ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

সম্ভব হলে খামেনিকে হত্যা করা হতো: ইসরায়েল কাৎজ

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ২৭ জুন ২০২৫

সম্ভব হলে খামেনিকে হত্যা করা হতো: ইসরায়েল কাৎজ

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করে বিস্ময় ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। দেশটির জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল-১৩, চ্যানেল-১২ এবং কান–এর সঙ্গে আলাপে তিনি জানান, ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের সামরিক সংঘাতে ইসরায়েলের টার্গেটে ছিলেন খামেনি।

 

কাৎজ বলেন, “যদি তিনি আমাদের দৃষ্টিসীমায় থাকতেন, আমরা তাকে সরিয়ে দিতাম। ইসরায়েল তাকে (খামেনিকে) খুঁজে পেতে বহু চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কার্যকর কোনো সামরিক সুযোগ তৈরি হয়নি।” তিনি আরও দাবি করেন, সংঘাতকালে খামেনি গোপন একটি গভীর বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং এমনকি তার সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এই বক্তব্য সামনে আসতেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরা এটিকে “ধৃষ্টতাপূর্ণ হুমকি” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, একটি স্বাধীন দেশের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যা করার পরিকল্পনার কথা এভাবে প্রকাশ্যে বলা কেবল একজন আগ্রাসনবাদী নেতার পক্ষেই সম্ভব। তবে অনেকেই মনে করছেন, পশ্চিমা সমর্থন থাকায় ইসরায়েলের এই মন্ত্রী বড় কোনো জবাবদিহিতার সম্মুখীন হবেন না।

সাক্ষাৎকারে কাৎজ স্পষ্ট জানান, এমন অভিযান চালানোর জন্য ইসরায়েলের যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তিনি বলেন, “আমাদের একটি প্রয়োগনীতি রয়েছে, যেটির মাধ্যমে আমরা ইরানের আকাশপথে আধিপত্য বজায় রাখি এবং প্রয়োজনে বিমান হামলা চালিয়ে ইরানকে তাদের পারমাণবিক বা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পুনরায় শুরুর চেষ্টা থেকে বিরত রাখি।”

 

 

তিনি স্বীকার করেন, ইরানে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব গোপন অবস্থান সম্পর্কে ইসরায়েল অবগত নয়। এমনকি ইরানে সাম্প্রতিক আগ্রাসন শুরুর সময় যুক্তরাষ্ট্র সেই অভিযানে যোগ দেবে কি না, সেটিও নিশ্চিত ছিল না বলে জানান কাৎজ।

প্রসঙ্গত, ইসরায়েল-ইরান সংঘাত চলাকালেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও খামেনির প্রাণনাশের হুমকি দেন। ১৭ জুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, “আমরা জানি তথাকথিত ‘সর্বোচ্চ নেতা’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি সহজ লক্ষ্য, তবে সেখানে নিরাপদে আছেন। আমরা এখনই তাকে সরিয়ে দিচ্ছি না, অন্তত আপাতত না।”

তবে কয়েকদিনের মধ্যেই ট্রাম্প তার অবস্থান পরিবর্তন করেন। তিনি বলেন, “(ইরানে) শাসন পরিবর্তন করা উপযুক্ত হবে না।” এমনকি যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরপরই তিনি তেহরানের প্রশংসা করে বলেন, “ইরান সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে।”

 

খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রকাশ্য বক্তব্য আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনের নজির হিসেবেই দেখছেন অনেকেই। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও তীব্র হতে পারে, এবং বিশ্ব রাজনীতিতে এক নতুন অনিশ্চয়তার সূচনা ঘটাতে পারে।

ছামিয়া

×