
আপনারা মনে করছেন অমুক দল ক্ষমতায় আসবে। সেই আশায় গুড়ে বালি। বাংলাদেশের নতুন ভোটাররা, প্রায় ৩৮ ভাগ ভোটাররা ধানের শীষ কি জানেন না। জিয়াউর রহমানের আদর্শ এদেশের মানুষ শুনতে চায় না। নতুন ভোটাররা শুনতে চায় না। জিয়াউর রহমানের আদর্শ মানে চাঁদাবাজি করা, খুন করা, অবৈধ দখল করা, অত্যাচার করা, অবিচার করা বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম (শায়খে চরমোনাই)।
শুক্রবার (২০ জুন) বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি এবং দেশ ও ইসলাম বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন রংপুর মহানগরের আয়োজনে গণসমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, ৫ আগস্টের পরে ছাত্রদল বিএনপির কাছে চাঁদা চেয়েছে, না দেওয়ায় হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যাদের কাছে নিজেদের দলের মানুষ নিরাপদ নয়, তাদের কাছে বাংলাদেশের কোন নাগরিক নিরাপদ থাকতে পারে না। যে দলকে তার অঙ্গ সংগঠনকে চাঁদা দিতে হয়, সেই দলের কাছে বাংলাদেশের কোন ব্যবসায়ী নিরাপদ থাকতে পারে না। সেই দলের কাছে বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা থাকতে পারে না। যে দল কাউন্সিল করতে পারে না, যে দল নিজেদের মধ্যে শিষ্টাচার, শৃঙ্খলা রাখতে পারে না, তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের কোন মুসল্লি শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে পারে না।
তিনি বলেন, যারা নিজেরাই ঘোষণা দিতে চায় নির্বাচনের তারিখ, তা না হলে আমরাই ঘোষণা করবো। যে দল নিজেই আইন হাতে তুলে নেয়, তাদের হাতে এদেশের আইন নিরাপদ থাকতে পারে না। যারা মেয়র হওয়ার আগেই নগরভবনে প্রবেশ করে, তাদের হাতে বাংলাদেশের মানুষের জান-মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা থাকতে পারে না। এদেরকে আর বাংলাদেশের মানুষ কোন অবস্থাতেই গ্রহণ করবে না।
গণসমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, গত ১৭ বছরে শুধু দেখেছি খুন আর খুন। আ. লীগের একটা পিওনের নাকি হাজার হাজার কোটি টাকা। যারা রক্ত দিয়ে এই বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিস্ট দূর করেছে আর যারা আহত হয়ে মেডিকেলের বিছানায় এখনো কাতরাচ্ছেন, যারা এই হামলা চালিয়েছে তাদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি। জুলাই-আগস্টের ইসলামী আন্দোলন প্রথম সারি থেকে আন্দোলন করেছে। বাংলাদেশের খুনিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা নির্বাচন চাই না। তারা বলেন, একদল ক্ষমতার প্রেমিক আর একদল দেশপ্রেমিক। যারা ক্ষমতার প্রেমিক তারা বিদেশে বাড়ি-গাড়ি কিনে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে। এবার সেটা করতে দেওয়া যাবে না। নৌকা আর ধানের শীষ দুই দাঁতের একেই বিষ।
বক্তারা আরও বলেন, যারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামন থেকে একটা ট্রাক সরাতে পারে না, আর তা নাকি বলে প্রসাব করলেই নাকি দেশটা ভাসি যাবে। পি-আর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হবে। জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে বক্তারা বলেন, জাতীয় পার্টি ভারতের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কথা বলে না। সবগুলো নির্বাচনে খুনি শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করছে জাতীয় পার্টি। ভোটের আগে সব সময়ে জাতীয় পার্টি ভারত যেতেন আর ভারতের কথায় তারা চলতেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন—ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, রংপুর বিভাগ অ্যাডভোকেট এম হাসিবুল ইসলাম, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সহ-সভাপতি মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রংপুর জেলা শাখার সভাপতি এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এ সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম (শায়খে চরমোনাই) রংপুরের ৬টি আসনের মধ্যে ৫টি আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তারা হলেন—রংপুর-১ আসনের এ.টি.এম গোলাম মোস্তফা বাবু, রংপুর-২ আসনের মাওলানা মোঃ আশরাফ আলী, রংপুর-৩ আসনের আমিরুজ্জামান পিয়াল, রংপুর-৪ আসনের জাহিদ হোসেন ও গোলজার হোসেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রংপুর মহানগর সভাপতি মাওলানা আব্দুর রহমান কাসেমীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আমিরুজ্জামান পিয়ালের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রংপুর জেলা সেক্রেটারি মাহমুদুর রহমান, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ রংপুর মহানগর সভাপতি মাওলানা নূর মোহাম্মদ জিহাদী, জেলার সভাপতি একরামুল হক, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ রংপুর মহানগর সভাপতি মাওলানা জয়নাল আবেদিন, জেলা সভাপতি তাহমিদুর রহমান রতন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ রংপুর মহানগর সভাপতি আবু রায়হান আল বিরুনী, জেলা সভাপতি আলিম আল আসিফসহ জেলা ও নগরীর অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
আফরোজা