
রবিবার শেরেবাংলা নগরে সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের সমাধিতে দলের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দোয়া মোনাজাত করেন
সঠিক রাজনীতির মাধ্যমে দেশ পুনর্গঠনে বিএনপি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যত বাধাই আসুক, সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার বেলা ১১টায় সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শেরেবাংলা নগরে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের আর পেছনে ফিরে দেখার সময় নেই। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠাই বিএনপির লক্ষ্য। আমরা মুক্ত পরিবেশে নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিয়েছি।
বন্যার কারণে এবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি সীমিত করা হয়। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুসারে রবিবার সকাল ছয়টায় সকল দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
দীর্ঘ ১৮ বছর পর ভিন্ন এক পরিবেশে বিএনপির জন্মবার্ষিকী পালিত হয়। তাই শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানাতে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঢল নামে। সকাল ১০টা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা আসতে থাকে।
এ সময় তারা স্লোগান দেন ‘শুভ শুভ শুভ দিন, বিএনপির জন্মদিন’, ‘লও লও লও সালাম, জিয়া তুমি লও সালাম’, এক জিয়া লোকান্তরে লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে’, ‘আজকের এই দিনে, জিয়া তোমায় মনে পড়ে’, ‘খালেদা জিয়া এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সঙ্গে’, ‘তারেক রহমান এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সঙ্গে।’ রং-বেরঙের ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসা নেতাকর্মীদের মাথায় বাধা ছিল বিএনপির পতাকা সংবলিত ফিতা। বেলা ১১টায় নেতাকর্মীরা জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন।
এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, দলের কেন্দ্রীয় নেতা নাসির উদ্দিন অসীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, নাজিমউদ্দিন আলম, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শাম্মী আখতার, সেলিম রেজা হাবিব, কাজী আবুল বাশার, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম নিরব, সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতা তানভীর আহমেদ রবিন, কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।
জিয়ার মাজারে ফখরুল আরও বলেন, আজকে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন, বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে নিজে কাজ করছেন। সেই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আজকে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি, শপথ নিয়েছি। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠা করা, মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমরা কাজ করে যাব, এটাই আমাদের শপথ।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আজকে ২০২৪ সালে যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি তার জন্য বিএনপি দীর্ঘ ১৫ বছর সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে। এ সময়ে বিএনপির সবচেয়ে বেশি নেতাকর্র্মী গুম হয়েছে, দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশ নেওয়ার কারণে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আজকে আমরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটিকে মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে পালন করতে পারছি। আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপি সব সময় নেতৃত্ব দিয়েছে, আগামী দিনে সঠিক রাজনীতি এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সঠিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। এখন বিএনপির মূল কাজ হচ্ছে, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই আদর্শগুলোকে বাস্তবায়িত করা। খালেদা জিয়া যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তাকে প্রতিষ্ঠিত করা।
এদিকে রবিবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অনেক আঘাত এসেছে।
তবুও ফিনিক্স পাখির মতো জেগে আছে বিএনপি। বিএনপিকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে বারবার, কিন্তু ভেঙে ফেলা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, এখনো বিএনপির বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে দলের কৃতিত্ব নস্যাতের জন্য। এ পরিস্থিতিতে দলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
ফখরুল বলেন, পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর কঠিন মুহূর্তে দেশের হাল ধরেছিলেন জিয়াউর রহমান। ১৯ দফার ভিত্তিতে বিএনপি গঠন করেন তিনি। ৪৬ বছরে বিএনপির যে অর্জন তা বড় অর্জন। বিএনপি এখন দেশের সর্ববৃহৎ দল। বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন করেছে, মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন ছিল মুখ্য লক্ষ্য। গণতন্ত্র পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সেই আন্দোলন চলবে।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করছে। তা ঠিক করতে সংস্কার চলছে। বিএনপি বিশ্বাস করে সংস্কার করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে আমাদের আধুনিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন করতে শপথ নিতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপির আজ খুশির দিন, ৪৬ বছর পরেও বিএনপি সুসংগঠিত আছে।আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা পালিয়েছেন, সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন যে সুযোগ তৈরি হয়েছে সেটাকে নস্যাৎ করতে দেওয়া যাবে না, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।