ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

১১ বছর পর ফাইনালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ০০:৩৬, ৯ মে ২০২৪

১১ বছর পর ফাইনালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ড

ফরাসি প্রতিপক্ষ পিএসজিকে হারিয়ে জয় উদ্যাপন করছেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ফুটবলাররা

দীর্ঘ ১১ বছর পর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠেছে জার্মান জায়ান্ট বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। সেমিফাইনালে ফরাসি পরাশক্তি প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইনকে (পিএসজি) হারিয়ে এ কৃতিত্ব দেখিয়েছে দ্য ব্লাক অ্যান্ড ইয়েলোরা। ক্লাব প্রতিষ্ঠার ১১৪ বছরের ইতিহাসে এবার নিয়ে তৃতীয়বার ফাইনালের রঙিন মঞ্চে উঠেছে ডর্টমুন্ড।

গত ১ মে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে জার্মানির সিগনাল ইদুনা পার্কে ডর্টমুন্ডের কাছে ১-০ গোলে হার মানে পিএসজি। মঙ্গলবার রাতে শেষ চারের দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠ প্যারিসের পার্ক দ্য প্রিন্সেস স্টেডিয়ামে মাঠে নামে প্যারিসের পরাশক্তিরা। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, প্রথম লেগে হারলেও ঘরের মাঠে ঘুরে দাঁড়াবেন এমবাপে-মারকুইনহোসরা।

কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্যারিসেও পিএসজিকে ১-০ গোলে পরাজিত করে ডর্টমুন্ড। ম্যাচের ৫০ মিনিটে কর্নার থেকে আসা বলে হেডে বিজয়ী দলের হয়ে জয়সূচক গোলটি করেন জার্মান সেন্টার ব্যাক ম্যাটস হামেলস। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে পিএসজিকে ২-০ গোলে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ডর্টমুন্ড। 

ডর্টমুন্ড সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল খেলেছে ২০১৩ সালে। সেবার লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে হেরেছিল স্বদেশী ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখের কাছে। ১১ বছর পর আরেকবার অল-জার্মান ফাইনালের সম্ভাবনা আছে। বুধবার রাতে যদি রিয়ালকে হারিয়ে বায়ার্ন ফাইনালে উঠে থাকে তাহলে সেই ওয়েম্বলিতেই আরেকটি অল-জার্মান ফাইনাল হবে। সেটা হয়েছে কিনা ইতোমধ্যে অবশ্য জানা হয়ে গেছে পাঠকদের।

ইউরোপ সেরার আসরে ডর্টমুন্ড নিজেদের একমাত্র শিরোপা জয় করেছে ১৯৯৭ সালে। সেবার নিজ দেশের মিউনিখে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তারা হারিয়েছিল ইতালিয়ান জায়ান্ট জুভেন্টাসকে। এবার দ্বিতীয় শিরোপার লক্ষ্যে আগামী ১ জুন ওয়েম্বলিতে বায়ার্ন অথবা রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে ডর্টমুন্ড। অথচ ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় এবারের মৌসুমটা ভালো কাটেনি তাদের। জার্মান কাপে পথচলা শেষ হয় শেষ ষোলোয়। দুই রাউন্ড বাকি থাকতে বুন্দেসলিগার টেবিলে তারা আছে পাঁচ নম্বরে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও ডর্টমুন্ডের শুরুটা ভালো ছিল না। গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচে পিএসজির মাঠে হেরেছিল ২-০ গোলে। সেই মাঠেই এবার দারুণ জয়ে শিরোপার শেষ ধাপে পৌঁছেছে কোচ এডিন টারজিকের দল। অন্যদিকে মৌসুমে এরই মধ্যে দুটি শিরোপা জয় করা পিএসজি চার ট্রফির আশায় ছিল। একটির আশা শেষ হয়ে গেল ফাইনালের আগেই। দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপ সেরার ফাইনালে খেলার আশা পূরণ হলো না তাদের। প্যারিসের দলটির জন্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আক্ষেপ হয়েই থাকল।

এ নিয়ে তৃতীয়বার প্রতিযোগিতাটির সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিল পিএসজি। একবারই তারা ফাইনালে খেলতে পেরেছে। সেটা ২০২০ সালে। কিন্তু ফাইনালে হারতে হয়েছিল। এবার সেমিতে পিএসজিকে জেঁকে ধরে দুর্ভাগ্য। প্রথম লেগে ডর্টমুন্ডের মাঠে তাদের প্রচেষ্টা দুইবার পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। এবার প্যারিসে তো সেটাও ছাড়িয়ে যায়। এমবাপেদের চারটি প্রচেষ্টা পোস্টে লেগে নস্যাত হয়েছে। সবমিলিয়ে দুই লেগে পিএসজির ৬টি প্রচেষ্টা পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। এই দুর্ভাগ্য নিয়ে হা-পিত্যেশ করতে হচ্ছে কোচ লুইস এনরিকের দলকে। 
ম্যাচ শেষে ডর্টমুন্ড কোচ এডিন টারজিক বলেন, পুরো বিষয়টি বুঝতে আমার কিছুটা সময় লেগেছে। কিন্তু এখন আমরা শেষ কাজটুকু সম্পন্ন করতে চাই। যে কোনোভাবে হোক আমরা কাজটা সম্পন্ন করেছি। এখন লন্ডনে খেলতে যাচ্ছি। ডর্টমুন্ডের জন্য গল্পটা রূপকথার হলেও পিএসজির জন্য আরও একবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের হতাশা বাড়ল।

২০১১ সালে কাতারি মালিকের কাছে ক্লাবের দায়িত্ব যাওয়ার পর শুধু চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সাফল্যের জন্যই সব অর্থ ব্যয় করে চলেছে প্যারিসিয়ানরা। সেই সঙ্গে দলের তারকা কিলিয়ান এমবাপের জন্যও পিএসজির হয়ে এটাই শেষ সুযোগ ছিল। এবারের মৌসুমে পিএসজির সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পর ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সাত বছরের পিএসজি ক্যারিয়ারে ক্লাবকে সবচেয়ে বড় শিরোপা উপহার দিতে না পারা এমবাপের নিজের জন্যও এটি একটি বড় ব্যর্থতা।

পিএসজি অধিনায়ক মারকুইনহোস বলেন, আমরা ভালো খেলতে পারিনি। তারা দুই গোল দিয়েছে। একটি কর্নার থেকে, অন্যটি লম্বা পাস থেকে। বিপরীতে আমরা বেশি সুযোগ সৃষ্টি করেছি। তাদের থেকে অনেক বেশি। কিন্তু গোল করতে পারিনি। ব্যর্থতার দায় আমাদেরই।

×