ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কমাতে হবে আমদানিনির্ভরতা

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ২০:৫০, ২৮ জুলাই ২০২২

কমাতে হবে আমদানিনির্ভরতা

রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন

পৃথিবীর কোন দেশই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়কোন একক দেশের পক্ষে তার সব প্রয়োজনীয় দ্রব্য উপাদন করা সম্ভব নয়একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের প্রধান খাত আমদানিবাংলাদেশে ফল, খাদ্য দ্রব্য, যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে বেশিরভাগ পণ্য বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকেআপেল, আঙ্গুর, কলা, আম, কমলাসহ বিদেশী ফল, বিদেশী ফুল, বিদেশী আসবাবপত্র, সুগন্ধি, প্রসাধনী বা রূপসজ্জা পণ্যসহ অপরিশোধিত সরিষা তেল, পেঁয়াজ, চিনি, গাড়ি, গাড়ির সরঞ্জাম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য আমদানিকৃত পণ্য

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক প্রকাশিত বৈদেশিক বাণিজ্য পরিসংখ্যানশীর্ষক বার্ষিক প্রকাশনায় দেখা যায়, ২০২০-২১ সালে বাংলাদেশের মোট আমদানির মূল্য ছিল ৭৮২১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারউক্ত অর্থবছরে বাংলাদেশে আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিসহ যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম, পেট্রোলিয়াম পণ্য, কাঁচা তুলা, লোহা ও ইস্পাত, প্লাস্টিক সামগ্রী ইত্যাদি

অন্যদিকে, ২০২০-২১ সালে রফতানির মোট মূল্য ছিল ৪১০৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ২০১৯-২০ সালের তুলনায় ২৩.৭৭% বৃদ্ধি পেয়েছেতৈরি পোশাক, বিশেষ বোনা কাপড়, কাঁচা চামড়া, জুতা, তৈরি টেক্সটাইল সামগ্রী বাবদ রফতানি বেড়েছে

চট্টগ্রাম, মোংলাসহ ২৯টি কাস্টমস ও শুল্ক স্টেশনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭৮৭ কোটি ডলারতার আগের অর্থবছরের এসব স্টেশন দিয়ে পণ্য আমদানি ব্যয় ছিল ৬৫৫৫ কোটি ডলার

অর্থা এক বছরের ব্যবধানে পণ্য আমদানিতে ব্যয় ৩৩% বা ২২৩২ কোটি ডলার বাড়তি ব্যয় হয়েছেএসব শুল্ক স্টেশন দিয়ে ৯৮% পণ্য আমদানি হয়তবে আমদানির ব্যয় বাড়লেও পরিমাণের দিক থেকে সার্বিকভাবে আমদানি কমেছেরাজস্ব বোর্ডের প্রাথমিক হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৩ কোটি ৯৪ লাখ টন২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি ৫০ লাখঅর্থা পণ্য আমদানি ৫৬ লাখ টন বা ৩.৮৬% কমেছেপরিমাণ ও আমদানি ব্যয়ের তুলনা করে দেখা গেছে, কোন কোন পণ্যের আমদানি কমলেও ব্যয় বেড়েছে

আবার অনেক পণ্যের আমদানি যেমন বেড়েছে তেমনি পাল্লা দিয়ে ব্যয়ও বেড়েছেযেমন- সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকারের আমদানি কমলেও ব্যয় বেড়েছেএকই অবস্থা গম, সয়াবিন বীজ, অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রেওআবার পুরনো লোহার টুকরো, তুলা, এলপিজি, সার, পাম তেলের মতো পণ্যের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ব্যয়ও বেড়েছে

অন্যদিকে, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত রফতানি ও প্রবাসী আয়গত অর্থবছরে দেশে রফতানি আয় বাড়লেও প্রবাসী আয় কমেছেএই দুটি মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে গেছেফলে, ডলার নিয়ে অস্বস্তিকর অবস্থা চলছে২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানি আয় হয়েছে ৫২০৮ কোটি ডলারএকই সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশীরা বৈধপথে ২১০৩ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন

আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছেএর ফলে বাড়তি দামে পণ্য আমদানি করতে হচ্ছেএতে রিজার্ভে চাপ পড়ার পাশাপাশি ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নও করতে হচ্ছেকিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণ এবং ভবিষ্যতের যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষমতার জন্য দেশকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবেআমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে অনেক পণ্যের স্বনির্ভরতা আশা করা হচ্ছে

আমদানি ব্যয়ের চাপ কমাতে ও দেশীয় পণ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিদেশী ফল, বিদেশী ফুল, ফার্নিচার ও কসমেটিকস জাতীয় প্রায় ১৩৫টি পণ্যের ওপর আমদানি পর্যায়ে বাড়তি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বা রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) আরোপ করেছেএসব পণ্যের ওপর সর্বনি¤œ ৩% এবং সর্বোচ্চ ২০% হারে বাড়তি নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে

এমনকি সরকার বিলাস দ্রব্যের আমদানি সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছেজাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দেয়া তথ্যমতে, ফুল ও ফল চাষে বাংলাদেশ যথেষ্ট সমৃদ্ধ হয়েছেবাংলাদেশে মূলত বিভিন্ন ধরনের কমলা, আপেল, আঙুর, খেজুর, মাল্টা বেশি আমদানি হয়এর বাইরেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন নতুন ফল আমদানি হচ্ছেনিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে দেশীয় ফুল ও ফল চাষীরা ন্যায্য মূল্য পাবে এবং ফুল ও ফল চাষে উসাহিত হবেএতে করে দেশের প্রান্তিক চাষীরা লাভবান হবে এবং আমদানিনির্ভরতা কমবে

বর্তমানে দেশে উপাদিত ফার্নিচার ও কসমেটিকসে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের ফলে বিদেশী পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশীয় শিল্পের বিকাশ হবেএছাড়াও এ ধরনের পণ্যের অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিরুসাহিতকরণের মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এবং সরকারের রাজস্ব আহরণে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে

বাংলাদেশে প্রতিবছর ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টনচাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করতে হয়অথচ রাইস ব্র্যান অয়েল কিংবা সরিষার তেলের উপাদন বাড়াতে পারলে এ নির্ভরতা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভবসে লক্ষ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকারবাংলাদেশ ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে পরিশোধিত ভোজ্যতেল (সয়াবিন ও পাম) উপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট উপাদন ক্ষমতা ৫০ লাখ ৭৬ হাজার টনযার কাঁচামাল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর

অন্যদিকে, বিভিন্ন রাইস ব্র্যান অয়েলের বার্ষিক উপাদন ক্ষমতা প্রায় ৩ লাখ টনস্থানীয়ভাবে উপাদিত হয় প্রায় ২ লাখ টন সরিষার তেলসরিষা চাষ ও রাইস ব্র্যান ওয়েলের কাঁচামাল ধানের তুষ বা কুঁড়া এগুলো সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ উস থেকে আসেতবে দেশীয় হলেও এর উপাদন খরচ অনেক বেশিফলে, বাজারে এর দাম সয়াবিনের তুলনায় বেশিএ কারণে রাইস ব্র্যান অয়েল এখনও জনপ্রিয়তা পায়নিদাম বেশি হওয়ায় অনেক উপাদক প্রতিষ্ঠান তা রফতানির দিকে ঝুঁকছেতাই এই তেলের উপাদন বৃদ্ধিতে এবং উপাদন খরচ কমাতে সরকার উদ্যোগ নিতে পারে

রফতানিমুখী শিল্পায়নে প্রাধান্য : আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব উপাদনের মাধ্যমে চাহিদা মেটানো ও রফতানিযোগ্য পণ্য উপাদন এবং বিশ্বে নতুন নতুন বাজার তৈরির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা উচিতএছাড়া শুধু গার্মেন্টস পণ্য রফতানির ওপর নির্ভর না করে সম্ভাবনাময় আরও বড় বড় রফতানির খাত তৈরি করতে হবে

রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে রফতানিকে বহুমুখীকরণ করতে প্রয়োজনীয় শিল্প গড়ে তোলা এবং সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবেরফতানি ক্ষমতা বাড়ানো ও আমদানিনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে অধিক শিল্পায়ন এবং উপাদনের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারও সম্প্রসারিত হবে, কর্মসংস্থানও বাড়বেইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার শিল্পায়নের কাজ শুরু করেছে১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছেএভাবে অব্যাহত থাকলে দেশকে শিল্পনির্ভর দেশে পরিণত করা সম্ভব হবে

জাতীয় সক্ষমতা বিকাশে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ও গবেষণা বৃদ্ধি করতে হবেতার জন্য প্রয়োজনীয় জনসম্পদ তৈরি করা, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য রসদের প্রস্তুতি গ্রহণ এবং তহবিল বরাদ্দ করতে হবেতৈরি হওয়া জনসম্পদকে সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ কাজে লাগাবার ব্যবস্থা করতে হবেআশার কথা হলো, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম সংশোধন হচ্ছেবিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের দাম কমতে শুরু করেছেদাম কমার এই তালিকায় আছে সয়াবিন তেল, পাম তেল, সয়াবিন বীজ, গমের মতো ভোগ্যপণ্য

আবার শিল্পের কাঁচামাল তুলা, পুরোনো লোহার টুকরো ও সারের দাম কমেছেএটি একটি ইতিবাচক দিকতবে প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি পণ্যের দাম সেভাবে সংশোধন হয়নিজ্বালানি পণ্যের দাম ঘিরে সবটার দাম ওঠানামা করেতাই জ্বালানির দামে বড় ধরনের সংশোধন হলে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় যেতে পারবে বাংলাদেশবর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৪০ থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলার

