ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এত শিশু ডুবছে কেন

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ১৩ জুন ২০২৫

এত শিশু ডুবছে কেন

কোরবানি ঈদের পর দুদিনে সারাদেশে অন্তত ৩০ শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে। বাস্তব পরিস্থিতি নিশ্চয়ই এর চেয়ে বেশি খারাপ। পানিতে ডুবে দেশে প্রতি বছর ১৪ হাজারেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়। বছরের যে সময়গুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে, সে সময়ে এমন মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যায়। এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মারা যায় এক থেকে চার বছর বয়সী শিশু। দ্বিতীয় ঝুঁকিপূর্ণ বয়স হলো পাঁচ থেকে নয় বছর। বাংলাদেশে এক থেকে ১৭ বছরের শিশুদের অপমৃত্যুর প্রধান কারণ পানিতে ডুবে মৃত্যু, যা নিউমোনিয়া, অপুষ্টি ও কলেরায় ভুগে মৃত্যুর চেয়েও বেশি। পানিতে ডুবে মৃত্যুকে ‘নীরব মহামারি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রতি বছর ২৫ জুলাই আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। বাংলাদেশের প্রস্তাবেই ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ’ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বলা হয়, পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি এবং জাতীয় পদক্ষেপকে উৎসাহিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশ শিশু মৃত্যুর হার কমাতে সক্ষম হয়েছে, এখন যদি পানিতে ডুবে মৃত্যুহার শূন্যের কোঠায় না আনা যায়, তাহলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের সাফল্য অর্থাৎ এসডিজি-৩ অর্জন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
দেশজুড়ে এখন দাবদাহ। গ্রামগঞ্জে শিশুরা এই সময় পুকুর হোক বা নদী, খাল-ঝিলে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণ জুড়াতে, দুরন্তপনা করতে পছন্দ করে। দেশে পানিতে ডুবে মারা যায় গড়ে প্রতিদিন ৩৮-৪০ জন। ধরা যাক, একটি ক্লাসে ৪০ জন শিক্ষার্থী পড়ে। প্রতিদিন এমন একেকটি ক্লাসরুম খালি হয়ে যাচ্ছে। কোনো স্কুলের দালান ধসে কাল যদি একটি শ্রেণিকক্ষের সব শিশু মারা যায় তাহলে দেশজুড়ে তার প্রতিক্রিয়াটা কী হবে? তোলপাড় শুরু হয়ে যাবে না? অথচ বছরের পর বছর পানিতে ডুবে প্রতিদিন বহু শিশু মারা যাচ্ছে। অধিকাংশ মৃত্যুরই থানায় কোনো রিপোর্ট হয় না, ফলে পত্রিকাতেও আসে না। 
অথচ এসব মৃত্যুর ৯৬ শতাংশ শুধু সাঁতার শিখিয়েই ঠেকানো সম্ভব। তারপরও কেন অতি প্রয়োজনীয় এই শিক্ষাটা সন্তানদের আমরা দিই না? পানিপ্রধান দেশ হওয়ার পরও আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাক্রমে এই পাঠ কেন বাধ্যতামূলক করা হয় না? সাঁতারও কি তবে বিদেশিদের এসে আমাদের শিখিয়ে দিয়ে যেতে হবে? সাঁতার শেখানোর জন্যও কি আমাদের বিদেশি সাহায্যে বেসরকারি সংস্থা গঠন করতে হবে!
আরেকটা জরুরি বিষয় প্রাথমিক চিকিৎসা। এই বিদ্যা না জানা থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে পানি থেকে উদ্ধার করার পরও অনেককে বাঁচানো যায় না। অথচ মাত্র দুদিনের প্রশিক্ষণে সাত বছরের একটি শিশুকেও এটা শেখানো সম্ভব। এগুলোও মানুষকে শেখাতে হবে। এবার আসন্ন আষাঢ়েও তাপপ্রবাহ থাকবে, এরপর শ্রাবণ-ভাদ্রে পড়বে তালপাকা গরম। এ সময়ে যথারীতি শিশু-কিশোরদের পছন্দের জায়গা হবে জলাশয়। তাই জরুরি ভিত্তিতে পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধ করতে হলে কালক্ষেপণ না করে এখন থেকেই সমন্বিত সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা চাই। 

প্যানেল

×