ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সর্বজনীন পেনশনে এক লাখ মানুষ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

সর্বজনীন পেনশনে এক লাখ মানুষ

সর্বজনীন পেনশনে এক লাখ মানুষ

সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে সরকার। শুরুতে সর্বজনীন পেনশনে মানুষের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেলেও মাঝে নিবন্ধনে কিছুটা ধীরগতি আসে। তবে এপ্রিল মাসে এসে সর্বজনীন পেনশনে নিবন্ধন করে চাঁদা জমা দিয়েছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। এক মাসেই প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।

এতে সর্বজনীন পেনশনে নিবন্ধনের সংখ্যা ১ লাখের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। সোমবার সর্বজনীন পেনশনে নিবন্ধন সংখ্যা এক লাখ স্পর্শ করে। বিকেল ৫টার দিকে নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ১ হাজার ৩৩৮ জন। নিবন্ধন সম্পন্নকারীদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি দরিদ্র মানুষ, যাদের বার্ষিক আয় ৬০ হাজার টাকার কম। অপরদিকে সব থেকে কম নিবন্ধন করেছেন প্রবাসীরা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি জানিয়েছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন সম্পন্ন করা ১ লাখ ১ হাজার ৩৩৮ জন এরই মধ্যে ৫২ কোটি টাকার বেশি চাঁদা জমা দিয়েছেন। চাঁদা বাবদ জমা পড়া টাকা থেকে এরই মধ্যে প্রায় ৪২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ টাকায় বিনিয়োগ করা হয়েছে ট্রেজারি বন্ডে। গত বছরের ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন। এর পরপরই আবেদন শুরু হয়ে যায়।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর পর এরই মধ্যে ৮ মাস পার হয়েছে। আট মাস পরে এসে নিবন্ধন সম্পন্নকারীর সংখ্যা এক লাখ স্পর্শ করল। এদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে জমা পড়া চাঁদার টাকা বিনিয়োগের একটি নীতিমালা করার কথা থাকলেও এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। অবশ্য বিনিয়োগ নীতিমালা শীঘ্রই চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা।
প্রাথমিকভাবে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা এ চার স্কিম নিয়ে সরকার সর্বজনীন পেনশন চালু করে সরকার। পরবর্তীতে সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামে নতুন স্কিম চালু করার ঘোষণা দেওয়া হয়। আগামী ১ জুলাই থেকে এ স্কিম কার্যকর হবে।
বর্তমানে চালু থাকা চার স্কিমে চাঁদা পরিশোধকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৩৩৮ জন। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২ কোটি ৩৮ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা। নিবন্ধন সম্পন্ন করে সব থেকে বেশি চাঁদা জমা দিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা। তাদের জন্য চালু করা প্রগতি স্কিমে এরই মধ্যে চাঁদা জমা পড়েছে ২৪ কোটি ২০ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাক।

অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশনে এখনো পর্যন্ত যে চাঁদা জমা পড়েছে তার ৪৬ দশমিক ২০ শতাংশ জমা দিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা। এ স্কিমে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭৮৪ জন। অপরদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনকারীদের মধ্যে সব থেকে বেশি দরিদ্র মানুষ, যাদের বর্তমান আয় সীমা বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। এ শ্রেণির মানুষের জন্য চালু হয়েছে সমতা স্কিম। এ স্কিমে চাঁদা দিয়েছেন ৫৪ হাজার ৪৫৫ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৭ কোটি ২৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।

অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশনে নিবন্ধনকারীদের ৫৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ দরিদ্র মানুষ। এ স্কিমের মাসিক চাঁদার হার ১ হাজার টাকা। এর মধ্যে স্কিম গ্রহণকারী চাঁদা দেবেন ৫০০ টাকা এবং বাকি ৫০০ টাকা দেবে সরকার। চাঁদা দেওয়া এবং নিবন্ধন করা দুদিক থেকেই সবার নিচে রয়েছে প্রবাসীরা। বিদেশে অবস্থান করা প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য চালু করা হয়েছে প্রবাস স্কিম। এ স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা দিয়েছেন ৬৩৩ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৩ কোটি ৫ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ নিবন্ধনকারীদের মাত্র দশমিক ৬২ শতাংশ প্রবাসী। আর মোট জমা পড়া চাঁদার ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ এসেছে প্রবাসীদের কাছ থেকে।
চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন- অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন- কৃষক, রিক্সাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি পেশার ব্যক্তিরা। তাদের জন্য চালু করা হয়েছে সুরক্ষা স্কিম। এ স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৩১ হাজার ৪৬৬ জন।

×