ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নানা আয়োজনে মহান মে দিবস পালিত

ন্যায্য মজুরি ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইন দাবি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪৪, ২ মে ২০২৪

ন্যায্য মজুরি ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইন দাবি

মহান মে দিবস উপলক্ষে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক র‌্যালি করে

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মহান মে দিবস পালিত হয়েছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘শ্রমিক মালিক গড়ব দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’।
১৮৮৬ সালের ১ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাদের ওই আত্মদানের মধ্য দিয়ে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে প্রতিবছর এ দিবসটি সারা বিশ্বে ‘মে ডে’ হিসেবে পালন করা হয়।
মে দিবস উপলক্ষে বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আলোচনা সভার আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন ও কেন্দ্রীয় তহবিল হতে দুস্থ শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তার চেক দেওয়া হয়।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মিছিল ও সমাবেশ করে একতা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ও সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু ও নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন ও ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টার।
একই স্থানে শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের নামে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে মিছিল করে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোট বাংলাদেশ। আট ঘণ্টা কর্মঘণ্টা, ন্যায্য মজুরি ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে মিছিল করে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট।
চট্টগ্রাম নগরের নিউমার্কেট এলাকায়ও সমাবেশ ও র‌্যালি করে বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোও রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে।
দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগও প্রতিবারের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। বুধবার বিকাল তিনটায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় শ্রমিক লীগের উদ্যোগে ‘শ্রমিক জনসভা’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।
মে দিবস উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। মে দিবসের অঙ্গীকার, রুখতে হবে স্বৈরাচার’ শীর্ষক এই সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির সহযোগী সংগঠনটি।
মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে র‌্যালি ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশন। বুধবার সকাল ১০টায় বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি ও সাধারণ সম্পাদক হারিক হোসেনের নেতৃত্বে র‌্যালি বের হয়। র‌্যালি শেষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বিড়ি শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, বঙ্গবন্ধুর আমলে বিড়ি শিল্পে কোনো শুল্ক ছিল না, তাই আগামী বাজেটে বিড়ির শুল্ক প্রত্যাহার, অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার এবং নি¤œস্তরের প্রতি প্যাকেট সিগারেটের মূল্য ৪৫ টাকা থেকে ৬৫ টাকা বৃদ্ধির দাবি জানান শ্রমিকরা।
বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হারিক হোসেনের সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি। এ সময় বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন, মো. আনোয়ার হোসেন, সহকারী সম্পাদক আবুল হাসনাত লাবলু, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের ইতিহাস আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাস। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধসহ সকল আন্দোলন-সংগ্রামে শ্রমিকরা অংশগ্রহণ করেছে। শ্রমিকেরাই এদেশের প্রাণশক্তি, শ্রমিকদের ঘামে গড়ে ওঠে অর্থনৈতিক ভিত। কিন্তু দেখা যায়, সকল সংকটে শ্রমিকরাই থাকে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ও বঞ্চিত, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। অসহায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন বেগবান করতে মহান মে দিবসের চেতনায় সকলকে উদ্বুদ্ধ থাকতে হবে। 
প্রতিবারের মতো যথারীতি সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ছিল নানা আয়োজন। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এ দিনটি গান, আবৃত্তি, আলোচনা ও পথনাটকসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।
দীর্ঘ ৪৩ বছরের ধারাবাহিকতায় নাট্যদল আরণ্যক দিনব্যাপী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে। গান, কবিতার পাশাপাশি মামুনুর রশীদের রচনা ও হাশিম মাসুদের নির্দেশনায় পথনাটক ‘নতুন ঘণ্টা’ প্রদর্শন করে সংগঠনটি। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়িত হয় আরণ্যকের নতুন প্রযোজনা ‘কম্পানি’। এ ছাড়া ‘পরিবেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ‘ মে দিবসের কাগজ’ এর নতুন সংখ্যা প্রকাশ করে আরণ্যক।
রায়েরবাজারের শহীদ বধ্যভূমি প্রাঙ্গণে ‘প্রতিবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ’র ব্যানারে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে অংশগ্রহণ করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।
বেইলি রোডের মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে ‘রাইজ অ্যান্ড শাইন’ নামে নাটক মঞ্চস্থ করে নাট্য সংগঠন বটতলা। জীবনযুদ্ধ আর সংসারের খাঁচায় আটক এক শ্রমজীবী নারীর গল্প নিয়ে রচিত নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন ম. সাঈদ।
মে দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে গণসঙ্গীত, নাটক ও আবৃত্তি পরিবেশনার আয়োজন করে স্রোত আবৃত্তি সংসদ। ‘ওড়াও ওড়াও লাল নিশান, দুলাও মোদের রক্ত পতাকা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

×