
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট ২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন এম ইলিয়াস আলী।
প্রভাবশালী এই নেতা গুম হয় ২০১২ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন। জানা যায়, তাকে হত্যা করে মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে একটি ‘কিলিং স্কোয়াড’। হত্যার পর খুনিচক্র ইলিয়াস আলীর লাশ যমুনা নদীতে ফেলে দেয়। এই চাঞ্চল্যকর গুম ও হত্যার নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিতে র্যাব সদস্য সার্জেন্ট তাহেরুল ইসলাম ইলিয়াস আলীকে অপহরণের পর হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন।
ডিজিএফআইর তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ডেকে নিয়ে ইলিয়াস আলীকে গুম করার নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। অথচ পরবর্তী সময়ে ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে ডেকে এনে নানান কথাও বলেছিলেন তিনি।
পুরাতন শাড়ি পরে জড়িয়ে ধরেছিলেন ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও কন্যাকে। তখন ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে জানানো হয়েছিল, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে অপহরণ করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধের জের হিসেবে এটা করা হয়েছিল।
ছাত্র জনতার গণঅভুত্থ্যানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে ‘আয়নাঘর’ নামক বন্দিশালা থেকে গত ১৫ বছরে আটক অনেকেই ছাড়া পান। সেই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রটে ‘আয়নাঘরে’ পাওয়া গেছে বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীকে। পরে অবশ্য তার মৃত্যুর খবর জানা যায়।
১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিতে তাহেরুল বলেন, জিয়াউল আহসানের নির্দেশে ঘটনার রাতে শেরাটন হোটেল থেকে তিনি ইলিয়াস আলীকে অনুসরণ করেন।
ইলিয়াস আলীর গাড়ি বনানীর ২ নং সড়কের বাসার সামনে পৌঁছানোর আগেই বনানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনে থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয়। ইলিয়াস আলীর সঙ্গে তার ড্রাইভার আনসারকেও অপহরণ করা হয়েছিল। গাড়িটি জলখাবার হোটেলের সামনে দিয়ে বনানীর ২ নম্বর সড়কে ঢোকার পরে এই অপহরণের ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও গুম তদন্ত কমিশন সূত্রে আরও জানা গেছে, ইলিয়াস আলীকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত দুজন সেনাসদস্য বর্তমানে সেনাবাহিনীতে রয়েছেন। এরা হলেন— ওয়ারেন্ট অফিসার জিয়া ও ইমরুল।
খুনিচক্রের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর গুম তদন্ত কমিশন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত টিমের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী এ দুই সদস্যকে ক্লোজড এবং অন্তরীণ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইলিয়াস আলীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছিল। হত্যার পর তৎকালীন র্যাব কর্মকর্তা এবং পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীতে পদোন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেল হওয়া জিয়াউল আহসান অফিসে ফিরে স্বস্তি ও আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আজ বড় একটি অপারেশনে সাকসেসফুল হলাম। শেষ করে তাকে যমুনায় ফেলে দিয়ে এসেছি।’
শেখ হাসিনার নির্দেশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাকে গুম এবং অপহরণের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে গুম তদন্ত কমিশন।
শিলা ইসলাম