
সংগৃহীত
মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদইেে-উল-আজহা, যা কোরবানির ঈদে নামেও পরিচিত, প্রতিবছর হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখে পালিত হয়। এই দিনটিতে মুসলিমরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় নির্দিষ্ট বয়স ও মানসম্পন্ন পশু কোরবানি করে থাকেন।
যদিও এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য ইমান ও ত্যাগের প্রতীকী প্রকাশ, তবে ভৌগোলিক, আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোরবানির রীতিতে ভিন্নতা দেখা যায়।
সৌদি আরব সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কোরবানির সময় উট, দুম্বা, গরু এবং ছাগল কোরবানি দেওয়া হয়। হজের মূল কেন্দ্রস্থল সৌদি আরব হওয়ায় হজ পালনের অংশ হিসেবে সেখানে কোরবানির পশুর চাহিদা অনেক বেশি। ফলে হজ মৌসুমে পশুর দামও বেড়ে যায়। আরব আমিরাতে আমদানি করা গরু ও ছাগল বেশি ব্যবহৃত হলেও কিছু বিত্তবান পরিবার উট কোরবানি দেন।
পাকিস্তান প্রতি বছর প্রায় ছয় মিলিয়নের বেশি পশু কোরবানি হয়, যার মধ্যে ছাগল ও গরুর আধিক্য চোখে পড়ে। ছাগলের চাহিদা বেশি হলেও গরু ও ষাঁড়ের চাহিদাও প্রচুর। শীতপ্রধান অঞ্চলে দুম্বার চর্বিযুক্ত মাংস বেশি জনপ্রিয়।
ভারত ধর্মীয় বিধিনিষেধ ও আইনগত কড়াকড়ির কারণে গরু কোরবানিতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আসছে। মুসলমানরা সাধারণত ছাগল ও মহিষ কোরবানি দেন। মহিষ অপেক্ষাকৃত সস্তা হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে এটি বেশি প্রচলিত। গরু জবাই বৈধ কিছু রাজ্য থাকলেও অধিকাংশ অঞ্চলে তা নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বাংলাদেশে গরু সবচেয়ে জনপ্রিয় কোরবানির পশু হলেও ছাগল ও মহিষের কোরবানিও দেখা যায়। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর ১ কোটি ৩০ লাখ পশুর জোগান থাকলেও চাহিদা ১ কোটি ৭ লাখ। খামারিরা পশুর নামকরণেও সৃজনশীলতা দেখান ‘লালু’, ‘সম্রাট’, ‘নবাব’, এমনকি ‘শাকিব খান’ নামেও গরুর নামকরণ হয়।
ইন্দোনেশিয়া: সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ, সরল রীতি বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়ায় গরু ও ছাগল প্রধান কোরবানির পশু। উট বা ভেড়ার তেমন উপস্থিতি নেই। কিছু অঞ্চল সৌদি আরবের তারিখ অনুযায়ী হজ উদ্যাপন করে থাকে। মাংস বিতরণে আত্মীয় ও দরিদ্রদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
তুরস্ক: ঈদ-উল-আজহাকে ‘কুরবান বায়রামি’ বলা হয়। গরু, ছাগল ও ভেড়া কোরবানির জন্য ব্যবহৃত হয়। কসাইখানায় গিয়ে পশু জবাই করতে হয়। কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয়—নিজের জন্য, আত্মীয় ও বন্ধুদের জন্য এবং দরিদ্রদের জন্য। তুরস্কের বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আফ্রিকার মুসলিমদের জন্যও কোরবানির মাংস সরবরাহ করে।
নাইজেরিয়া: ভেড়ার আধিপত্য ও ‘দুর্বার’ উৎসব আফ্রিকার বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ নাইজেরিয়ায় কোরবানির পশু হিসেবে ভেড়ার জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে জামফারা ও বোর্নোর মতো উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যে গরু ও উটও ব্যবহৃত হয়। কোনো ও সোকোটোতে ‘দুর্বার’ নামে রাজকীয় শোভাযাত্রা হয়, যেখানে মানুষ ঘোড়ায় চড়ে কোরবানির আনন্দ উদ্যাপন করে।
ঈদ-উল-আজহা কেবল ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি বিশ্ব মুসলিম সমাজে ত্যাগ, সহমর্মিতা এবং মানবিকতার চর্চার একটি অনন্য নিদর্শন। দেশভেদে পশুর ভিন্নতা থাকলেও এর অন্তর্নিহিত মূল্যবোধ সর্বত্র এক ও অভিন্ন।
হ্যাপী