল গড়িয়ে সূর্য মাথার ওপর আসতেই স্টেডিয়ামের বাইরে ভিড় জমতে শুরু করে। খ-, খ- হয়ে আসতে থাকেন দর্শক।
লম্বা লাইনে থাকা দর্শকের ভেতর নেই ক্লান্তির বিন্দুমাত্র ছাপ। প্রিয় দলকে সমর্থন দিতে তাদের এত পরিশ্রম। টিকিট না পাওয়া অনেকেও অপেক্ষা করেন স্টেডিয়ামের বাইরে। উৎসবের রঙে রঙিন হওয়াতেই তাদের এই আনন্দ। মঙ্গলবার এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ শুরুর অনেক আগেই কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে মতিঝিলের জাতীয় স্টেডিয়াম। বল মাঠে গড়াতেই ঢেউ জাগে নবরুপে সজ্জিত স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। কিন্তু মাঠের ফুটবলে উপলক্ষটা রঙিন করে রাখতে পারেননি হামজা-সামিতরা, ভাল খেলেও হার ২-১ গোলে।
গ্যালারির উত্তাপ বাড়িয়ে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৪৫ মিনিটে সং উই ইয়ংয়ের গোলে এগিয়ে যায় সিঙ্গাপুর! হামজা ঠেকানো চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু পারেননি শেষ পর্যন্ত। হ্যারিসের ক্রস থেকে ডান পায়ের ভলিতে জাল কাঁপান সং। বিরতির পর ৫৮ মিনিটে ইখসান ফান্দির ব্যবধান দিগুন করে সিঙ্গাপুর। বক্সের বাইরে থেকে হামি শিয়াহিনের শট মিতুল মারমা ঠেকিয়ে দিলেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। বল চলে যায় সুযোগ সন্ধানী ইখসান ফান্দির দিকে। মোহাম্মদ হৃদয়ের পায়ের ফাঁক দিয়ে মাটি কামড়ানো শটে গোল করেন এই ফরোয়ার্ড। ৬৭ মিনিটে রাকিব হোসেনের গোলে ব্যবধান কমায় বাংলাদেশ।
হামজার থ্রু বল নিয়ে এগিয়ে যান বক্সের বাইরে থেকে, তাঁর দারুণ শট প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের নিচ দিয়ে চলে যায় সিঙ্গাপুরের জালে। ৭৪ মিনিটে হৃদয়কে উঠিয়ে আল আমিন ও শাকিলের জায়গায় মোরসালিন শেখকে নামানো হয়। রক্ষণে তিন জনকে রেখে আক্রমণাত্মক খেলার ছক করেন কাবরেরা। আক্রমনের ধারও বাড়ে। ৮৩ মিনিটে দুই মিনিটের ব্যবধানে টানা চারটি কর্নার পায় বাংলাদেশ। প্রথমটিতে আল আমিনের হেড খুঁজে পায়নি জাল। দ্বিতীয়টি ফিরিয়ে দেন সিঙ্গাপুর গোলরক্ষক। তৃতীয় কর্নারে তপুর হেড ক্লিয়ার করেন হামি শিয়াহিন। প্রতিপক্ষকে ভাল চাপিয়েও বাকি অংশে আর গোল পাওয়া হয়নি। আফসোস বাড়িয়ে ২-১এ হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে হামজা-তপুদের।
বাফুফে আগেই এই ম্যাচের জন্য ১৮৩০০ টিকিট ছেড়েছিল। কিন্তু টিকিট বিক্রি করা ওয়েবসাইটে মুহূর্তের মধ্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ে দর্শকরা। ফলে মুহূর্তের মধ্যে টিকিট সোল্ড আউট হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল স্টেডিয়ামের ৩ ও ৪ নম্বর গেটের সামনে। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে মূল সড়কে দাঁড়িয়ে ‘বাংলাদেশ ফুটবল আলট্রাস’ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখে। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর ম্যাচ ঘিরে আলোচিত দেশের ফুটবলের এই সমর্থক সংগঠনটি। তারা বেশ কয়েকদিন বাফুফে ভবনের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করেছে টিকিটের দাবিতে। সারা বছর ফুটবলকে সমর্থন জুগিয়ে যাওয়া এই সংগঠনটি প্রত্যাশা অনুযায়ী টিকিট পায়নি বাফুফের কাছ থেকে। ১ নম্বর গেটে ছিল আল্ট্রাস সমর্থকদের বড় অংশ।
শুরুতে তাদের অবস্থানের বাধায় পড়েন বাফুফের একাধিক কর্মকর্তার গাড়ি। পরে তাদের একপর্যায়ে শান্তিপূর্ণভাবেই প্রবেশ করানো হয়। ভুটান ম্যাচের মতো এদিনও বিশৃঙ্খলার কেন্দ্রে ছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) সংলগ্ন ৪ নম্বর গেট। গেটের বাইরে কালোবাজারি টিকেট নেওয়ার প্রচেষ্টা থেকেই প্রথম গোলযোগের শুরু। সমর্থকদের মাঝে শুরু হওয়া উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যরা। এই সময়েই টিকিট চেকিংয়ের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে মূল ফটকে চলে আসেন ভক্তরা। একপর্যায়ে ৪ নম্বর গেট খুলে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। মুহূর্তের মাঝেই শত শত আল্ট্রাস দর্শক বিভিন্ন গেটে জড়ো হন। এ সময় তাদের মুখে ‘নো আল্ট্রাস, নো ফুটবল’, ‘উই আর আল্ট্রাস’Ñ এসব স্লোগান শুরু হয়।
একপর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করেন। এদিকে, প্রায় একই সময়ে জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেও বেড়েছে দর্শক সমাগম। স্টেডিয়ামের গেটের বিশৃঙ্খলার মতো গ্যালারিতেও ঘটেছে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। জাতীয় দলের নারী ফুটবলাররা ও সাবেক জাতীয় ফুটবলারদের অনেকে মিডিয়া বক্সের নিচের গ্যালারিতে বসেছিলেন।