
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরেই অক্সিজেনহীন পরিবেশে বেঁচে থাকা ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণা করছেন। এবার যুক্তরাষ্ট্রের রাইস ইউনিভার্সিটির গবেষকরা আবিষ্কার করলেন এমন এক ব্যাকটেরিয়া, যারা এক্সট্রাসেলুলার রেসপিরেশন বা বহির্কোষীয় শ্বসন নামের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। এ প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়েই ব্যাটারি বৈদ্যুতিক প্রবাহ তৈরি করে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, এই ব্যাকটেরিয়া খাবার হজম করে শক্তি উৎপাদনের সময় অক্সিজেনের পরিবর্তে ইলেকট্রন বাইরে ছাড়ে—ঠিক যেমন ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়াকে বলছেন ‘এক্সট্রাসেলুলার রেসপিরেশন’।
ব্যাকটেরিয়ার শরীরেই ক্ষুদ্র ‘বৈদ্যুতিক সার্কিট’
গবেষক বিকি বাবি কুণ্ডু, যিনি এই গবেষকদলের প্রধান, বলেন, ‘ন্যাফথোকুইনন নামের একটি যৌগ ইলেকট্রন বহন করে ব্যাকটেরিয়ার দেহ থেকে বাইরের পরিবেশে নিয়ে যায়, যার ফলে ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেন ছাড়াই শক্তি উৎপাদন করতে পারে।’
এই ব্যাকটেরিয়াগুলো বৈদ্যুতিক পরিবাহী কোনো বস্তুতে থাকলে তা থেকেও তারা বিদ্যুৎ ছাড়তে পারে। ফলে দেখা যায়, ব্যাকটেরিয়াগুলো ওই বস্তু দিয়েই কার্যত নিঃশ্বাস নিচ্ছে!
কোথায় কাজে লাগবে এই বিদ্যুৎ-ব্যাকটেরিয়া?
এই ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার হতে পারে:
- পানির বর্জ্য পরিশোধন (ওয়েস্টওয়াটার ট্রিটমেন্ট)
- জৈবিক উৎপাদন (বায়োম্যানুফ্যাকচারিং)
- পরিবেশ দূষণ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ
- চিকিৎসা পরীক্ষায় নতুন প্রযুক্তি
- মহাকাশ গবেষণায় অক্সিজেনবিহীন জৈব শক্তি উৎপাদন
গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ক্যারোলিন আজো-ফ্র্যাঙ্কলিন বলেন, ‘এই আবিষ্কার শুধু বিজ্ঞান নয়, প্রযুক্তিতেও এক নতুন দিগন্ত খুলে দিলো। আমরা এখন এমন প্রযুক্তি তৈরি করতে পারব, যেগুলো আরও স্মার্ট ও টেকসই হবে এবং যার কেন্দ্রে থাকবে জীববিজ্ঞান।’
এখনো পরীক্ষাগারে সীমাবদ্ধ থাকলেও এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে পরিবেশ রক্ষা পর্যন্ত বহু খাতে বিপ্লব ঘটাতে পারে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। জীবজগতে এমন নতুন ‘শ্বাসপ্রক্রিয়া’ সত্যিই রোমাঞ্চকর।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব