.
রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্যালাইন দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে চার প্রসূতির মৃত্যু হলে নকল ও ভেজাল স্যালাইনের বিষয়টি সামনে আসে। সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পর তাদের স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল। এর পরেই তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান। অসুস্থ দুই নারী এখনো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের বিষয়টি রোগীর স্বজনদের সঙ্গে ম্যানেজ করার অভিযোগও উঠেছে। তদুপরি তারা এসব মৃত্যুর ঘটনা স্থানীয় সিভিল সার্জনসহ বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককেও জানায়নি, যা রীতিমতো অন্যায় ও নীতিবহির্ভূত। ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রসূতিকে দেওয়া স্যালাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ঢাকায়।
ইতোপূর্বে ফেব্রুয়ারি-মার্চে চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লার কয়েকটি হাসপাতালে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পর অন্তত ১৬ প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ এসেছে গণমাধ্যমে। মাতৃমৃত্যুর এসব ঘটনার তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। জনস্বাস্থ্যবিদ ও মাতৃস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে সন্তান জন্মদানে অস্ত্রোপচার একটি জীবনদায়ী ব্যবস্থা। তবে অস্ত্রোপচারের পর একই সঙ্গে এত মাতৃমৃত্যুর ঘটনা অস্বাভাবিক ও রহস্যজনক। সংশ্লিষ্টদের মতে চেতনানাশক, ব্যথানাশক ও শিরায় দেওয়া স্যালাইন- এই তিনটির কোনো একটিতে ত্রুটি, ভেজাল বা নকলের কারণে সাম্প্রতিককালে এত মাতৃমৃত্যু হতে পারে। তিনটি পৃথক ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে এর কারণ নির্ণয় করা দরকার। সরকার ইতোমধ্যে চেতনানাশক হ্যালোসেন বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এর পরিবর্তে আইসোফ্লুরেন বা সেভোফ্লুরেন ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এখন সংশ্লিষ্ট রোগীদের প্রদত্ত স্যালাইন ও ব্যথানাশক ওষুধগুলো বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জরুরিভিত্তিতে অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে তাদের মৃত্যুর কারণ জানা। তা না হলে রোগীর জীবনের সমূহ ঝুঁকি এড়ানো যাবে না কিছুতেই।
করোনা অতিমারির ক্রান্তিকালে প্রায় সবরকম ওষুধের চাহিদা ও দাম বেড়েছে। এই সুযোগে নকল ও ভেজাল ওষুধে সয়লাব হয়েছে বাজার-ওষুধের দোকান ও ফার্মেসিগুলো। নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরির কুচক্রটি মূলত দেশের সর্ববৃহৎ ওষুধের মার্কেট বলে পরিচিত মিটফোর্ডকেন্দ্রিক। নকল ও ভেজাল ওষুধ সেবনে অসুখ-বিসুখ তো সারেই না, উপরন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, লিভার, কিডনি, চোখ ও ত্বক। ইতোমধ্যে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে নকল ও ভেজাল ওষুধ প্রস্তুত এবং বাজারজাতকরণের অপরাধে ২৮টি কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করেছে। তারপরও দেখা যাচ্ছে যে, নকল ও ভেজাল ওষুধ তৈরির দৌরাত্ম্য কমেনি একটুও। সে অবস্থায় এসব কোম্পানির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের অনিবার্য দাবি।
বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে কয়েকটি খাত নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে ওষুধ শিল্প তার অন্যতম। বর্তমানে অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ উৎপাদন হয় দেশেই। বিশ্বের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ রপ্তানিও হচ্ছে। ওষুধ একটি স্পর্শকাতর বিষয়। মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্নটি এর সঙ্গে জড়িত ওতপ্রোতভাবে। পাশাপাশি খাদ্য ও পথ্যের বিষয়টিও প্রসঙ্গত উঠতে পারে। ভেজাল খাদ্য যেমন মানুষের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, অনুরূপ ভেজাল ও নকল-মানহীন ওষুধ বিপন্ন করে তুলতে পারে মানুষের জীবন। তাই ওষুধের মান ও দাম নিয়ে হেলাফেলা তথা শৈথিল্য প্রদর্শনের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। উন্নত বিশ্বে ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণ করা হয় কঠোরভাবে। ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ সময়ের দাবি।