
ছবি: সংগৃহীত
মাত্র ১২৮ মেগাবাইট র্যাম আর ১৯৯৭ সালের পুরনো পেন্টিয়াম-টু প্রসেসর চালিত একটি কম্পিউটার। একবিংশ শতাব্দীর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই চালাতে এরকম যন্ত্রে কি আদৌ সম্ভব? কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখালেন একদল উদ্যমী প্রযুক্তিবিদ। তাঁরা দেখালেন, আধুনিক প্রযুক্তির ধারণা নতুন করে ভাবতে হবে।
এক সময় ধুলো জমে পড়ে থাকা, প্রায় ভুলে যাওয়া একটি কম্পিউটার—আজ সেটিই হয়ে উঠেছে এক চমকপ্রদ প্রযুক্তি পরীক্ষার কেন্দ্রবিন্দু। যেখানে অতীত আর ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির মধ্যে এক আশ্চর্য মেলবন্ধন ঘটেছে।
২৬ বছরের পুরনো কম্পিউটারে চালু হলো এআই!
এই রোমাঞ্চকর প্রকল্পে ব্যবহৃত হয়েছে ১৯৯৭ সালের একটি পুরনো ডেস্কটপ কম্পিউটার। পেন্টিয়াম-টু প্রসেসর ও মাত্র ১২৮ এমবি র্যাম দিয়ে চালানো হয়েছে একটি এআই মডেল। অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে উইন্ডোজ ৯৮। আর ফলাফল চমকপ্রদ।
সাধারণত এআই মানেই শক্তিশালী ডেটা সেন্টার, ক্লাউড কম্পিউটিং বা বিলিয়ন ডলার মূল্যের হার্ডওয়্যার। কিন্তু এই উদ্যোগ প্রমাণ করেছে—সঠিক পদ্ধতি ও সৃজনশীলতার সাহায্যে এমন প্রযুক্তিকে অনেক সস্তা এবং সাধারণ হার্ডওয়ারেও চালানো সম্ভব।
সাফল্যের পেছনের প্রযুক্তি রহস্য
এই সাফল্যের মূলে রয়েছে BitNet আর্কিটেকচার নামের এক অভিনব পদ্ধতি, যা এআই মডেলের পরিমাণ ও জটিলতা অনেক কমিয়ে আনে। এর মাধ্যমে জনপ্রিয় Llama মডেল-কে বিশেষভাবে সংকুচিত করে পুরনো কম্পিউটারে চালানো সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, পেন্টিয়াম-টু প্রসেসর এমন কাজের জন্য তৈরি হয়নি। তাই ডেভেলপাররা নানা রকম কৌশল নিতে বাধ্য হন—পুরনো PS/2 সংযোগ ব্যবস্থায় কী–বোর্ড, FTP-র মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান, এমনকি Borland C++ দিয়ে কোড লেখা—সবই করেছেন ৯০-এর দশকের পরিবেশে মানিয়ে নিতে।
চরম সীমাবদ্ধতা জয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়া
এই প্রকল্পে সীমাবদ্ধতা ছিল অসংখ্য—কম র্যাম, ধীরগতি প্রসেসর, প্রাচীন অপারেটিং সিস্টেম। একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি চালানোর জন্য যেটুকু প্রয়োজন, তার ধারে-কাছেও ছিল না এই যন্ত্র। তবুও ডেভেলপাররা উদ্ভাবনী সমাধান দিয়ে পারফরম্যান্স ধরে রেখেছেন।
বিশেষ করে যখন বর্তমান এআই মডেলগুলো গিগাবাইটের পর গিগাবাইট মেমোরি চায়, সেখানে মাত্র ১২৮ এমবিতে কাজ করানো ছিল নিঃসন্দেহে এক চমক।
এআই হবে ‘সবার প্রযুক্তি’
এই প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এআই প্রযুক্তিকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে আনা। যেখানে শক্তিশালী সার্ভার বা ব্যয়বহুল ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম নেই, সেখানেও যেন এআই ব্যবহার সম্ভব হয়—এই ছিল তাদের লক্ষ্য।
বিশ্বের যেসব দেশ বা প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে, তাদের জন্য এই উদ্ভাবন এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
ভবিষ্যতের পথে যাত্রা
এই প্রকল্প এখন আর থেমে নেই। উদ্যোক্তারা চাইছেন, এই পদ্ধতি ওপেন-সোর্স আকারে সবার জন্য উন্মুক্ত করতে। এমনকি আরও হালকা ও কার্যকর মডেল—যেমন ternary model (ত্রিমাত্রিক গাণিতিক প্রক্রিয়া) নিয়েও গবেষণা চলছে।
এআই প্রযুক্তিকে সহজ, সাশ্রয়ী এবং সর্বজনীন করে তোলাই তাঁদের মূল উদ্দেশ্য। আর সে পথে এমন পুরনো কম্পিউটারও হয়ে উঠছে ডিজিটাল যুগের এক নতুন নায়ক।
সূত্র: https://3dvf.com/en/this-ai-runs-on-a-1997-processor-with-only-128-mb-of-memory-and-the-results-are-astonishing/
রাকিব