ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাটখাতে এডিবির ঋণ

প্রকাশিত: ২০:৩০, ১৩ এপ্রিল ২০২১

পাটখাতে এডিবির ঋণ

সরকার উপর্যুুপরি লোকসানের মুখে রাষ্ট্রায়ত্ত পঁচিশটি পাটকল বন্ধ ঘোষণা এবং কর্মরত ২৪ হাজার ৮৮৬ জন শ্রমিককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অবসর দিলেও এক্ষেত্রে আবার আশার আলো দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় খাতের পাটকলগুলো সংস্কারের জন্য সরকার আবারও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে আপাতত পাঁচশ’ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে, যা দিতে সম্মত হয়েছে সংস্থাটি। এ নিয়ে বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকও হয়েছে এডিবির। সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নবপর্যায়ে পাটকলগুলো পুনরায় চালু হবে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ তথা পিপিইর ভিত্তিতে। এর জন্য বিজেএমসি প্রয়োজনীয় নীতিমালাও প্রস্তুত করছে। প্রস্তাবিত নীতিমালায় মিল ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার দায়িত্ব ব্যক্তিমালিকানায় দেয়া হলেও মিলের সব সম্পদ লিজ গ্রহীতার হাতে তুলে দেয়া হবে না। বরং মিলগুলো কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে ও হবে তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে সরকার। মিলগুলো লিজ দেয়ার জন্য দরপত্রও আহ্বান করা হবে কয়েকদিনের মধ্যে। সামনেই আসছে পাট মৌসুম। তার আগে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্নসহ পাটকলগুলো চালু হবে বলেই প্রত্যাশা। দেশে গত বছর পাট উৎপন্ন হয়েছে ৭২ লাখ ৮৬ হাজার বেল। আগের বছর ছিল ৭৪ লাখ বেল। চলতি বছর রফতানি হয়েছে ৪ লাখ বেল কাঁচাপাট। পাটকলগুলোতে ব্যবহৃত হয়েছে ৩০ লাখ বেল। গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার হয় প্রায় ৫ লাখ বেল। লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী ও কিছু পাটকল মালিকের হাতে রয়েছে ১০ লাখ ৯৪ হাজার ৮২৫ বেল। এ পর্যন্ত মোট ব্যবহারের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৯ লাখ ৯৪ হাজার ৮২৫ বেল। সেই হিসাবে দেশে এখনও প্রায় ২৩ লাখ বেল কাঁচাপাট মজুদ থাকার কথা। অথচ হাট-বাজারে পাট নেই। বৈধ-অবৈধ মজুদদারদের কাছে এগুলো আটকে আছে। যে কারণে বাজারে এখন প্রতি মণ কাঁচাপাট বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার ২০০ টাকায়। গত জুলাইয়ে যা ছিল দুই হাজার ২০০ টাকা। এ অবস্থায় পাটশিল্প সচল রাখতে মিল মালিকরা এবং গবেষণা সংস্থা সিপিডিও জরুরীভিত্তিতে বিনা শুল্কে কাঁচাপাট আমদানির জন্য সুপারিশ ও চিঠি দিয়েছে পাট ও শিল্প মন্ত্রণালয়কে। একে কি ভাগ্যের পরিহাস কিংবা নিষ্ঠুর রসিকতা বলা যায় না? উল্লেখ্য, লোকসানের অজুহাতে সরকারী পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে গেলেও বেসরকারী পাটকলের সংখ্যা ২৫৯টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। আগের বছর জুলাই-জানুয়ারিতে হয়েছে ৬ হাজার ৪৬০ কোটি টাকার পাটপণ্য। দেশে প্রতি বছর ৭ দশমিক ২৬ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকে ৭৫ লাখ বেল পাট। নানা সঙ্কটের মধ্য দিয়ে গেলেও দেশে বর্তমানে পাটচাষীর সংখ্যা ৪০ লাখ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চার কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল পাটচাষ, পাটশিল্প, পাট পণ্য রফতানি ইত্যাদির সঙ্গে। প্রতি বছর পাট মৌসুমে গড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পেয়ে উপকৃত হন কৃষক। কৃষকের কাছ থেকে বছরে অন্তত ১৩ লাখ বেল পাট এককভাবে কিনে থাকে সরকার তথা বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন বা বিজেএমসি। তবে কিছুদিন আগে ২ জুলাই সরকার অব্যাহত লোকসানের মুখে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। ফলে সমূহ বিপাকে পড়েছে পাট চাষী ও শ্রমিকরা। কৃষকবান্ধব সরকার পাট চাষীদের স্বার্থ রক্ষায় খুব দ্রুতই বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলো সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগে অথবা দীর্ঘমেয়াদী লিজিং প্রক্রিয়ায় চালু করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এটি একটি সুসংবাদ নিশ্চয়ই। অনেক বেসরকারী উদ্যোক্তা এ বিষয়ে আগ্রহও দেখিয়েছেন। এটি নতুন আশা ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে পাট চাষী ও পাট শিল্প সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের মধ্যে।
×