আমাদের প্রতিমাসে আমদানি ব্যয় মেটাতে হয় ৭ বিলিয়ন ডলারসে হিসাবে ৬ মাসের আমদানি ব্যয় হাতে আছেএ বছর আমরা আমদানিতে ব্যয় করেছি প্রায় ৮৪ বিলিয়ন ডলারএর মধ্যে রফতানি করে আয় করেছি প্রায় ৫২ বিলিয়ন ডলারএর সঙ্গে যোগ হবে প্রবাসী রেমিটেন্সের প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারএর মানে হলো, ৮৪ বিলিয়ন ডলারের ব্যয়ের বিপরীতে আয় ৭২বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশ প্রায় ২২৯ প্রজাতির পণ্য আমদানি করে সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেআমদানি পণ্যের মধ্যে এক পঞ্চমাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীএর মধ্যে সর্বোচ্চ আমদানি হয় চীন থেকে, মোট আমদানির ২৬ শতাংশের বেশিতালিকায় এরপরেই রয়েছে ভারত, যেদেশটি থেকে মোট আমদানির প্রায় ১৫ শতাংশ আমদানি হয়

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জুলাই মাসে যে খাদ্য সামগ্রী আমদানি করা হয়েছে, তার শীর্ষ দশটি পণ্যের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে অপরিশোধিত চিনি, পাম তেল, সয়াবিন তেল, দুধ ও দুগ্ধজাতপণ্য, আদা, মরিচ, গম, চাল, মসুর ডাল এবং পেঁয়াজএছাড়া রসুন, চা, তেলবীজ এবং হলুদ রয়েছে শীর্ষ খাদ্যসামগ্রী আমদানির মধ্যেসরকারের দেশীয় চাহিদা অনুযায়ী বছরের উপাদন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় নাফলে, প্রতিবছর দেশে উপাদনের পরেও চালের মতো আবশ্যিক খাদ্যশস্যের একটি অংশ আমদানি করতে হয়

পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেলসহ বড় বড় প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছেএ সব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানিতে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছেএছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছেএসব কারণেই গত অর্থবছরে আমদানি খাতে খরচ প্রথম বারের মতো ৬৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল

এক দশক আগেও দেশে বিলিয়ন ডলার বা শতকোটি মার্কিন ডলার খরচ করে আনা আমদানি পণ্য ছিল তিনটিবছর ঘুরতেই এখন এই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন পণ্যতাতে গত অর্থবছর শেষে এই তালিকায় আমদানি পণ্যের সংখ্যা বেড়ে ১০টিতে উন্নীত হয়েছে

যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে আরও চার-পাঁচটিএই ১০ পণ্যের বেশির ভাগই শিল্পের কাঁচামালএক দশক আগে তালিকায় ছিল তুলা, ডিজেল ও পুরনো জাহাজএক দশকের ব্যবধানে এই তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছে সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল ক্লিংকার, ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ ও পুরনো জাহাজ, প্রাণিখাদ্য শিল্পের কাঁচামাল সয়াবিন বীজ, খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের কাঁচামাল গম ও অশোধিত পামতেলএ ছাড়া রয়েছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল

আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো, গত অর্থবছরে পুরোটা সময় ধরে বৈশ্বিক বাজারে পণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিতবে বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দার দিকে যাওয়ায় দেশে চাহিদা কমছেআবার অনেক পণ্যের উপাদনও বাড়ছেতাতে গত মে-জুন মাস থেকে বিশ্ববাজারে শিল্পের কাঁচামাল ও পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছেজাহাজ ভাড়াও কমেছেএতে ভবিষ্যতে আমদানি ব্যয় কিছুটা কমতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছেপণ্য আমদানি কমলেও গত অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়ে রেকর্ড হয়েছে

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রতিফলন হয়েছে আমদানি ব্যয়েবাংলাদেশের ইতিহাসে আমদানি ব্যয় কখনও এত বেশি হয়নিবাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই একমাসে পণ্য আমদানিতে এত বেশি অর্থ ব্যয় হয়নিকরোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাওয়া লেগেছে আমদানির পালেবাড়ছে ডলারের চাহিদাএতে বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভে পড়েছে টানবেড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম, কমছে টাকার মান

পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশ একটি বৃহ মার্কেট, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও খুবই কমযার কারণ হলো, আমাদের দেশের বৃহ জনগণবহুজাতিক কোম্পনিগুলো যাতে বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয় সে লক্ষ্যে সরকার নানা ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছে

এটিকে কাজে লাগিয়ে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিকল্পিতভাবে রফতানিমুখী শিল্পায়নের দিকে নিবিড় দৃষ্টি দিতে হবেআমদানিনির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব উপাদন বাড়াতে হবেতাহলেই বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে

লেখক : ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

×