ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় দিন শেষে ২৭৩ রানের লিড ইংল্যান্ডের হাতে আছে আরও ২ উইকেট

মুশফিকদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল ইংলিশরা

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৩ অক্টোবর ২০১৬

মুশফিকদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল ইংলিশরা

মিথুন আশরাফ ॥ সব দোষ তাহলে সাকিবের! দিনের দ্বিতীয় বল। নন স্ট্রাইকে একজন বোলার, শফিউল। যিনি আগেরদিন ‘নাইট ওয়াচম্যান’ হিসেবে ব্যাট করতে নামেন। অথচ কি ভুলটিই না করলেন সাকিব। মঈন আলীর ছোড়া ঘূর্ণি বলে ‘নির্বোধে’র মতো অহেতুক এগিয়ে গিয়ে মারতে গেলেন। বল ব্যাটেই লাগল না। স্ট্যাম্পিং হয়ে গেলেন। আর তাতে যেন বাংলাদেশের ভাল করার আশাও হতাশায় পরিণত হলো। সাকিব আউট হতেই মুহূর্তেই তাসের ঘরের মতো সব উইকেট টপাটপ পড়তে লাগল। প্রথম ইনিংসে ২৪৮ রানেই অলআউট হয়ে গেল বাংলাদেশ। আগেরদিনের সঙ্গে মাত্র ২৭ রান যোগ করতে পারল। প্রথম ইনিংসেই ৪৫ রানে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর বেন স্টোকসের ৮৫ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ২২৮ রান করল ইংল্যান্ড। তাতে ২৭৩ রানে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড। জয়ের ভিতও কি এরই মধ্যে গড়া হয়ে গেল না! হারের খপ্পরেই পড়ে গেল বাংলাদেশ। উইকেটের যে চরিত্র, তাতে রাজ্যের সবচেয়ে ‘বোকা’ মানুষটিও বুঝবে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম স্পিন স্বর্গ। তিনদিনে মোট ২৮টি উইকেট পড়ল। এরমধ্যে ক্যারিয়ারে ১৫০ উইকেট নেয়া সাকিব ৭টি, মেহেদী হাসান মিরাজ ৭টি, তাইজুল ইসলাম ৩টি, মঈন ৩টি, আদিল রশিদ ২টি ও গ্যারেথ ব্যাটি ১টি উইকেট শিকার করেন। এই স্পিন স্বর্গেই আবার বাংলাদেশ ধসে গেল স্টোকসের গতির ঝড়ে। দ্বিতীয় দিন ৫ উইকেটে ২২১ রান করেছিল বাংলাদেশ। ৭২ রানে পিছিয়ে ছিল। সাকিব ৩১ রানে অপরাজিত ছিলেন। মনে করা হচ্ছিল, লিডও নেবে বাংলাদেশ। কিন্তু তৃতীয়দিন আর ২৭ রান স্কোর বোর্ডে যোগ করতেই ৫ উইকেট হারিয়ে বসল। মাত্র ১২ ওভার খেলতে পারলেন সাকিব (৩১), শফিউল (২) ও অভিষিক্ত তিনজন মিরাজ (১), সাব্বির (১৯) ও রাব্বি (০)। তাইজুল ৩ রানে অপরাজিত থাকলেন। এই শেষ ৫ উইকেটের মধ্যে স্টোকসই ৩ উইকেট নিলেন। স্পিন স্বর্গে স্টোকস ঠিকই নিজের গতিতে মাত করলেন। তাতে ১ ঘণ্টার মধ্যেই যে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল, সেখানেই যেন ম্যাচের একটি চিত্রও ফুটে উঠল। এরপর কী হলো? বাংলাদেশও দুর্দান্তভাবে ম্যাচে ফিরল। ৬২ রানেই ইংল্যান্ডের ৫টি উইকেট তুলে নিল। সাকিব একাই ৩ উইকেট নিয়ে নিলেন। তাও আবার সকালের সেশনেই ২৮ রানে ৩ উইকেটের পতন ঘটল। এক সেশনেই দুই দলের মিলিয়ে ৮ উইকেট পড়ল। এরমধ্যে বাংলাদেশের ৫টি ও ইংল্যান্ডের ৩ উইকেটের পতন হলো। বাংলাদেশ যেন আবার আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে দিল। এক শ’ রানের মধ্যেই অলআউট করে দিতে পারে বাংলাদেশ? তাতে করেতো ‘জয়’ও মিলে যাবে! তাও আবার সেই জয়টি চতুর্থ দিনেই আসতে পারে! এমন সব আলোচনা যখন কল্পনার রাজ্যে খেলা করছে, তখন ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছেন স্টোকস আর বেয়ারস্টো। যেন তারা উল্টো বাংলাদেশের কল্পনা নিয়েই খেলা শুরু করে দেন। আউট হওয়ার কোন সম্ভাবনাতো দেখাই যায় না, উল্টো ‘ছক্কা-চার’ মারা শুরু করলেন। পুরোদমে ব্যাটিং ছন্দ পেয়ে গেলেন। দেখতে দেখতে ৫০ রান, ১০০ রান, ১৫০ রান ও ২০০ রানের লিডও হয়ে গেল। তখন সবার কল্পনা ও সব আশার স্বপ্ন ভেঙ্গে খানখান! যে উইকেট দেখা যাচ্ছে, তাতে মঈন, রশিদের মতো স্পিনাররাতো আছেনই, সঙ্গে গতির তাল মিললেতো বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ছারখার বানিয়ে দেবেন স্টুয়ার্ট ব্রড, ক্রিস ওকস ও স্টোকস। ইংল্যান্ড যখন ২০০ রানের লিড নিল, তখনই সবার কণ্ঠে বাংলাদেশ নিয়ে উল্টো সুর বাজতে শুরু করল। ইংল্যান্ড এক শ’ রানে অলআউট হলো না। উল্টো ২০০ রানের লিড হতেই, বাংলাদেশের হারের চিত্রই যেন সবার সামনে ধরা পড়ে গেল। এখন চারদিনে ম্যাচ শেষ যদি হয়, তাহলে বাংলাদেশের হার দিয়েই শেষ হওয়ার সম্ভাবনাই জোরালো হলো। আর না হয়, ম্যাচ গড়াবে পাঁচদিনে। তাতেও কী বাংলাদেশের হারের সম্ভাবনাই থাকছে না? ২৭৩ রানের লিড হয়ে গেছে। এই রানও যদি টার্গেট হয় তাহলেও কী পারবে হার এড়াতে বাংলাদেশ? প্রশ্নটি আসতেই সামনে কিছু স্মৃতিও ধরা পড়ল। কী সেই স্মৃতি? বাংলাদেশ যে এর আগে কখনই এত বড় টার্গেটে খেলতে নেমে ম্যাচ জিততে পারেনি। দুইবার টার্গেট অতিক্রম করে জিতেছে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে জিতেছে। আরেকবার ২০১৪ সালে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ১০১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে জিতেছে। এছাড়া ২৫০ রানের টার্গেট অতিক্রম করেও কোন জয় নেই বাংলাদেশের। তাতে বোঝাই যাচ্ছে, বিপদই ঘনিয়ে আসছে। সেই বিপদ আসলে বাংলাদেশের সামনে ঠেলে দিয়েছেন স্টোকস ও বেয়ারস্টো। দুইজন মিলে ষষ্ঠ উইকেটে ১২৭ রানের জুটি গড়েই আসল কাজের কাজটি করেছেন। ১৮৯ রানে গিয়ে বেয়ারস্টোকে (৪৭) সাজঘরে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙ্গেন রাব্বি। অভিষেক টেস্ট ম্যাচে প্রথম উইকেট নেন। এটি আবার চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ পেসারদের মধ্যে প্রথম উইকেট শিকারের ঘটনাও। বেয়ারস্টো আউট হলেও স্টোকস যে আউট হননি। সেটিই সবচেয়ে চিন্তার বিষয় ছিল। স্টোকস থাকা মানেই হচ্ছে, লিড আরও বড় হওয়া। অবশেষে আর ৮ রান যোগ হতেই স্টোকসে আউট করে দেন সাকিব। তবে মাঠ ছাড়ার আগে ১৫১ বলে যে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৫ রান করেন, সেখানেই বাংলাদেশের বারোটা বেজে যায়। খাদের কিনারা থেকে ইংল্যান্ডকে তো স্টোকসই বাঁচালেন। শুধু কি বাঁচালেন, বাংলাদেশের ইনিংসে ধস নামালেন। আবার ইংল্যান্ডের বিপত্তির সময় ব্যাট হাতেও হাল ধরলেন। তাতে করে বাংলাদেশতো হারের মুখেই পড়ে গেল। স্টোকস ১৯৭ রানে গিয়ে আউট হলেন। ততক্ষণে আড়াই শ’ রানের কাছাকাছি লিড নিয়ে নিল ইংল্যান্ড। এরপর রশিদকেও (৯) এলবিডাবলিউ করে ক্যারিয়ারে ১৫ বারের মত ৫ উইকেট শিকার করলেন ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসেই ১৫০ উইকেট শিকারের মাইলফলক ছোয়া সাকিব। মাইলফলক ঠিকই ছুলেন। কিন্তু তাতে কী লাভ হলো? ব্যাটিংয়েতো ডুবিয়েই দিলেন। শেষ পর্যন্ত ক্রিস ওকস ((১১*) ও স্টুয়ার্ট ব্রড (১০*) অপরাজিত থাকলেন। দলও ৮ উইকেটে ২৭৬ রান করল। ২৭৩ রানে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড। এই এগিয়ে থাকাতেইতো ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করে ফেলল ইংলিশরা। হার ঠেকানোই এখন বাংলাদেশের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠল। প্রথম ইনিংসে যে ছন্নছাড়া ব্যাটিং দেখা গেল, তাতে কী হার ঠেকানো সম্ভব? হারের খপ্পরেইতো পড়ে গেল বাংলাদেশ।
×