ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

বিদেশে কীভাবে কাজ করে ইসরায়েলি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক?

প্রকাশিত: ১২:২৪, ১৬ জুন ২০২৫

বিদেশে কীভাবে কাজ করে ইসরায়েলি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক?

ছবিঃ সংগৃহীত

ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ও গোপন তৎপরতা বহুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বিভিন্ন সময় বিদেশি ভূখণ্ডে পরিচালিত গুপ্ত হামলা, শীর্ষ নেতৃত্বের লক্ষ্যবস্তু হওয়া এবং পরমাণু বিজ্ঞানীদের রহস্যজনক মৃত্যু—সবকিছুর পেছনে রয়েছে ইসরায়েলের অত্যাধুনিক ও সংগঠিত গোয়েন্দা বাহিনীর ছায়া।

সাম্প্রতিক একাধিক হামলা থেকে শুরু করে বহু বছর ধরেই লেবানন, সিরিয়া, ইরান ও গাজার ভেতরে ইসরায়েলের গোয়েন্দা কার্যক্রম চোখে পড়েছে। যেমন, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন হেজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহসহ সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব। একই বছর ইরানের রাজধানী তেহরানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ের নিহত হওয়ার পেছনেও ইসরায়েলের নাম উঠে আসে, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি তেল আবিব।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব অভিযানের সফলতার পেছনে রয়েছে ইসরায়েলের অত্যাধুনিক ও বহুস্তরীয় গোয়েন্দা কাঠামো।

মোসাদ
ইসরায়েলের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা। গঠিত হয় ১৯৪৯ সালে। এই সংস্থার মূল কাজ বিদেশে গুপ্তচর নিয়োগ, শত্রু রাষ্ট্রে বিশেষ অভিযান চালানো ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষা করা।

শিন বেট (শাবাক)
দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা এবং গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে আসা হুমকি প্রতিরোধে কাজ করে। শিন বেট নিজেকে ‘অদৃশ্য ঢাল’ হিসেবে উল্লেখ করে।

আমান
ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা শাখা। এর অধীনে রয়েছে কয়েকটি শক্তিশালী ইউনিট—

ইউনিট ৮২০০: ইলেকট্রনিক নজরদারি, সাইবার গোয়েন্দা, তথ্য বিশ্লেষণ ও সাইবার যুদ্ধের জন্য পরিচিত। এই ইউনিটই ২০১০ সালে ইরানের পরমাণু স্থাপনায় স্টাক্সনেট ভাইরাস হামলা চালায় বলে দাবি করা হয়।

ইউনিট ৯৯০০: স্যাটেলাইট, ড্রোন ও ভিডিও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বে। আধুনিক থ্রিডি মানচিত্র তৈরির মাধ্যমে সামরিক অভিযানে সহায়তা করে।

ইউনিট ৫০৪: হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স বা মানব গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে। বিদেশে গুপ্তচর নিয়োগ এবং মাঠপর্যায়ে কাজ করাই এই ইউনিটের মূল লক্ষ্য।

ব্রাঞ্চ ৫৪: ইরানকেন্দ্রিক গোয়েন্দা গবেষণা ও হামলার প্রস্তুতির জন্য গঠিত। ২০২৩ সালে গঠিত এই ইউনিট মূলত পাসদারান-ই-ইনকিলাব বা ইরানি বিপ্লবী গার্ডকে লক্ষ্য করে কাজ করছে।

প্রযুক্তিগত আধিপত্য
বিশ্বজুড়ে ইলেকট্রনিক ও সাইবার গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডে ইসরায়েল এখন শীর্ষস্থানীয়। ইউনিট ৮২০০-কে অনেকে মার্কিন NSA-এর সমতুল্য মনে করেন। এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, রেডিও, ফোন কল, ইন্টারনেট এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শত্রুর তথ্য বিশ্লেষণ করে।

গোপনীয়তা, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও সংঘবদ্ধ পরিচালনায় ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক আজও অনেক দেশ ও সংস্থার চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে। ইরানে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনাগুলোতে এসব ইউনিটের সমন্বিত পরিকল্পনা ও দক্ষতা নতুন করে বিশ্বকে ইঙ্গিত দিয়েছে—আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইসরায়েল তার গুপ্তচর বাহিনীকে কৌশলগত অস্ত্র হিসেবেই ব্যবহার করে চলেছে।

সূত্রঃ বিবিসি 

নোভা

×