ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পরিদর্শন বাড়ানোর তাগিদ আইএমএফের

ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শন কমেছে ৪৭ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:১৯, ২ মে ২০২৪

ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শন কমেছে ৪৭ শতাংশ

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের অব্যবস্থাপনা ও উচ্চ খেলাপি ঋণসহ নানা অনিয়ম

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের অব্যবস্থাপনা ও উচ্চ খেলাপি ঋণসহ নানা অনিয়ম নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল। বৈঠকে ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঋণ কেলেঙ্কারি ঠেকাতে ব্যাংকগুলোতে পরিদর্শন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে তারা। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য ও এর ওপর করা পরিদর্শনের প্রতিবেদনগুলো গ্রাহকদের জন্য উন্মুক্ত করতেও পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে যোগ দেয়ার পর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শন কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।
জানা গেছে, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ঋণ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়ম শনাক্তকরণে কাজ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট (এফআইসিএসডি)। এ ছাড়া এফআইসিএসডি হল বাংলাদেশ ব্যাংকের একমাত্র ডিপার্টমেন্ট যেখানে গ্রাহকসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীও তাদের ব্যাংকিং লেনদেন সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ জানাতে পারেন।

গ্রাহকরা ই-মেইল, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট, ডাক এবং কুরিয়ার পরিষেবার মাধ্যমেও তাদের অভিযোগ দাখিল করতে পারেন এফআইসিএসডিতে। মূলত তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়ম চিহ্নিতকরণে বিশেষ পরিদর্শন করে থাকে এফআইসিএসডি। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রতিবেদন বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এফআইসিএসডির বিশেষ পরিদর্শন কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। এ ছাড়া গত ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে অভিযোগও এসেছে বেশি এবং সমাধান হয়েছে আগের তুলনায় কম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে এফআইসিএসডি কর্তৃক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট ১৭৯টি বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে ৯৪টি। সেই হিসাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম কম পরিচালিত হয়েছে ৮৫টি বা ৪৭ শতাংশ।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার যোগদানের পর থেকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিদর্শনের হার কমে আসছে। এমনকি বিভিন্ন গণমাধ্যমে কিছু ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের গণহারে নোটিস করার ঘটনাও ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ পরিদর্শন এখন আগের মতো হয় না।

যেসব অনিয়মের পেছনে প্রভাবশালীরা থাকে সেগুলো নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করা হয় না। আবার কিছু ঘটনা আছে যেগুলো চিহ্নিত করার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক। তিনি বলেন, ‘অনিয়মের সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকলে সেগুলো তদন্ত করা হয় না কিংবা ব্যবস্থা নেওয়া হয় না এমন অভিযোগ সত্য নয়।’ 
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে ১৮টি। আর আগের অর্থবছরে হয়েছিল ২১টি। বিশেষায়িত ব্যাংকে কোনো বিশেষ পরিদর্শন হয়নি। আগের অর্থবছরে হয়েছিল ১টি। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শন হয়েছে ৫০টি। আগের অর্থবছরে হয়েছিল ১১৪টি। ইসলামি শরিয়াহ্ ভিত্তিক ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শন হয়েছে ২১টি। আর আগের অর্থবছরে হয়েছিল ২৯টি।

বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকে বিশেষ পরিদর্শন হয়েছে ১টি। আর আগের অর্থবছরে হয়েছিল ২টি। আর সবচেয়ে বেশি অনিয়মে জর্জড়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ পরিদর্শন বেশি কমেছে। এগুলোতে বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে মাত্র ৪টি। আর আগের অর্থবছরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল ১২টি।

×