
ছবি : সংগৃহীত
ইসলামে দোয়া ও মোনাজাতের গুরুত্ব অনেক। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় মোনাজাতের ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন। মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ খুশি হন।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, “তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁর দয়া ও রহমত চাও। কেননা চাইলে তিনি খুশি হন।” (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৭১)
মুমিনের দোয়া পারমাণবিক অস্ত্রের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া মুমিনের হাতিয়ার, দ্বিনের স্তম্ভ এবং আসমান ও জমিনের নূর।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪৬৫; মুস্তাদরাকে হাকেম : ১/৪৯২)
কিন্তু সবার মোনাজাত সঠিক পদ্ধতিতে হয় না। এ জন্য সুন্নাহবর্ণিত পদ্ধতি জেনে নেওয়া জরুরি। এ বিষয়ে আবু ত্বোহা মুহাম্মদ আদনান বলেন, দোয়া করার সময় জায়গাগুলো বুঝে দোয়া করতে হবে, কখন কীভাবে দোয়া করলে দোয়াগুলো কবুল হয়। নিম্নে মোনাজাতের সঠিক পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো—
প্রথমত, মোনাজাতের শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করা (এক্ষেত্রে সূরা ফাতিহা পড়ে নিতে পারেন) এবং নবী করিম (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠ করা। দোয়া করার শুরুতে দরুদ পাঠ করবেন, দরুদ না পড়লে দোয়া আসমানে গিয়ে ঝুলে থাকে, উঠিয়ে নেওয়া হয় না যখন দরুদ পাঠ করা হয় তখন দোয়া উঠিয়ে নেওয়া হয়।
দ্বিতীয়ত, নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। সোলায়মান (আ:) তার যে বিখ্যাত দোয়ায় বলেছিলেন, হে আল্লাহ, আমাকে এমন মূলক আর রাজত্ব দান করুন, যে মূলক আর রাজত্ব আপনি কাউকে কখনও দেননি। এই দোয়ার শুরুতে তিনি বলেছিলেন, ‘রব্বিগফিরলী’ অর্থ আল্লাহ আমাকে মাফ করুন।
তৃতীয়ত, আল্লাহর কাছে দোয়ার বিষয়টি বিশ্বাস ও দৃঢ়তার সঙ্গে বারবার চাওয়া।
চতুর্থত, আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদের মাধ্যমে দোয়া শেষ করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ৯৮৩)
সর্বশেষ, মোনাজাতের পর দুই হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মুছে নেওয়া। আস-সাইব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) দোয়ার সময় তাঁর হাত ওপরে উত্তোলন করতেন এবং তার দ্বারা মুখমণ্ডল মাসাহ করতেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৯২)
দোয়া কবুলের শর্ত
১. পবিত্রতা অর্জন
দোয়া কবুলের শর্তগুলার মধ্যে আরেকটি হল পবত্রতা অর্জন করা। আমাদের শরীল ও পোশাক অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। আমারা সবাই জানি পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। তাই যখন আমরা আল্লার কাছে কোন দোয়া করব, খেয়াল রাখতে হবে যেনো আমাদের শরীল ও পোশাক পবিত্র থাকে।
২. হালাল খাদ্য ও উপার্জন
মহান আল্লাহ্ আল্কুরানে বলেছেন, তোমরা উত্তম খাবার ভক্ষণ করো এবং নেক আমল করো।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৫১)। এখানে স্পস্ট বলা হয়েছে আমলের পুর্বে হালাল খাবার খেতে। দোয়া কবুলের আশা করলে অবশ্যই হারাম খাবার পরিহার করতে হবে। তেমনি ভাবে আমাদের উপার্জন ও হালাল পথে হতে হবে। উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে তাঁর ইবাদত কবুল হয় না।
৩. ধৈর্য্য ধারণ করা
যদিও আমরা কথায় বলি ধৈর্য্য ফল মিষ্টি হয়। বাস্তব জীবনে আসলেই এটা সত্য। মহান আল্লাহ্ নিজে কুরআনে এ নিয়ে বলেছেন। তিনি বলেন , ‘ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানুছবিরু ওয়া ছাবিরু ওয়া রাবিতু; ওয়াত্তাকুল্লাহা লাআল্লাহুম তুফলিহুন’
অর্থ: হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকো। আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। ( সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ২০০)।
এ হতে আমরা বুঝতে পারি যে, ধৈর্য্য অনেক বড় গুণ। দোয়া কবুলের জন্য ধৈর্য্য ধারণ করা খুবই জরুরী।
দোয়া কবুলের সময় কখন কখন?
- রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া করলে সঙ্গে সঙ্গে কবুল করা হয়
- আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে
- শুক্রবার জুমার দিনে
- সেজদার মাঝের দোয়া
- ইফতারের সময়ের দোয়া
- কদরের রাতে
- আরাফাতের দিনে
- বৃষ্টির হওয়ার সময়ে
কোনটির কারণে দোয়া কবুল হবে না?
- হারাম খাওয়া
- ফরজ ইবাদত না করা
- আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করা
- দোয়া করার সময় অমনোযোগী থাকা
মহান আল্লাহ আমাদের জীবনের যাবতীয় দোয়া ও মোনাজাত কবুল করুন।
মো. মহিউদ্দিন