ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নববর্ষের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ৮ এপ্রিল ২০২৪

নববর্ষের প্রস্তুতি

সম্পাদকীয়

পবিত্র মাহে রমজানের শেষে সারাদেশে চলছে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনের ব্যাপক প্রস্তুতি। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন সাজ সাজ রবÑ ব্যাপক কেনাকাটা, যা চলে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। ঈদুল ফিতরের কেনাকাটার পাশাপাশি বাংলা নববর্ষের বিকিকিনিও থেমে নেই। বাঙালি মাত্রই উৎসবপ্রিয়। ঈদের দিনে তার যেমন চাই নতুন পোশাক বিশেষ করে পাঞ্জাবি-পায়জামা সেই সঙ্গে মানানসই জুতা বা স্যান্ডেল, অনুরূপ চাই বাংলা নববর্ষ পালনের জন্য বিশেষ পোশাক।

এক্ষেত্রে নারী বা শিশুরাও পিছিয়ে থাকবে কেন। স্বভাবতই বাংলা নববর্ষের পোশাক-পরিচ্ছদে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে ঐতিহ্যবাহী বাঙালির লোকসংস্কৃতি, লোকঐতিহ্য, লোকাচার ও আবহমান গ্রামবাংলার সংস্কৃতিÑ রূপ রস রং সৌন্দর্য ও লোকায়ত মোটিফকে। অন্তত এ সময়ের জন্য হলেও ফিরে আসে পুরনো আমলের রসনাতৃপ্তিকর বাঙালি খাবার-দাবারের ঐতিহ্য। যেসব পাওয়া যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে। এ সময়ে নানা স্থানে অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখী মেলা। ঈদুল ফিতরের ছুটি ও কেনাকাটার অবকাশে এসবেরও কোনো কমতি দেখা যায় না কোথাও। 

বাংলা নববর্ষ বৈশাখের আরও একটি অন্যতম অনুষঙ্গ হলো শুভ হালখাতা। হালখাতার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসাব-নিকাশ। অধুনা কম্পিউটারের আধিপত্যে হালখাতার গুরুত্ব কিছু কম মনে হলেও ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে পুরনো ঐতিহ্য মেনে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে শুভ হালখাতা উৎসব। তদনুযায়ী সারাদেশে অনেক পাইকারি দোকান ও গদিতে এবং স্বর্ণের দোকানগুলোতে চলছে ঝাড়ামোছা ও রং করার কাজ। নতুন লাল খেরোখাতার সূচনা ইত্যাদি। ইসলাম ধর্মানুসারীরা হালখাতার ওপরে বড় করে লিখে থাকেন- এলাহি ভরসা। আর হিন্দু ব্যবসায়ীরা লেখেন- ওঁ গণেশায় নমঃ। এ ধরনের স্বস্তিবচন লিখে বাঙালি যাত্রা শুরু করে আরও একটি নতুন বাংলা বছরের দিকেÑ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ থেকে বঙ্গাব্দ ১৪৩১-এর পথে। 
এর পাশাপাশি পয়লা বৈশাখকে বরণ করে নেওয়ার জন্য ঐতিহ্যবাহী ছায়ানটের অনুষ্ঠান, বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত মঙ্গল শোভাযাত্রা, গ্রামীণ মেলা, মিলন উৎসব- প্রায় সবকিছুর প্রস্তুতি চলছে মহাসমারোহে। এ সংক্রান্ত সব আয়োজন দেখা যায় ক্যাবল টিভি ও গণমাধ্যমে। নতুনের কেতন উড়িয়ে বৈশাখ দেবে নতুনেরে ডাক, খোলো খোলো দ্বার। বাংলার মাটি, বাংলার সবুজ-শ্যামল, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল- সবখানেই চির নতুনের আবাহন জেগে উঠবে ভোরের রাঙা সূর্যালোকে। বিদায় নেবে পুরনো বছর ১৪৩০। আসবে নতুন বছর ১৪৩১। পয়লা বৈশাখ বাঙালির প্রিয় দিন।

নববর্ষ হোক আনন্দের, উত্থানের। নতুন বর্ষে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হোক চিরতরে। বন্ধ হোক নাশকতা-সহিংসতা। স্বদেশ হোক কলুষমুক্ত। বৈশাখ বাঙালির জীবনে কী গ্রামে কী শহরে নিয়ে আসে নতুন সমারোহ। হালখাতার পাতা খুলে যেমন তার বাণিজ্যের পুণ্যাহ উৎসব, তেমনি সাধারণ জীবনযাত্রায়ও থাকে প্রবল একটা প্রাণচাঞ্চল্য- ধ্বনিত হয় ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ বৈশাখ মানে গ্রীষ্ম ঋতুর শুরু। উজ্জ্বল রৌদ্রময় দিন।

তেমনি আবার কালবৈশাখীর বজ্র-বিদ্যুৎসহ ভয়াল রূপও বটে। জীবন সংগ্রামের দীক্ষা লাভের নানা রূপের সংমিশ্রণ ঘটে নববর্ষের সূচনালগ্নে। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও বৈশাখের চেতনায় উজ্জীবিত হোক সবাই। নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয়ে সবাই হোক উদ্দীপ্ত।

×