
ছবি: সংগৃহীত
নাসার ২০০১ মার্স ওডিসি (Mars Odyssey) মহাকাশযান মঙ্গল গ্রহের এক বিশালাকৃতির আগ্নেয়গিরির বিরল ছবি তুলেছে, যা পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু আগ্নেয়গিরির দ্বিগুণ উচ্চতায় পৌঁছেছে। ছবিটি মঙ্গলের ভোরবেলার উপরের বায়ুমণ্ডল থেকে তোলা হয়েছে, যেখানে সবুজাভ ধোঁয়াটে মেঘের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে ‘আর্শিয়া মনস’ (Arsia Mons) নামের আগ্নেয়গিরিটি।
হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম আগ্নেয়গিরি ‘মাউনা লোয়া’ (Mauna Loa) সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার উঁচু হলেও, মঙ্গলের এই আগ্নেয়গিরিটির উচ্চতা প্রায় ২০ কিলোমিটার—যা পৃথিবীর যেকোনো পর্বত বা আগ্নেয়গিরির তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। শুধু তাই নয়, ‘আর্শিয়া মনস’-এর চূড়ায় যে ক্যালডেরা (অগ্ন্যুৎপাতজনিত গর্ত) রয়েছে, সেটির প্রস্থ প্রায় ১২০ কিলোমিটার, যা অনেক পৃথিবীব্যাপী আগ্নেয়গিরির চেয়েও বড়।
এই দুর্দান্ত ছবি নেয়া হয়েছে ২ মে, থার্মাল ইমিশন ইমেজিং সিস্টেম (THEMIS) নামক যন্ত্রের মাধ্যমে। এই প্রথমবারের মতো এত পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ল গ্রহটির সবচেয়ে বৃহৎ আগ্নেয়গিরিটির রূপ। আর্শিয়া মনস মঙ্গলের থার্সিস অঞ্চলের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত এবং থার্সিসের তিনটি প্রধান আগ্নেয়গিরির মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি মেঘাচ্ছন্ন এলাকা হিসেবে পরিচিত।
এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জনাথন হিল বলেন, ‘আমরা আশাবাদী ছিলাম ভোরবেলায় মেঘের ফাঁক দিয়ে আগ্নেয়গিরির চূড়া দেখা যাবে—আর সেটিই ঘটেছে।’
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যখন মঙ্গল গ্রহ সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে, তখন ওই অঞ্চলে মেঘের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে। এই সময়টিকে ‘অ্যাফেলিয়ন’ (Aphelion) বলা হয়।
নাসা জানিয়েছে, মঙ্গলের মেঘ নিয়ে গবেষণা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মঙ্গল গ্রহের আবহাওয়া ও ধূলিঝড়ের মতো জটিল প্রাকৃতিক ঘটনার পেছনের কারণগুলো বুঝতে সহায়তা করে।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালে উৎক্ষেপণ করা ওডিসি এখন পর্যন্ত অন্য কোনো গ্রহের কক্ষপথে থাকা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মহাকাশ মিশন। এই ছবি তুলতে গিয়ে মহাকাশযানটি নিজের কক্ষপথে ৯০ ডিগ্রি ঘুরে যায়, যাতে এর মূলত ভূমি পর্যবেক্ষণের জন্য নির্মিত ক্যামেরাটি সঠিকভাবে আকাশপৃষ্ঠের ছবিটি ধারণ করতে পারে।
এই বিশেষ ক্যামেরার কৌণিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বিজ্ঞানীরা এখন মঙ্গলের ধূলিকণা ও বরফমেঘের স্তর একসঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন, ফলে তারা ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রহটির আবহাওয়ায় কী ধরনের পরিবর্তন আসে, তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছেন।
নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের গ্রহবিজ্ঞানী মাইকেল ডি. স্মিথ বলেন, ‘এই দিগন্তমুখী ছবিগুলোতে আমরা প্রকট ঋতুভিত্তিক পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি। এটি আমাদের নতুন করে বোঝাতে সহায়তা করছে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল কীভাবে ধাপে ধাপে রূপান্তরিত হয়।’
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব