
ছবি : সংগৃহীত
ঐতিহাসিক কুরআন দিবস আজ। প্রতিবছর ১১ মে এটি পালিত হয়ে থাকে। ১৯৮৫ সাল থেকে ১১ মে বাংলাদেশের ইসলামী ছাত্রশিবির এই ঐতিহাসিক কুরআন দিবস পালন করে আসছে। কুরআনপ্রেমী মানুষের কুরআনের প্রতি ভালোবাসা স্থাপনের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।
১৯৮৫ সালের ১১ মে কুরআনের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঈদগাহ ময়দানে আয়োজিত সমাবেশে সংঘটিত হয় এক পৈশাচিক, নারকীয় হত্যাকাণ্ড। ১৯৮৫ সালের এই দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুলিশের গুলিতে আটজন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দিনটিকে স্মরণে রাখার জন্য সেই থেকে এই দিবস পালিত হয়ে আসছে।
ঘটনার সূত্রপাত ভারতে ১৯৮৫ সালের ১২ এপ্রিল। এদিন ভারতের দুইজন উগ্র সাম্প্রদায়িকতাবাদী নাগরিক পদ্মপল চোপড়া ও শীতল সিং কুরআনের সকল আরবি কপি ও অনুবাদ বাজেয়াপ্ত করার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে।
রিটে বলা হয়, কুরআনে এমন কিছু আয়াত আছে যেখানে কাফির ও মুশরিকদের হত্যা এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রেরণা দেওয়া হয়েছে। তারা কুরআনে উল্লেখিত সূরা বাকারার ১৯১ নম্বর আয়াত ও সূরা তওবার ৩১ নম্বর আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে মামলা দায়ের করেছিল। ভারতীয় সংবিধানের ২২৩ নম্বর ধারা, সিআরপিসি ১১৫(ক) ও ২৯৫(ক) উদ্ধৃতি দিয়ে তারা আল কুরআনকে ভারতীয় সংবিধানবিরোধী বলে উল্লেখ করে।
বিচারপতি মিসেস পদ্মা খাস্তগীর মামলা গ্রহণ করেন। তিনি ১২ই এপ্রিল এ বিষয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে এফিডেভিট প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় গোটা ভারতে মুসলমানদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
কুরআনকে বাজেয়াপ্ত করার মামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে কলকাতাসহ সারাবিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।
১০ মে জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে হাজার হাজার ইসলামী ছাত্র-জনতার মিছিল ও সমাবেশে মিলিত হলে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সারাদেশের মত চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঈদগাহ ময়দানে আয়োজন করা হয় এক প্রতিবাদ সমাবেশ।
১১ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঈদগাহ ময়দানে আয়োজিত সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। এদিন ইসলামী জনতা শুধুমাত্র দোয়া করার অনুমতি চাইলে তা না দিয়ে জনতার উপর গুলি বর্ষণ করে পুলিশ। এতে স্কুলছাত্র, কৃষক, রিকশাওয়ালা ও রেল শ্রমিকসহ গুলিবিদ্ধ হয়ে ৮ জন শাহাদাত বরণ করেন।
ঘটনার দিন বেলা ১১টার সময় সমাবেশের আহ্বায়ক মাওলানা হোসাইন আহমদকে এসপি অফিসে ডেকে সমাবেশ বন্ধ করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু ইসলামী জনতা দলে দলে আসতে থাকে ঈদগাহ ময়দানের দিকে। উপায় না দেখে ঈদগাহ ময়দানে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। শুধুমাত্র দোয়া করে জনতাকে শান্ত করে চলে যাব, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সেই আবেদনও শোনেনি ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লা।
এ সময় ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লা সেই সুযোগ দেওয়া হবে না বলে গালিগালাজ করতে থাকেন, "ব্যাটা মৌলবাদীদের দেখে নেবো" বলেও প্রকাশ্য হুমকি দেন। এ সময় ইসলামী জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়লে ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লার নির্দেশে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ শুরু করে পুলিশ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী পরদিন ১২ মে সকল বাধা উপেক্ষা করে কারফিউ ভেঙে জুমার নামাজের পর নৃশংস হত্যা ও বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে শোককে শক্তিতে পরিণত করতে রাজপথে নেমে আসে। এদিকে সারা বাংলাদেশে এমন নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানানো হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এমন ঘটনা সারা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৩ মে প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কুরআনপ্রেমিক মানুষ।
মুসলমানরা বিশ্বব্যাপী এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণের প্রতিবাদে ফেটে পড়লে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ মামলাটি খারিজের জন্য এটর্নি জেনারেলকে নির্দেশনা দেয়। ১৩ মে কলকাতা উচ্চ আদালতের বিচারপতি বি. সি. বসাকের এজলাসে স্থানান্তরিত হলে মামলাটি তিনি খারিজ করে দেন। তখন থেকেই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ১১ মে-কে ঐতিহাসিক কুরআন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। কুরআনপ্রেমী জনতার কুরআনের প্রতি ভালোবাসার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জাগরুক করে রাখতেই এই দিবস পালন করা হয়।
সা/ই