
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে নিজেদের ৫ম ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার কাছে ১৪৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে। তবে এই হারের মাঝেও বাংলাদেশের সমার্থকরা আনন্দ খুঁজে নিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সেঞ্চুরিতে।
যখন ড্রেসিংরুমে আউট হয়ে ফিরে যাওয়ার মিছিলে বাংলাদেশ দলের ব্যাটাররা একে একে যোগ দিচ্ছিলেন, তখন অন্যপাশ সামলে দলকে সম্মানজনক একটা পথে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন রিয়াদ। তবে যারা বাংলাদেশ দলের খেলার নিয়মিত খোঁজ রাখেন তাঁদের কাছে এটা নতুন না। একারণেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ভক্তরা ভালোবেসে ডাকেন সাইলেন্ট কিলার, দুসঃময়ের কাণ্ডারি।
মাহমুদুল্লাহ সম্পর্কে একবার বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছিলেন, ''সব ব্যাটসম্যানেরই পছন্দের ব্যাটিং পজিশন আছে, যেখানে সে ব্যাট করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং পজিশন কখনই নির্দিষ্ট ছিল না। টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে যেখানে ব্যাট করতে বলত সে সেখানেই করত। লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে সে শুরু করেছিল, এখন সে ব্যাট করছে টপ অর্ডারে। তবে আমি বিশ্বাস করি, তার যদি নির্ধারিত কোনো ব্যাটিং পজিশন থাকত, তার গড় রান আরও ভালো হতো।'
তবে রিয়াদ থেকে যান আড়ালে, রিয়াদের পার্ফর্মেন্সগুলো চাপা পড়ে যায় ঝলমলে তারকার ভীড়ে। যেমন চাপা পড়েছে রিয়াদের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেই সেঞ্চুরিটা। যখন ৩৩ রানে চার উইকেট পড়ার পর সাকিবের সাথে তার গড়া ২২৪ রানের পার্টনারশিপ দলের জয়ে প্রভাব ফেলেছিলো, তবে ম্যাচটিতে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হন সাকিব আল হাসান। রিয়াদ হয়ে যান পার্শ্বনায়ক।
কয়জন মনে রেখেছে ২০১৫ বিশ্বকাপের ইংল্যান্ড বধের সেই মহাকাব্যিক ম্যাচটির কথা। যেখানে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে রিয়াদ খেলেন ১০৩ রানের অসাধারণ ইনিংস। রিয়াদের সেই সেঞ্চুরিটিই তখন ছিল বাংলাদেশি ব্যাটারদের মাঝে বিশ্বকাপে করা প্রথম শতক। এমনকি রিয়াদেরও প্রথম শতক ছিলো সেটি। অতীত মনে করলে নিদাহাস ট্রফিতে করা দুর্দান্ত ইনিংসসহ এমন আরও অনেক ইনিংস হয়ত চোখের সামনে ভেসে উঠবে।
মাহমুদউল্লাহর ওয়ানডে ক্যারিয়ারে শতক চারটি, সব কটিই আইসিসির টুর্নামেন্টে। একটি ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। গতকালের শতকসহ বাকি তিনটি বিশ্বকাপে। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে শতক করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
ইংরাজিতে একটা প্রবাদ আছে “AGING LIKE A FINE WINE”। বয়স বাড়ার সাথে সাথে অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকে। তবে বাংলাদেশ দল হয়তো এই প্রবাদটির কথা ভুলেই গিয়েছিলো। তাই তো বিশ্বকাপের আগে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে দল থেকে ছেটে ফেলার জন্য যা যা করার প্রয়োজন হয় সবই করা হয়েছিলো। ছিলেন না বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপের স্কোয়াডেও। বলা হচ্ছিলো রিয়াদ বুড়ো হয়ে গেছে, বয়স বেড়ে গেছে, ফ্লেক্সিবিলিটি কমে গেছে, ফিল্ডিংয়ে দৌড়াতে পারেন না। বিশ্বকাপেও থাকবেন কিনা এটা নিয়েও ছিলো বেশ বিতর্ক। এই তো কদিন আগেই রিয়াদের বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছিলেন, ‘রিয়াদ আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার অবশ্যই। বাংলাদেশ দলকে সে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে। কিন্তু যদি আমি সত্যি বলি, যেহেতু ও জাতীয় দলে নেই, আমি যেভাবে দেখছি, রিয়াদকে আমি বিশ্বকাপে দেখছি না। কারণ যদি তাকে বিশ্বকাপে দেখতাম এই সিরিজগুলোতে থাকতো।
অবশ্য সময়টাও মাহমুদুল্লাহর পক্ষে ছিলো না। ফিটনেস, ফর্মও তাঁর পক্ষে কথা বলছিলো না। বিশেষ করে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে যে পজিশনের খেলানোর কথা দল ভেবেছিলো অর্থাৎ নাম্বার ৭ সে পজিশনে দল চাচ্ছিলো এমন কোন খেলোয়াড়কে যে কিনা খুব দ্রুত রান তুলতে পারে। ঠিক এ জায়গাটাতেই রিয়াদ পিছিয়ে ছিলেন
তবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ফিরে এসেছেন, পরিশ্রম করে, নিজের উপর বিশ্বাস রাখলে যে চাইলেই ফিরে আসা যায়। সাইলেন্ট কিলার এটা প্রমাণ করেছেন। এখন পর্যন্ত মাহমুদউল্লাহই এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার। তিন ইনিংস খেলে তাঁর রানসংখ্যা ৪১*, ৪৬, ১১১। এছাড়াও যে দ্রুত রান তোলার কথা বলা হচ্ছিলো সেখানেও রিয়াদ আছেন এগিয়ে। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের।
ম্যাচ শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে রিয়াদের সেঞ্চুরির পেছনের রহস্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কোনো রহস্য নেই। আল্লাহর রহমতে হয়েছে। আমি চেষ্টা করেছি। এসময় দল থেকে বাদ পড়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি আপাতত কিছু বলতে চাই না। যদিও আমার অনেক কিছু বলার আছে, তবে এখন সঠিক সময় নয়।
হয়তো মাহমুদুল্লাহ জানাবেন, দর্শকরাও জানবে, কিভাবে ফিরে আসতে হয়। কিভাবে অনুপ্রেরণার প্রতীক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হয়। বাংলাদেশের মানুষ আছেন সে অপেক্ষায়।
তবে যারা বলেছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ চলে না......এই ইনিংসটি হয়তো তাঁদের কানে কানে বলে আসবে, হ্যা রিয়াদ চলে না দৌড়ায়।
এবি