
ছবিঃ সংগৃহীত
আমরা প্রতিদিন সূর্য ওঠা, চাঁদ ডোবা, গ্রহ-নক্ষত্রের নিয়মিত চলাচল দেখে ধরে নিই—সব কিছু খুব স্থির, যেন এক নিখুঁত ছক। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, আসলে এই নিখুঁত ভাবনার পেছনে লুকিয়ে আছে এক অজানা শঙ্কা।
সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে—একটি নক্ষত্র যদি খুব কাছ দিয়ে সৌরজগতের পাশ দিয়ে চলে যায়, তবে তা আমাদের চেনা জগতটিকে একেবারে পাল্টে দিতে পারে। শুধু প্লুটোর কক্ষপথে অদ্ভুত মোড় আসবে তা-ই নয়, বুধ গ্রহ হয়তো ছিটকে গিয়ে পড়ে যাবে সূর্যে, অথবা পৃথিবী আর মঙ্গল এমনভাবে নিজেদের পথে ধাক্কা খাবে—যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
এই আশঙ্কাজনক তথ্য দিয়েছেন দুই মহাকাশ বিজ্ঞানী—ড. শন রেমন্ড (University of Bordeaux) ও ড. নাথান কেইব (Planetary Science Institute)। তাঁদের গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের সৌরজগতে শুধু ভেতরের বিশৃঙ্খল ব্যবস্থাই নয়, বাইরের থেকেও অনেক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে—বিশেষ করে যখন কোনও নক্ষত্র পাশ দিয়ে 'চলে যায়'।
তবে 'কাছ দিয়ে যাওয়া' বলতে বোঝানো হচ্ছে এমন একটি দূরত্ব, যা কয়েকটি সৌরজগতের আকারের সমান। মানে খুব কাছের নয়, তবে মহাজাগতিক মানদণ্ডে যথেষ্ট কাছাকাছি।
তাঁরা পাঁচ রকমের নক্ষত্র-পার্শ্বগমন বা ‘ফ্লাইবাই’ পরিস্থিতি নিয়ে ১,০০০ বার করে সিমুলেশন চালিয়েছেন। প্রতিবার সূর্যের সব গ্রহ (প্লুটোসহ) এবং কয়েক হাজার নক্ষত্রকে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে রেখে পরীক্ষা চালানো হয়।
ফলাফল? যেকোনো সময় এমন একটি নক্ষত্র পাশ দিয়ে চলে গিয়ে সৌরজগতের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। আর এটা ঘটার সম্ভাবনা শুধু ভেতরের বিশৃঙ্খলার চেয়ে ৫০% বেশি।
বিশেষ করে প্লুটোর ঝুঁকি এবার প্রথমবারের মতো ধরা পড়েছে—৫% সম্ভাবনা যে এটি কক্ষচ্যুত হয়ে পড়বে। আর বুধ গ্রহের ক্ষেত্রে সেই ঝুঁকি আগের চেয়ে ৫০-৮০ শতাংশ বেড়েছে। আর যদি বুধ কক্ষ হারায়, তখন সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহই একে অপরের পথে আসতে পারে, তৈরি হতে পারে এক বিশাল মহাজাগতিক বিপর্যয়।
তবুও একটা স্বস্তির কথা আছে—সামগ্রিকভাবে এই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, মাত্র ০.৬% আগামী কয়েক বিলিয়ন বছরে।
তবে বিজ্ঞানী রেমন্ডের ভাষায়, “আমরা যত ভাবি, সৌরজগতটা তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল এবং অনিশ্চয়তায় ভরা। ভেঙে পড়ার পথগুলোর সংখ্যা ভাবনার চেয়েও অনেক বেশি।”
এই পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে আমরা হয়তো নিজেদের নিরাপদ ভাবি, কিন্তু মহাকাশে চলা প্রতিটি পলায়মান নক্ষত্র, গ্রহের কাঁপা কাঁপা কক্ষপথ—সব মিলিয়ে একটি বিশাল অনিশ্চিত সমুদ্রের মধ্যে আমাদের এই ছোট্ট নীল গ্রহ। হয়তো আমরা টিকে থাকব, হয়তো একদিন হঠাৎই কোনো দূর তারকার ধাক্কায় সব বদলে যাবে।
মারিয়া